করোনা নিয়ে খেলেও সোনা জিতলেন ম্যাকগ্রা
ম্যাচ শেষের পর দুই দলের খেলোয়াড়েরা করমর্দন করছেন না, শুধু হাত উঁচিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন একে অন্যদের। করোনাভাইরাসের সময়ে এ দৃশ্য পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তবে সম্প্রতি আবার ‘স্বাভাবিক’ হচ্ছে সব। গতকাল বার্মিংহামের এজবাস্টনে মেয়েদের ক্রিকেটের সোনার পদকের ম্যাচ বা ফাইনালের পর ফিরে এল ওই দৃশ্য—অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের খেলোয়াড়েরা হাত মেলালেন না, শুধু হাত উঁচিয়ে একে অন্যকে অভিবাদন জানালেন।
এমন দৃশ্যের কারণ? অস্ট্রেলিয়া দলে যে খেলেছেন করোনাইভাইরাস আক্রান্ত হওয়া একজন ক্রিকেটার—তালিয়া ম্যাকগ্রা।
এজবাস্টনে হওয়া ম্যাচে টসই হয় প্রায় ১২ মিনিট দেরিতে। সে সময় নির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও একটু পর কমনওয়েলথ গেমস অস্ট্রেলিয়ার এক বিবৃতিতে ম্যাকগ্রার করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর জানা যায়। গতকাল ম্যাচের দিন সকালে তাঁর মৃদু উপসর্গ ছিল। তবে ফাইনালের দলে ঠিকই রাখা হয় তাঁকে। এ ব্যাপারে কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশন, আইসিসি, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় কমনওয়েলথ গেমস অস্ট্রেলিয়া। তবে ম্যাচের সময় ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা হবে বলেও জানানো হয়।
দলে থাকলেও ব্যাটিংয়ের সময় সতীর্থদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে বসে ছিলেন ম্যাকগ্রা। পরে ফিল্ডিংয়ের সময় গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যাচ নেওয়ার পরও সতীর্থদের সঙ্গে সেভাবে উদ্যাপনও করেননি। অবশ্য ফর্মে থাকলেও ফাইনালটা সাদামাটাই গেছে তাঁর—ব্যাটিংয়ে ২ রান করার পর বোলিংয়ে ২ ওভারে ২৪ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য।
আমাদের যদি কোভিড হয়ও, তাতে কিছু যায়–আসে না!বেথ মুনি, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটার
শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর ম্যাচটি ৯ রানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ জয়ের পর অবশ্য সতীর্থদের সঙ্গে ঠিকই উদ্যাপন করেছেন ম্যাকগ্রা। তবে কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট লুইস মার্টিনের কাছ থেকে পদক নেওয়ার সময় মাস্ক পরে ছিলেন তিনি। ম্যাকগ্রাকে নিয়ে উদ্যাপনের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া পেসার মেগান শুট বলেছেন, ‘আমাদের যদি কোভিড হয়ও, তাতে কিছু যায়–আসে না!’
আর উদ্বোধনী ব্যাটার বেথ মুনি বলেন, ‘এমন অভিজাত খেলায় আপনি করোনায় আক্রান্ত হলে প্রকাশ্যে তিরস্কার করা হবে, ব্যাপারটি লজ্জার। হয়তো এ ঘরে এখন ৯০ শতাংশের শরীরেই এ ভাইরাস আছে। কেউই পরীক্ষা করাচ্ছে না, কেউ কিছু করছে না। সে আমাদের সঙ্গে পুরোটা উদ্যাপন করতে পারেনি, ব্যাপারটি কেমন যেন। একই সঙ্গে আমার মনে হয়, তাকে খেলতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল। আমরা প্রটোকলের ব্যাপারে কথা বলেছি, পুরোটা সময়জুড়েই সবাইকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি, লোকে এতে বেশি হতাশ হবে না।’
এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের হাত ছিল না, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘আমার দিক থেকে ঠিক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। আমরা মাঠে নেমে শুধু খেলেছি, এতে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এসব সিদ্ধান্ত নিতে যাদের টাকা দেওয়া হয়, তারাই নিয়েছে। আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না তাতে।’
আর ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর বলেন, ‘তারা আমাদের টসের আগে ব্যাপারটি জানায়। এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কমনওয়েলথ গেমসকে সিদ্ধান্তটি নিতে হতো এবং আমাদের দিক থেকে কোনো আপত্তি ছিল না। কারণ, সে খুব বেশি অসুস্থ ছিল না। এ কারণেই আমরা খেলার সিদ্ধান্ত নিই। খেলোয়াড়সুলভ চেতনা দেখাতে হতো আমাদের। আমি খুশি যে আমরা তালিয়াকে খেলার বাইরে রাখিনি। (ফাইনাল) মিস করাটা তার জন্য খুবই কঠিন হতো।’
অবশ্য নিজ দেশে হলে ভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো ম্যাকগ্রাকে। সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় নিজ প্রদেশে থাকলে সাত দিনের আইসোলেশনে থাকতে হতো তাঁকে। করোনার সময়ে রাজ্যগুলোর মধ্যে বেশ কড়াকড়ি ছিল তাদের। টিকা নিতে অস্বীকৃত জানানো টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচকে অস্ট্রেলিয়া থেকেও ফিরিয়ে দিয়েছিল তারা।
তবে কমনওয়েলথ গেমসে করোনা পজিটিভ হলেও অংশ নেওয়া যাবে, এ নিয়ম অবশ্য বলা আগে থেকেই। মূলত যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ বেশ শিথিল করার কারণেই এমন পরিস্থিতি। তবে একেকজনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটা হয়েছে একেক রকম। অসুস্থতা কতখানি গুরুতর, কী পরিমাণে আক্রান্ত, তাদের খেলার ধরনের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে সেসব।
অস্ট্রেলিয়ার জ্যাভেলিন থ্রোয়ার কেলসি-লি বারবার গেমস চলার সময়ই পজিটিভ হন। খেলার অনুমতি পাওয়ার তিন দিনের মাথায় সোনা জেতেন তিনি। তবে ফাইনালে খেলা পূজা বস্ত্রকরসহ দুজন ভারতীয় ক্রিকেটারের পৌঁছাতে দেরি হয়েছিল পজিটিভ হওয়াতে। হকি খেলোয়াড় নভজোৎ কৌরকে অবশ্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আগেভাগেই, যদিও তার দলের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নভজোতের কোনো উপসর্গ ছিল না। অন্যদিকে ডিসকাস থ্রোয়ার অনীশ কুমার পিল্লাইকে পজিটিভ হওয়ার পরদিন ইভেন্টে অংশ নিতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। একজনের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতির পরিমাণ কতটুকু, তার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত।
আজ শেষ হচ্ছে বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস।