ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাট
বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অত্যধিক। তাই স্বল্প জায়গায় কীভাবে বেশি মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যায়, সেই চিন্তা থেকেই দেশে আবাসন ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়েছে। শুরু করেছিলেন ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম। তাঁর দেখানো পথ ধরেই ধীরে ধীরে অন্যরা আবাসন ব্যবসায় আসেন। বর্তমানে বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ২০০।
আজকের ঢাকা শহরে আধুনিক আবাসন গড়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছেন বেসরকারি আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা। আজকের যুগে জমি থাকলেও একজন মানুষের পক্ষে বাড়ি বানানো কষ্টসাধ্য কাজ। কারণ নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে নির্মাণকাজের খুঁটিনাটি কাজ সামলানোর জন্য যে সময় ও সুযোগ–সুবিধা দরকার, তা ব্যক্তির পক্ষে নেই। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো সেই কাজ ভালো করছে বলেই মানুষজন অল্প সময়ের ভেতরে বাড়ি কিনতে পারছেন। আবাসন প্রতিষ্ঠান বছরে গড়ে ১০–১২ হাজার ফ্ল্যাট ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেই হিসাবে গত চার দশকে লাখ লাখ ফ্ল্যাট ক্রেতাদের বুঝিয়ে দিয়েছে তারা। এটি নিঃসন্দেহ বিরাট কাজ।
সাফল্যের সঙ্গে কিছু ব্যর্থতাও থাকে। একসময় আবাসন খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে ক্রেতাদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণাও করেছে। সে জন্য অনেককেই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নিজের কষ্টের টাকায় কেনা ফ্ল্যাট বুঝে পেতে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়েছে। তবে আবাসন খাতে ক্রেতাদের আস্থা ফেরাতে রিহ্যাব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় বিগত পাঁচ–সাত বছরে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। সমস্যা সমাধানে রিহ্যাবের মেডিয়েশন সেল প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করেছে। কাজটি এখনো হচ্ছে। আগে একসময় যেখানে ১ হাজারের ওপরে অভিযোগ ছিল, সেটি এখন এক শর নিচে নেমে এসেছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন অভিযোগ আসা কমেছে। আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, মূলত ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণেই সমস্যা প্রকট হয়েছিল। তাই আমরা উভয় পক্ষকে একসঙ্গে বসানোর চেষ্টা করেছি। এতে করে প্রায় ৭০ শতাংশ সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে গেছে।
স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়া সম্ভব
ঢাকার মানুষ ঢাকায় থাকতে চায়। বাইরে যেতে চায় না। তা ছাড়া, কর্মসংস্থান ও শিক্ষার জন্য প্রতিদিনই ঢাকার দিকে মানুষ ধাবিত হচ্ছে। ফলে রাজধানীতে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দাম। গত ১৫ বছরে ঢাকার জমির দাম কমপক্ষে তিন–চার গুণ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দাম কিছুটা সংশোধন হলেও তা অনেক বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফ্ল্যাটের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ভবিষ্যতে জমির দামে লাগাম টানা না গেলে ফ্ল্যাটের দাম আকাশ ছুঁয়ে যাবে।
জমির আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। তবে সেই দাম কমানোর একটাই বুদ্ধি আছে। সেটি হচ্ছে—ঢাকার আশপাশের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় নজর দেওয়া। সেখানকার জমির দাম এখনো তুলনামূলক কম আছে। সেই জমিতে ফ্ল্যাট বানালে দামও কম হবে। প্রথমেই ঢাকার সঙ্গে আশপাশের এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মেট্রোরেল বা দ্রুতগতির ট্রেন ভালো সমাধান হতে পারে। এমন ব্যবস্থা হলে মানুষজন ২০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে ঢাকায় আসতে পারবেন। একই সময়ে আবার ফিরতে পারবেন। বিশ্বের যেকোনো জায়গার মানুষ চাকরি বা ব্যবসার জন্য বাসা থেকে আসা–যাওয়ায় ৪০ মিনিট ব্যয় করতে রাজি থাকে। এ ছাড়া পানি, পয়োনিষ্কাশন, স্কুল–কলেজ, হাসপাতাল, বিপণিবিতান ইত্যাদি নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান ঢাকার আশপাশের কিছু এলাকায় প্রকল্প করেছে। তবে অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণেই সেসব সফল হচ্ছে না। তবে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলেই মানুষ ঢাকার আশপাশের এলাকায় বসবাসে উদ্ধুদ্ধ হবে। তখন মানুষ ঢাকার ভেতরে এত টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনবে না।
