এখন জরুরি মান উন্নয়ন
উন্নয়নশীল বিশ্বের যেসব দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়, সেসব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে মিশ্র স্বাস্থ্যব্যবস্থা বা মিক্সড হেলথ সিস্টেম বলা হয়। বাংলাদেশও এমনই একটা দেশ, যেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মাধ্যমে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়; অন্যদিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওগুলো বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্যসেবা দানের জন্য ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজের (রেগুলেশন) ৪ নম্বর অর্ডিন্যান্সের অধীন লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
যদিও বেসরকারি খাত বললে প্রথমেই অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুরম্য অট্টালিকায় অবস্থিত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল হাসপাতালগুলোর অবয়ব, বেসরকারি খাতের সম্পূর্ণ বিপরীত একটা রূপও কিন্তু রয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকে প্রথমে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—১) অলাভজনক বেসরকারি খাত, যেমন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এনজিওগুলো ও ২) লাভজনক বেসরকারি খাত। লাভজনক বেসরকারি খাতকে আবার দুটি স্তরে ভাগ করা যায়—১) অবিধিবদ্ধ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, যেমন গ্রাম্য চিকিৎসক, ওষুধ বিক্রেতা, লোকচিকিৎসক (কবিরাজ, হেকিম ইত্যাদি) ও ২) বিধিবদ্ধ বা ফরমাল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী। বিধিবদ্ধ স্বাস্থ্যসেবা ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসকেরা তাঁদের চেম্বার থেকেও দিতে পারেন, আবার ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ইত্যাদিও এর মধ্যে পড়ে। আরও রয়েছে করপোরেট বাণিজ্যিক বৃহৎ বিলাসবহুল হাসপাতালগুলো, যেমন ইউনাইটেড, স্কয়ার, অ্যাপোলো ইত্যাদি। ম্যাকগিল িবশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক অ্যান ককক্রফটের ২০০৭ সালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের পুরো চিকিৎসাসেবার ৮৭ শতাংশই দিয়ে থাকে বেসরকারি খাত (অবিধিবদ্ধ ৬০ শতাংশ, বিধিবদ্ধ ও এনজিও ২৭ শতাংশ)। কাজেই দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি খাতের বিস্তার ও ব্যাপকতা একেবারে কম নয়; বরং আমাদের দৈনন্দিন চিকিৎসার প্রয়োজন এই খাতই মিটিয়ে থাকে।
অবিধিবদ্ধ বেসরকারি খাত বহু আগে থেকেই বাংলাদেশে সুবিস্তৃত ছিল। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের পর থেকেই বাংলাদেশে বিধিবদ্ধ বেসরকারি খাত উদ্বাহু গতিতে বিকশিত হতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কয়েকটি উপাত্ত থেকে বিষয়টি আরও ভালো বোঝা যাবে। ২০০০ সালে বাংলাদেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের (টোটাল হেলথ এক্সপেন্ডিচার) ৬৩ শতাংশ আসত বেসরকারি খাত থেকে, ২০১৬ সালে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ শতাংশ। বেসরকারি খাতের বিকাশের আরেকটা লক্ষণ হলো, এর ফলে মানুষের নিজ পকেট থেকে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণও বেড়ে যায়। কারণ হলো, সরকারি খাতের ব্যয় সরকারি উৎস অথবা বিদেশি অনুদান থেকে সংস্থান হলেও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় সেই অর্থ ব্যয় হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। ফলে বেড়ে যায় মানুষের নিজ পকেট থেকে দেওয়া অর্থের হার (আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার)। এই হার ২০০০ সালে ছিল ৬১ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ৭২ শতাংশ, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ।
এদিকে দেশীয় উৎস থেকে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয় সংকুলানের হার একই সময়ে ২৯ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশে। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাকাউন্টসের (১৯৯৭-২০১৫) উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ১৯৯৭ সালে সরকারি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় জিডিপির শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ ছিল, যা ২০১৫ সালে কমে হয়েছে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ, আর একই সময়ে বেসরকারি খাতে তা ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের (২০১৮) উপাত্ত থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৪ রেজিস্টার্ড হাসপাতাল শয্যার ৯০ হাজার ৫৮৭, তথা ৬৩ শতাংশই বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অবস্থিত।
