অস্ট্রেলিয়ার বোলাররাই সবচেয়ে বাজে
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের সমালোচনা চলছে সবখানে। সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানরা যেখানে পাঁচ শ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগাচ্ছে, সেখানে দুই শ করতেই ত্রাহি ত্রাহি দশা অস্ট্রেলিয়ার! মেলবোর্ন টেস্টে হেরে ভারতের সিরিজ রক্ষা করা নিশ্চিত করার পেছনে উসমান খাজা, শন মার্শ আর ট্রাভিস হেডদেরই তো দায়। প্যাট কামিন্স তো ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়ার কাছে এনেই দিয়েছিলেন। ফাস্ট বোলিংয়ের অসাধারণ এক প্রদর্শনীতে ম্যাচে রোমাঞ্চ ফিরিয়ে এনেছেন এই পেসার।
বিশ্লেষক থেকে ধারাভাষ্যকার, সবার কাছ থেকেই পূর্ণ নম্বর পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা। পেসারদের চেয়ে অফ স্পিনার নাথান লায়ন পাচ্ছেন আরও বেশি নম্বর। যত দোষ সব ব্যাটসম্যানদের। আসলেই কি তাই?
বছরের শুরুতেই দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যানকে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের সেরা পাঁচের দুজনকে হারানোর প্রভাব পড়তেই পারে দলে। বল টেম্পারিংয়ের কারণে বাদ পড়া আরেকজন, ক্যামেরন ব্যানক্রফটও কিন্তু দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানদের একজন। এমন তিন ব্যাটসম্যানকে হারানোটা যে কাটিয়ে উঠতে সমস্যা হবে অস্ট্রেলিয়ার, সেটা অনুমেয়ই ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের অজুহাত কী?
অজুহাত? এই না বলা হলো অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা পূর্ণ নম্বর পাচ্ছেন সবার কাছে? হ্যাঁ, ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা এতটাই চোখে লাগছে যে বোলাররা শুধু পাশ মার্কই পাননি, একেবারে এ প্লাস পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সত্য হলো ২০১৮ সালে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মাঝে সবচেয়ে বাজে বোলিং করেছে অস্ট্রেলিয়াই! একটি পাদটীকা অবশ্য যুক্ত করতে হচ্ছে, এ বছরই টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করা আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে হিসেবে ধরা হচ্ছে না। কারণ, অভিষেক টেস্টই তাদের একমাত্র টেস্ট ছিল এ বছর।
পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর বাকি দশ দলে বোলারদের মাঝে সবার নিচে আছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। টেস্টে বোলাররা কেমন করছেন এটা বোঝার মানদণ্ড দুটি, বোলিং গড় ও স্ট্রাইক রেট। দুটি মানদণ্ডেই হতাশাজনক পারফরম্যান্স অস্ট্রেলিয়ার। প্রতিপক্ষের এক একটি উইকেট পেতে ৬৭.১টি বল খরচ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার, রান দিতে হয়েছে ৩২.৭২টি। বোলিং গড়ে তাদের ধারে কাছে আছে শুধু জিম্বাবুয়ে। এ বছর মাত্র দুটি টেস্ট খেলা এ দল প্রতিপক্ষের (বাংলাদেশ) মাটিতেও উইকেট পেতে গড়ে ৩১.৮৭ রানের বেশি খরচ করেনি। বোলিং স্ট্রাইকরেটেও অস্ট্রেলিয়ার মতো খরচে কেউ নয়। তাদের তাসমান প্রতিবেশরাই শুধু ৬৩.৮টি বল খরচ করেছে। এ ছাড়া শুধু জিম্বাবুয়েরই উইকেট প্রতি ৬০ এর বেশি বল খরচ হয়েছে।
২০১৮ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (১৪) খেলা ভারত এদিক দিয়ে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। ৪৯.৭ স্ট্রাইক রেটে বছর জুড়ে ২৪.২০ গড়ে উইকেট পেয়েছেন ভারতীয় বোলাররা। কিন্তু সবার সেরা স্থানটা দক্ষিণ আফ্রিকার। শ্রীলঙ্কায় হতাশার এক সিরিজ কাটিয়েও বোলিং গড় ও স্ট্রাইক রেটে সবার নাগালের বাইরে দলটি। ২৩.০৩ গড়ে ১৮৬টি উইকেট পেয়েছেন প্রোটিয়া বোলাররা। এক একটি উইকেটের জন্য মাত্র ৪৫.২টি বল দরকার হয়েছে তাদের।
এদিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান মাঝামাঝি। বোলিং গড়ে (২৬.৬৫) পাঁচে থাকা বাংলাদেশ স্ট্রাইক রেটে (৫২.৯) আছে চতুর্থ স্থানে।
দল | ম্যাচ | উইকেট | গড় | স্ট্রাইকরেট |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ১০ | ১৮৬ | ২৩.০৩ | ৪৫.২ |
ভারত | ১৪ | ২৫৭ | ২৪.২০ | ৪৯.৭ |
পাকিস্তান | ৯ | ১৫৫ | ২৪.২৯ | ৫৪.২ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ৯ | ১৪৩ | ২৫.৮১ | ৪৬.৬ |
বাংলাদেশ | ৮ | ১৩৬ | ২৬.৬৫ | ৫২.৯ |
নিউজিল্যান্ড | ৭ | ১১৩ | ২৮.০৫ | ৬৩.৮ |
ইংল্যান্ড | ১৩ | ২১৩ | ২৮.৮৪ | ৫৬.৮ |
শ্রীলঙ্কা | ১২ | ১৯৭ | ৬০.৬৯ | ৫৬.৮ |
জিম্বাবুয়ে | ২ | ৩২ | ৩১.৮৭ | ৬১.৫ |
অস্ট্রেলিয়া | ১০ | ১৭২ | ৩২.৭২ | ৬৭.১ |