সরকার যদি ঢাকার আশপাশের এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা করে দেয়, তাহলে বাকি কাজ আবাসন ব্যবসায়ীরা করতে পারবেন। সেই সক্ষমতা আমাদের উদ্যোক্তাদের আছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও নরসিংদীতে ফ্ল্যাট প্রকল্প করলে স্বাভাবিকভাবেই দাম কমে আসবে। তখন স্বল্প আয়ের মানুষ বাসা ভাড়ার টাকায় কিস্তি দিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবেন। আমার মনে হয়, দেশে বর্তমানে যেসব মেগা প্রকল্প হচ্ছে, সে রকম একটি প্রকল্প হলেই আবাসন সংকট নিরসনে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হতে পারে।
রাজধানী নিয়েও নতুন করে ভাবার সুযোগ আছে। ঢাকার যেসব ভবন আছে, তার মধ্যে গড়ে ৬০ শতাংশ দ্বিতলবিশিষ্ট বা দোতলা। তার মানে রাজধানীতে আমাদের এখনো সুযোগ আছে। এই দোতলা ভবনগুলোকে কীভাবে বহুতলবিশিষ্ট ভবন করতে পারি, সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার জমিগুলো একেবারেই ছোট ছোট। সেখানে জমিগুলো একীভূত করে বহুতল ভবন করি, তাহলে সেখানেও কিন্তু বসবাসযোগ্য কমিউনিটি তৈরি করতে পারব। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে, ঢাকার একটা ঐতিহ্য আছে। ঢাকার ঐতিহ্যকে নষ্ট করাটা ঠিক হবে না।
ফ্ল্যাটের দাম নাগালে আনার জন্য আরেকটি কাজ করা যেতে পারে। সেটি হলো—রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দ্বৈত চরিত্রে পরিবর্তন আনা দরকার। রাজউক আবাসন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হওয়ার পরও তারা আমাদের প্রতিযোগী। মানে তারা ব্যবসা করছে। এটি ঠিক না। সরকার ব্যবসা করবে না, এটিই কিন্তু হওয়ার কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই এই কথাটি বলেন, সরকারের কাজ ব্যবসা করা না। ব্যবসা করবে ব্যবসায়ীরা। আমি মনে করি, সরকারের উচিত জমির উন্নয়ন করে আবাসন কোম্পানিকে দিয়ে ফ্ল্যাট প্রকল্প করার জন্য হস্তান্তর করা হোক।
অল্প কয়েক বছর ধরে রাজউক ফ্ল্যাট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার আগে বেশ কিছু প্লট প্রকল্প করেছে তারা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জমির উন্নয়ন করে একেকজনকে প্লট দিয়ে রাতারাতি কোটিপতি করে দেওয়া হয়েছে। এটির কোনো যুক্তি নেই। আবার বর্তমানে রাজউক যে প্রক্রিয়ায় ফ্ল্যাট প্রকল্প করছে, তাতে জনগণ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। ন্যাশনাল হাউজিংয়ের ব্যাপারেও একই কথা বলব। উভয় সংস্থা যেসব ফ্ল্যাট যে দামে বিক্রি করছে, সেটি নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। অন্যদিকে ফ্ল্যাট প্রকল্পে তারা যেসব সুযোগ–সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সেগুলোও বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ রাজউকের উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্প। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পরও অনেক গ্রাহকই সেখানে উঠতে পারছেন না। পত্রপত্রিকায় দেখেছি, ফ্ল্যাট মালিকেরা কমিটি করেছেন। প্রতিশ্রুত সুযোগ–সুবিধা আদায়ের জন্য তাঁরা রাজউকের সঙ্গে দেনদরবার করছেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে সুফল মিলছে না। তাই মধ্য আয়ের মানুষের জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করতে সরকার বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারে। সেটি হচ্ছে—সরকার জমি অধিগ্রহণ করে সেই দামেই মানসম্পন্ন বেসরকারি আবাসন কোম্পানিকে দিয়ে ফ্ল্যাট প্রকল্প করতে পারে। তাহলে আমরা আবাসন ব্যবসায়ীরা জনগণকে স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাট দিতে পারব। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, দাম কত কম হবে? আমি প্রাথমিকভাবে বলব, স্বল্প দামে জমি পেলে আমরা ৩ হাজার টাকা বর্গফুট দামে ফ্ল্যাট দিতে পারব। তার মানে ৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ২৪ লাখ টাকায় দেওয়া সম্ভব। আরও পরিষ্কার করে কথাটি বলি। রাজউক পূর্বাচলে প্রতি কাঠা জমি ৩ লাখ টাকায় বরাদ্দ দিয়েছে। সেই দামে জমি পেলে একেকটি ফ্ল্যাটের দাম ৩ হাজার টাকা বর্গফুট হারে দিতে পারব।