স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বেসরকারি খাত ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই প্রবণতা আমরা সম্ভাবনা হিসেবে দেখব, নাকি সমস্যা হিসেবে। এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়; বরং অনেক নিয়ামকের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, এটা নির্ভর করছে দৃষ্টিকোণের ওপর। লাভজনক ও বাণিজ্যিক চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা অবশ্যই একটা সম্ভাবনাময় দিক। এমনকি ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তুরস্কের মতো অনেক দেশ মেডিকেল ট্যুরিজমকে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একটা মোক্ষম উৎস হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ সীমিত আয়ের স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশীদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে মনে হতে পারে এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এই বিচার আরও নির্ভর করে বেসরকারি খাত কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে, তার মান কেমন, সাশ্রয়ী কি না, ইক্যুইটি বা স্বাস্থ্য সমতা বিধানে সহায়ক কি না, তারা মানুষের সরলতার সুযোগ গ্রহণ করছে কি না, এমন বেশ কিছু চলকের ওপর।
এবার দেখা যাক, ওপরে বর্ণিত মানদণ্ডগুলোর ভিত্তিতে বাংলাদেশের বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের পরিস্থিতি কেমন। স্বাস্থ্যসেবা হতে পারে প্রাথমিক বা উচ্চতর। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত মূলত উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবাই দিয়ে থাকে, অথচ জনমানুষের চিকিৎসা–চাহিদার সিংহভাগই হলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, যা একচেটিয়াভাবে সরকারি খাত এবং কিছুটা এনজিওগুলো মিটিয়ে থাকে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বাণিজ্যিক লাভের মার্জিন কম বলেই হয়তো এই অনীহা; আর তাহলে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল উদ্দেশ্য যে সেবা দেওয়া নয়, বরং মুনাফা অর্জন—এমনটাই প্রতীয়মান হয়। এরপরই প্রশ্ন থেকে যায় সেবার মান নিয়ে।
এ বিষয়ে বেশ কিছু গবেষণায় পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইমেরিটাস সাদ আন্দালীব দেখিয়েছেন, সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতের চিকিৎসাসেবার মান সাধারণভাবে কিঞ্চিৎ উন্নত। চিকিৎসকদের সংবেদনশীলতা নিয়ে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা গবেষণায় এই নিবন্ধের লেখক উদ্ঘাটন করেছেন যে প্রকৃতপক্ষে এই দুই খাতের কোনোটিতেই সংবেদনশীল সেবার মান সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন ও অর্থনৈতিক সংবেদনশীলতার ডোমেইন দুটিতে বেসরকারি খাতের চিকিৎসকদের পারফরম্যান্স সরকারি চিকিৎসকদের থেকেও অপকৃষ্ট। আবার গ্রুয়েন ও তাঁর সহকর্মীদের ২০০২ সালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে দেখা যায়, চিকিৎসকদের ৮০ শতাংশই একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে কাজ করেন, যা সেবাপ্রার্থীদের চোখে তাঁদের বিশ্বস্ততাকে বহুলাংশে খর্ব করে।
সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে; সিজারিয়ান সেকশন একটা সংকটকালীন প্রক্রিয়া হলেও এর যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকটা এখন অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত। মাসট্রিখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পাদিত গবেষণায় ডক্টর অসীম রায় অ্যান্ড্রু দেখিয়েছেন, জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজারিয়ান সেকশন হয় প্রায় সাড়ে চার গুণ। বাংলাদেশ ম্যাটার্নাল মর্টালিটি সার্ভে (২০১৬) রিপোর্ট থেকেও দেখা যায়, বেসরকারি খাতে সংঘটিত ৮৩ শতাংশ প্রসবই সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে হচ্ছে, যেখানে সরকারি খাতে এর হার অনেক কম—মাত্র ৩৫ শতাংশ, এনজিও ক্লিনিকগুলোতে ৩৯ শতাংশ। খরচের দিকে তাকালে এর কারণটাও বুঝতে কষ্ট হয় না—সাধারণ প্রসবে যেখানে গড়ে খরচ পড়ে ২ হাজার ৪৭৯ টাকা, সেখানে সিজারিয়ান সেকশনে খরচ গড়ে ২১ হাজার ১৮৫ টাকা, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৮ গুণ বেশি খরচ। এটা বাণিজ্যিক লাভের জন্য মানুষের অর্থ ও জীবনকে জিম্মি করার শামিল।
বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বেসরকারি খাত শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিলেও জনগণের স্বাস্থ্য অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে এর ভূমিকা এখনো আশানুরূপ নয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত? বেসরকারি খাততে নিয়ন্ত্রণ করার যে পদ্ধতিগুলো আছে, সেগুলোকে মোটাদাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—১) কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল, ২) ইনসেনটিভ বা প্রণোদনা এবং ৩) সেলফ রেগুলেশন বা স্বনিয়ন্ত্রণ। বাংলাদেশের লাইসেন্স পদ্ধতি কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলের একটা উদাহরণ, যা অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও খুব একটা কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। কেবল প্রয়োগের দুর্বলতাই নয়, এ ক্ষেত্রে খোদ লাইসেন্সের আওতাভুক্ত আবশ্যিক শর্তগুলোকেও ত্রুটিপূর্ণ বলে অনেকে মত দিয়েছেন।
লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান যে নথিপত্র দাখিল করে, তার ভিত্তিতেই লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন করা হয়; ইনপুট, প্রসেস, আউটপুট নিরীক্ষা করার কোনো বিধান বা পদ্ধতি এখানে নেই। ফলে সেবার মান আশানুরূপ না হলে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের তেমন কিছুই করার থাকে না। একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর করণীয়, বর্জনীয়, দিনে সর্বোচ্চ কতজন রোগী দেখতে পারবেন, দর্শনীর মাত্রা, বিভিন্ন সেবার নির্ধারিত মূল্য—এমন অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রকদের আওতাবহির্ভূত। কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল পদ্ধতির ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলো হলো সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতার অভাব, বেসরকারি খাতের বিশাল কলেবর, অর্থনৈতিক সংগতিহীনতা এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অশুভ মৈত্রী। আমাদের দেশে যদিও কেবল সরকারি সংস্থাগুলোকেই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় দেখা যায়, বেসরকারি খাত নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য অনেক দেশে সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংগঠন এবং ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখা যায়।
কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে প্রণোদনা এবং স্বনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখা যেতে পারে তা কাজ করে কি না। প্রণোদনা হতে পারে অর্থনৈতিক অথবা অন্য কিছু, যা সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারি সেবার প্রসার ঘটানো, বিশেষ কোনো সেবা প্রদানে উৎসাহিত করা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত হতে পারে। প্রণোদনার মধ্যে পড়ে মূলধন, ঋণ, কর রেয়াত, ভর্তুকি, পুরস্কার, প্রশিক্ষণ, প্রাতিষ্ঠানিক জোটবদ্ধতার সুযোগ ইত্যাদি। এদিকে স্বনিয়ন্ত্রণের জন্য পেশাজীবী সংগঠনগুলো বিভিন্ন দেশে ভূমিকা রাখে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ন্ত্রকের মতো না হয়ে বরং ট্রেড ইউনিয়নের মতো। তারা নিজ পেশার মানুষদের সুবিধা ও দাবিদাওয়া আদায়ে যতটা নিয়োজিত, সেবার মানোন্নয়ন ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণে ঠিক ততটাই নিশ্চুপ। তাই পেশাজীবী সংগঠনের বদলে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে হয়তো অধিকতর বাস্তবসম্মত হবে। এ জন্য বিশেষ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলও গঠন করা যেতে পারে, যারা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান যাচাই করে তাদের মানের ভিত্তিতে বিন্যস্ত করবে ও ভোক্তাকে এর বিভিন্ন সেবার মান সম্পর্কে ধারণা দেবে। এর বাইরেও বেসরকারি খাত নিয়ন্ত্রণের নানা প্রক্রিয়া রয়েছে, যা এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়।
মনে রাখা দরকার, সময়ের প্রয়োজনেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে এবং শিগগিরই তারা এখান থেকে চলেও যাচ্ছে না। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের ভূমিকা নিয়ে বিখ্যাত গবেষণা জার্নাল ল্যানসেট একটা সিরিজ প্রকাশ করে, যেখানে তারা উপসংহার টানে এই বলে যে সরকারের জন্য সর্বোত্তম উপায় হলো বেসরকারি খাতের জন্য এমন প্রণোদনা খুঁজে বের করা, যা তাদের আচরণ পরিবর্তন, সেবার মান বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক লাভের চেয়ে স্বাস্থ্য সমতাকে গুরুত্ব দিতে উৎসাহিত করবে। আমাদের দেশে কোনো অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলেই বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অভিযান চালানো হয়। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান না চালিয়ে বরং গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিশেষ করে বেসরকারি খাতের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আমূল সংস্কার, নীতি প্রণয়ন, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও সেই অনুযায়ী সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। সর্বোপরি যে জিনিসটা প্রয়োজন, তা হলো সরকারি খাতেও সেবার মান বাড়ানো, যাতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর বেসরকারি সেবার শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজনীয়তাই দেখা না দেয়।
ড. তৌফিক জোয়ার্দার: (জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ)