গত বছর দেড়েক গোলপোস্টে কখনো দাঁড়িয়েছেন সোহেল, কখনো মামুন, কখনো বা মোস্তাক। যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা!
এখনো লড়ে যাচ্ছেন বিপ্লব

বিপ্লব ভট্টাচার্য একটা বিরাট উপন্যাস লিখতে পারেন। যেটির নাম হতে পারে, ‘আমার গোলকিপিং জীবন’। এমন ‘ধৈর্যশীল’ গোলরক্ষক পৃথিবীতে কমই পাওয়া যাবে। বছরের পর বছর জাতীয় দলের বেঞ্চে কাটিয়েও এখনো তিনি ক্লান্তিহীন। এখনো জায়গা পেতে লড়ছেন। এবারের লড়াইটা নবীনদের সঙ্গে!
আমিনুলের সঙ্গে পারেননি। সেই ১৯৯৬ সালে আমিনুলের সঙ্গে একই সময় জাতীয় দলে বিপ্লবের প্রবেশ। ২০১১ পর্যন্ত আমিনুল-জমানায় বিপ্লব বেশির ভাগ সময় ছিলেন বেঞ্চে। ব্যাপারটা তখন নিয়মই হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আমিনুল এক নম্বর পছন্দ। বিপ্লব দ্বিতীয়।
বছর দুই আগে আমিনুল জাতীয় দল থেকে অবসর নিলে অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, এবার বুঝি বিপ্লবের দুয়ার খুলল। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছরে জাতীয় দলে সাকল্যে গোটা ত্রিশেক ম্যাচ খেলা এই গোলরক্ষক এবার পাবেন এক নম্বর জায়গাটা। কিন্তু তা তো পাননি, বরং ছিটকে গিয়েছিলেন দল থেকেই।
আমিনুল-উত্তর যুগে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই ছিলেন বিপ্লব এবং সেটিও অধিনায়ক হিসেবে। কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে বিপ্লবের আর জায়গা হয়নি একাদশে, লেবাননের বিপক্ষে মামুন খান এলেন দৃশ্যপটে। তবে মেসিডোনিয়ান কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কি ২০১১ দিল্লি সাফ ফুটবলে বিপ্লবকে নিলেন অধিনায়ক করেই। কিন্তু অধিনায়কের ঠাঁই হলো কিনা বেঞ্চে!
সেই বিপ্লব পরে দল থেকেই বাদ। ‘বয়স হয়ে গেছে’, ‘ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে’ ইত্যাদি যুক্তি দেখিয়ে স্থানীয় কোচরা তাঁকে বাতিলই করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সুপার কাপে বিপ্লবকে দেখে মনে ধরল লোডভিক ডি ক্রুইফের। দেড় বছর পর আবার ডাক পেয়ে বিপ্লব এখন পুনর্জন্মের অপেক্ষায়। মাঝের সময়টায় বাংলাদেশের গোলপোস্টে কখনো দাঁড়িয়েছেন সোহেল, কখনো মামুন, কখনো বা মোস্তাক। যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা!
গত মার্চে কাঠমান্ডুতে চ্যালেঞ্জ কাপে সোহেলের ওপর আস্থা রেখেছিলেন ডি ক্রুইফ। কিন্তু ঘরোয়া ফুটবলে সোহেলের সময়টা ভালো যায়নি এবার। তাই সাফের জন্য ২৬ জনে নেমে আসা জাতীয় দলের চার গোলরক্ষকের মধ্যে মামুন আর বিপ্লবের নামটাই সবার মুখে আগে আসছে। বাকি দুজন জিয়া ও সোহেল। ২৩ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াডে এঁদের মধ্য থেকেই কোনো একজনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
যে তিনজনই চূড়ান্ত দলে থাকুন, এক নম্বর কে—এই প্রশ্নটা নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি কৌতূহল। উত্তরটা ক্রুইফ নিশ্চয়ই জানেন। অন্যরা শুধু অনুমানই করতে পারেন। জাতীয় দলের গোলকিপিং কোচ মিলন মোল্লা যেমন বললেন, ‘কোচ এ নিয়ে কিছু বলেনি। তবে তিনি ডাচ স্টাইলে “বিল্ডআপ ফুটবল” খেলাতে চান এবং সেটির শুরু হবে গোলরক্ষক থেকেই। গোলরক্ষক সুইপার ব্যাকের কাজও করবে। এটা যে ভালো করবে, তাঁকেই একাদশে রাখবেন কোচ, এটা বোঝা যাচ্ছে।’
স্থানীয় কোচরা ‘এখন বিপ্লব, এরপর মামুন’—এই সুরেই কথা বলছেন। শেখ রাসেলের কোচ মারুফুল হক যেমন বললেন, ‘এই মৌসুমের নৈপুণ্য বিবেচনায় সাফের একাদশে আমি হয়তো বিপ্লবকে রাখব। তবে সাফের পর মামুনকেই লম্বা সময়ের জন্য গড়ে তোলা উচিত।’ মুক্তিযোদ্ধার কোচ শফিকুল ইসলামেরও কথা অনেকটা একই রকম, ‘এই মুহূর্তে বিপ্লবকে একাদশে রাখতে পারেন কোচ। মামুনও একাদশে খেলার যোগ্য। ওকে আগামী অনেক দিনের জন্য চিন্তা করা যায়।’
যাঁর ছায়ায় দীর্ঘদিন ঢাকা পড়ে ছিলেন বিপ্লব, সেই আমিনুল বলছেন, ‘সুপার কাপে মামুনের খেলায় আমি মুগ্ধ। বিপ্লবও ভালো খেলছে। জিয়াও ভালো। কোচ এই মুহূর্তে চাইলে বিপ্লবকে খেলাতে পারেন। কারণ অভিজ্ঞতায় সে এগিয়ে। তবে ভবিষ্যতের কথা বললে মামুনের কথাই বলব।’
১৯৯৯ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে বাংলাদেশের সোনা জয়ে বড় ভূমিকা ছিল বিপ্লবের। ‘সাফ’ শব্দটা তাই তাঁর অনুরণন তোলারই কথা। আশায় আছেন তিনি, ‘কোচের মন জয় করে সাফের একাদশে জায়গা করে নিতে চাই।’ ভবিষ্যতের একটা ছকও এঁকে ফেলেছেন মনে, ‘আর বছর দুয়েক জাতীয় দলে খেলে অবসর নিতে চাই।’
তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, একমাত্র সময়ই জানে তার উত্তর।