দীর্ঘমেয়াদি গৃহঋণ ও নিবন্ধন ব্যয়
বিশ্বের কোনো দেশে আমাদের মতো এককালীন টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষ বাড়ির মালিক হয় না। সেটি সম্ভবও না। তারা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনে থাকে। আমাদের দেশে এক অঙ্কের সুদহারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে বাড়ি কেনার বিষয়টি প্রসার পায়নি। সে জন্য অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। আমরা রিহ্যাবের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন বলার পর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ও দু–একটি ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। তবে এভাবে দু–একটি সংস্থা এগিয়ে এলে হবে না। এখানে সরকারের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকতে হবে।
হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ও দু–একটি ব্যাংক মানুষের কাছ থেকে আমানত নিয়ে আমাদের গৃহঋণ দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা না করে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে না। আর ২৫–৩০ বছরের কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনার ব্যবস্থা হলে মানুষ ভাড়ার টাকায় বাড়ির মালিক হতে পারবেন। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, একটি তহবিলের ব্যবস্থা করবেন তিনি। একসময় কিন্তু এটি চালু ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, যেকোনো খাতের তুলনায় গৃহঋণের পরিশোধের হার সবচেয়ে বেশি। কারণ, মানুষ তার পরিবারের জন্য একটি ছাদ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না।
আবাসন খাতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়াতে হলে নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে আনা দরকার। ইতিমধ্যে সরকারের সঙ্গে অনেক দেনদরবার করে একটি পর্যায়ে পৌঁছেছি আমরা। নিবন্ধন ব্যয় কমানোর সঙ্গে তিনটি মন্ত্রণালয় জড়িত। তাদের মধ্যে একটি সমন্বয় সভা হওয়া দরকার। সেটির জন্য আমরা অপেক্ষায় আছি। আমাদের বিশ্বাস, শিগগিরই রেজিস্ট্রেশন খরচ এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমে আসবে। এটি কমলে নিবন্ধন করার প্রবণতা বাড়বে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেকেই ফ্ল্যাটের নিবন্ধন করেন না। এতে করে তাঁদের সম্পত্তি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়ে গেছে। সে জন্য আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝুঁকির মধ্যে আছে। কারণ, নিবন্ধন না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের নামেই সম্পত্তি থেকে যায়। কখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানকেই দোষারোপ করা হয়। অথচ সেই প্রতিষ্ঠান কিন্তু সম্পত্তির বৈধ মালিক না। তাই রিহ্যাবের পক্ষ থেকে আমরা মনে করি, নিবন্ধন ব্যয় কমানোর বিষয়ে শিগগিরই জোর পদক্ষেপ দরকার।
সবার জন্য আবাসন করতে হলে কয়েকটি ভাগে উদ্যোগ দরকার। উচ্চবিত্তের সক্ষমতা আছে, তারা তাদের বাসস্থান করে নেবে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকার মানুষের একটি বড় অংশ বাস করে বস্তিতে। তাদের জন্যও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে আমরা যতই অট্টালিকা নির্মাণ করি না কেন, তা ব্যর্থ হবে যদি না বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ করা যায়। ঢাকা শহরের বাসাবাড়ি থেকে প্রতিদিন যে বর্জ্য উৎপাদন হয়, সেটির যদি যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা না যায়, তাহলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে এ শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।
আলমগীর শামসুল আলামিন সভাপতি, বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাসমুল আলম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড