ধীরে ধীরে পূর্ণ পেশাদার হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষায় ২০০৭ সালে চালু করা হয়েছিল পেশাদার ফুটবল লিগ—বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। আর এটির যাত্রাপথে বাদ দেওয়া হয় জাতীয় লিগ এবং একসময়ের জমজমাট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের ব্যবস্থাপত্র মেনেই পেশাদার লিগের প্রবর্তন। সেই লিগ দশ বছরে পা রাখছে আজ। কিন্তু পেশাদারির উন্নতি হলো কতটা?
মোটা দাগে বললে কিছুই হয়নি। ক্লাবগুলো পেশাদার হওয়ার আশপাশ দিয়েই হাঁটেনি। অবকাঠামো উন্নয়নের নামগন্ধ নেই। একটা জিম পর্যন্ত বড় দলগুলো করেনি। মাঠবিহীন অবস্থাতেই রয়ে গেছে মোহামেডানের মতো দল। দু-একটা দল বিচ্ছিন্নভাবে ফিজিও-ট্রেনার নিয়োগ দিলেও ধারাবাহিকতা নেই। আবাহনী-মোহামেডানের মতো ক্লাবগুলোরও সমর্থক গোষ্ঠী হারিয়ে গেছে।
ক্লাবগুলোর বিপণন কর্মকর্তা নেই। মিডিয়া সেলও করেনি কেউ। বদল হয়নি মানসিকতায়ও। এখনো নানা অজুহাতে খেলা পেছানোর দাবি তোলে ক্লাব। যে কারণে এবার সাইফ গ্লোবাল ব্যাটারি প্রিমিয়ার লিগ শুরু হচ্ছে ৪৭ দিন পিছিয়ে। আরও বহুবার পেছানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই ভালো।
আজ লিগ শুরু হচ্ছে বটে, তবে সূচি এরই মধ্যে পাল্টে গেছে। বাফুফের তৈরি সূচিতে আজ প্রথম দিনে ঢাকা আবাহনী ও নবাগত সাইফ স্পোর্টিং এবং রাতে শেখ জামাল বনাম মোহামেডান ম্যাচ ছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই এল বদল, বলা হলো প্রথম দিনে শুধু আবাহনী-সাইফ (বিকেল ৪–৩০ মি.) ম্যাচটাই হবে। মাঠটাকে একটু ‘বিশ্রাম’ দিতেই একটি ম্যাচ কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাফুফে।
গত বছর সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস পাঁচ বছরের লিগের স্বত্ব কেনে বার্ষিক ৪ কোটি টাকায়। অথচ পরের বছরই স্বত্বমূল্য নামিয়ে আনল দেড় কোটি টাকায়। গতবার পাঁচটি ভেন্যুতে আগের জাতীয় লিগের আদলে জমজমাট খেলা হয়েছিল। কিন্তু এবার চট্টগ্রামে ১১টি ম্যাচ রেখে বাকি সব ম্যাচ আনা হয় ঢাকায়। ক্লাবগুলো এবার ঢাকার বাইরে যেতে রাজি নয়, এই কারণ দেখিয়ে লিগটাকে আবারও ঢাকায় বন্দী করা হলো। অবনতির সূত্র মেনেই যেন এগোয় প্রিমিয়ার লিগ।
এই প্রথম লিগ শুরু হচ্ছে অনেকটা নীরবে। লিগ আকর্ষণীয় করতে ক্লাব-বাফুফের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই। বছর বছর বদল হওয়ায় আজও নির্দিষ্ট কোনো ছক পেল না লিগ। দলের সংখ্যা অবশ্য গতবারের মতো ১২টিই আছে। নতুন এসেছে স্পনসর প্রতিষ্ঠানের দল সাইফ স্পোর্টিং। এই দলটি যোগ হওয়ায় লিগ লড়াইয়ে অন্তত ছয়টি দল থাকবে। শিরোপা প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য পাঁচ দল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী, রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ রাসেল, শেখ জামাল এবং এখনো এই লিগ জিততে না-পারা মোহামেডান।
সবকিছু নিয়েই হতাশ বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক। তাঁর সময়েই পেশাদার লিগ চালু হয়। আনোয়ারুল হক কাল পেছনে তাকিয়ে বলেন, ‘এএফসি চেয়েছিল শহরভিত্তিক দল নিয়ে এটি করতে। যাতে সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। ফুটবল বিকেন্দ্রীকরণ হয়। যেটা ক্রিকেটের বিপিএলে হচ্ছে। ভেন্যু বাড়ছে সেখানে। কিন্তু ফুটবলে তা হলো না। সেই ঢাকার দলই খেলছে এখানে। সমর্থকও তৈরি হয়নি। সত্যি বলতে, এএফসি এমন লিগ চায়নি।’ দলগুলোর অবকাঠামোর উন্নয়ন না হওয়ায় ব্যথিত আনোয়ারুল হক। এসব নিয়ে কেউ যেন ভাবেই না, ব্যতিক্রম দু-একটি দল।
লিগের অন্যতম দল আরামবাগ ক্রীড়াসংঘের কোচ মারুফুল হকের চোখে এএফসির কোনো ক্যাটাগরিতেই এই লিগটা নেই, ‘ওই মানে যেতে পারিনি আমরা। দামি দামি বিদেশি কোচ আর বিদেশি খেলোয়াড় এনে লাভ নেই, যদি লিগের মান না বাড়ে। ভালো লিগ হলে তবেই ভালো জাতীয় দল হবে।’
লিগে বিদেশি কোচ আছে ঢাকা আবাহনী, শেখ জামাল, মোহামেডান, ব্রাদার্স ও সাইফ স্পোর্টিংয়ে। কিন্তু শুকনো মৌসুম পার করে দিয়ে ক্লাব-বাফুফের ‘যৌথ উদ্যোগে’ লিগ টেনে আনা হয়েছে ভরা বর্ষায়। এভাবে লিগ আয়োজন করে শক্তিশালী জাতীয় দল যে হয় না, সেই প্রমাণ তো সম্প্রতি ফিলিস্তিনে ওর্ডের অনূর্ধ্ব-২৩ দলই দিয়ে এসেছে!
সংখ্যায় প্রিমিয়ার লিগ
১০
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের এটি দশম আসর। ২০০৭ সালের ২ মার্চ শুরু হয়েছিল প্রথম লিগ।
৫
প্রথম তিনবারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী সবচেয়ে বেশিবারের শিরোপাজয়ীও। তিনবার জিতেছে শেখ জামাল,
একবার শেখ রাসেল।
১২৫
সবচেয়ে বেশি ১২৫টি ম্যাচ জিতেছে আবাহনী। খেলেছে ১৯১টি ম্যাচ।
৮০
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে হেরেছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
৬২
সবচেয়ে বেশি ড্র করেছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন।
৩৫৫
সবচেয়ে বেশি গোলও আবাহনীর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১৫ মোহামেডানের, তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩০৫ শেখ রাসেলের।
২৪৪
সবচেয়ে বেশি গোল খেয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন।
২.০৭
ম্যাচপ্রতি গোলে সবার ওপরে শেখ জামাল।
শিরোপার স্বাদ না পাওয়া মোহামেডান প্রথম তিন আসরের রানার্সআপ। এরপর আর রানার্সআপও হতে পারেনি দলটি।
ঢাকা ছাড়াও লিগের ম্যাচ হয়েছে চট্টগ্রাম, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, টাঙ্গাইল, ফেনী, গোপালগঞ্জ ও নরসিংদীতে।
সব কটি লিগে খেলেছে শুধু আবাহনী, মোহামেডান, শেখ রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্রাদার্স।