ফুটবলের বাজারে মেসি–রোনালদোর দামের সাতকাহন
এই শতাব্দীর সেরা দুই ফুটবলার তাঁরা। দুই দশকের বেশি সময় ধরে সাফল্যের চূড়ায় যেমন চড়েছেন, দেখেছেন ব্যর্থতার তলানিও। কখনো চোখ ভিজেছে প্রাপ্তির আনন্দে, কখনো আবার সেই চোখ ভরে উঠেছে না পাওয়ার অশ্রুতে। যেহেতু লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পথচলাটা একই সময়ে ছিল, তাই একজনের সাফল্য প্রায়ই অন্যের কান্নার কারণ হয়েছে।
একইভাবে বাজারে একজনের দাম যখন চড়েছে, অন্যজনের দামও তখন খানিকটা নিচে নেমে গিয়েছে। তবে ক্যারিয়ারের শেষ পর্বে এসে যেন একবিন্দুতে মিলে যাচ্ছেন তাঁরা।
প্রতিটি গোল যেমন দুজনের অর্জনের খাতাকে ভারি করছে, তেমনি উল্টোরথে দামের দিক থেকে একইসঙ্গে নিচে নামছেন দুজন। সেই প্রমাণ এবার মিলেছে ট্রান্সফারমার্কেটের নতুন হালনাগাদ করা খেলোয়াড়দের দামের তালিকাতেও। যেখানে দেখা গেছে, মেসি ও রোনালদো দুজনেরই দাম কমেছে।
মেসি বর্তমানে খেলছেন মেজর লিগ সকারে (এমএলএস)। বয়স ৩৭ পেরোলেও বল পায়ে মেসি এখনো অনন্য। পূর্ণ ফিট মেসি মাঠে নামলেই প্রতিপক্ষের আতঙ্কের কারণ হচ্ছেন আগের মতো। কিন্তু বাজার মূল্যে একজন ফুটবলারকে মূল্যায়ন করা হয় তাঁর বয়স ও ফিটনেস বিবেচনায়। এই মুহূর্তে মেসি ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে অবস্থান করছেন।
মেসি হয়তো বড়জোর ২–৩ বছর খেলবেন।
সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ফিটনেসও আর আগের মতো নেই। কদিন পরপরই চোট হানা দিচ্ছে তাঁকে। আর লিগ মানের বিবেচনায়ও ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর চেয়ে পিছিয়ে আছে এমএলএস। এসব মিলিয়েই মেসির দাম এখন পড়তির দিকে। ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে মেসির বাজার দর এখন ২ কোটি ইউরো, যা কি না আগের চেয়ে ৫০ লাখ ইউরো কম।
ফিটনেসে মেসির চেয়ে বেশ এগিয়ে থাকলেও রোনালদোর বয়স বিবেচনায় এসেছে বেশি। তা ছাড়া ৩৯ পেরোনো রোনালদোও মেসির মতো কম শক্তিশালী লিগে (সৌদি প্রো লিগে) খেলেন। যার প্রভাব পড়েছে তাঁর বাজার দরে। আগের ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো থেকে কমে রোনালদোর দাম এখন ১ কোটি ২০ লাখ ইউরো। অর্থাৎ দামের দিক থেকে রোনালদো এখন মেসির চেয়ে ৮০ লাখ ইউরো পিছিয়ে আছেন।
মেসির বাজার দর এখন ২ কোটি ইউরো। আর রোনালদোর দাম ১ কোটি ২০ লাখ ইউরো।
নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতে রোনালদোর বাজার দর ছিল ২ কোটি ইউরো, আর মেসির ছিল ৩০ লাখ ইউরো। তবে সময়ের সঙ্গে পারফরম্যান্সের ওপর ভর করে দাম বাড়তে থাকে দুজনেরই। ২০০৭ সালে রোনালদোর দাম ওঠে ৪ কোটি ইউরো। ২০১১ সাল পর্যন্ত মেসির চেয়ে এগিয়েই ছিলেন রোনালদো। তবে ২০১২ সালে দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কারণে মেসির দাম এক লাফে পৌঁছে যায় ১২ কোটি ইউরোতে। দুই বছর ধরে দামে রোনালদোর চেয়ে ২ কোটি ইউরোর ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন মেসি।
তবে ২০১৪ সালে মেসিকে ছুঁয়ে ফেলেন রোনালদো। এখন পর্যন্ত রোনালদো সর্বোচ্চ বাজার দর সেই ১২ কোটি ইউরোই। ২০১৬–১৭ মৌসুমে আবার পড়ে যায় রোনালদোর দাম। তবে ২০১৮ সালে আবার বেড়ে আগের জায়গায় পৌঁছে যায়। ২০১৮ সালের পর থেকে মূলত দাম কমতে থাকে রোনালদোর। জুভেন্টাসে এক বছরে রোনালদোর দাম কমে ৪ কোটি ইউরো পর্যন্ত। কমতে থাকার সেই ধারবাবাহিকতায় তাঁর দাম এখন ১ কোটি ২০ লাখ ইউরো।
অন্যদিকে ২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মেসির দাম ১২ কোটিতেই স্থির থাকে। ২০১৮ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ইউরো। যা এখন পর্যন্ত মেসির সর্বোচ্চ দাম। কিন্তু রোনালদোর মতো মেসির দামও ২০১৮ সালের পর থেকে কমতে শুরু করে। যা এখন ২ কোটি ইউরোতে এসে ঠেকেছে।
ট্রান্সফারমার্কেট বলছে, রোনালদোর চেয়ে মেসির দামে এগিয়ে থাকার মূল কারণ হচ্ছে তাঁর বয়স। বয়সে রোনালদোর চেয়ে দুই বছরের ছোট হওয়ায় মূলত এগিয়ে রেখেছে মেসিকে। শতাব্দীর সেরা দুই ফুটবলার শেষ পর্যন্ত কত দামে ক্যারিয়ার শেষ করেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।