২০১৪: বিদায়ের মিছিল
সদ্য বিগত ২০১৪ সালকে নক্ষত্র পতনের বছর বললে বোধ করি অত্যুক্তি হবে না। বছরটিতে আমরা এমন অনেক মানুষকে হারিয়েছি, যাঁরা জাতির গৌরবময় ঐতিহাসিক অর্জনগুলোতে অনন্য অবদান রেখেছেন, যাঁরা নক্ষত্রসম ব্যক্তিত্বের বিভায় আলোকিত করে রেখেছিলেন আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন অঙ্গন
জীবন-মৃত্যু প্রাণচক্রের অনিবার্য সত্য। গত একটি বছরে অনেকেই চলে গেছেন পৃথিবীর মায়া-মমতার বন্ধন ছিন্ন করে। তাঁদের কেউ কেউ ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে দেশের কৃতবিদ্য মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন দেশের উন্নয়ন, জনকল্যাণ, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনে। অনেকে বিখ্যাত নন। কিন্তু নিজের চেনা পরিসরে ছিলেন অতি আপন, অতি প্রিয় মুখ। সেই প্রিয় মুখগুলোকে আর পাশে পাওয়া যাবে না সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায়। সেই প্রিয়জনদের শূন্যতা যেন আর কিছুতেই ভরাট হওয়ার নয়।
সদ্যবিগত ২০১৪ সালকে নক্ষত্র পতনের বছর বললে বোধ করি অত্যুক্তি হবে না। বছরটিতে আমরা এমন অনেক মানুষকে হারিয়েছি, যাঁরা জাতির গৌরবময় ঐতিহাসিক অর্জনগুলোতে অনন্য অবদান রেখেছেন, যাঁরা নক্ষত্রসম ব্যক্তিত্বের বিভায় আলোকিত করে রেখেছিলেন আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন অঙ্গন।
বছরের প্রথমেই আমরা হারিয়েছি ভাষাসৈনিক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহিত্যিক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে। ১১ জানুয়ারি ৮৫ বছর বয়সে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে। ১৯৬৪ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন, ১৯৯৫ সালে দেশের প্রধান বিচারপতি হন। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুসম্পন্ন হয়। অবসরগ্রহণের পর তিনি সাহিত্যচর্চা ও লেখালেখিতে আত্মনিবেদিত ছিলেন। তাঁর পঠন-পাঠনের পরিধি বিস্তৃত ছিল বিচিত্র বিষয়ে। ইতিহাস থেকে অভিধান, সাহিত্য সমালোচনা, রবীন্দ্রগবেষণা, অনুবাদ মিলিয়ে তাঁর প্রকাশনা অর্ধশতাধিক। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘যারে যাবি যদি যা’, ‘ডেকো না আমারে তুমি’সহ অনেকে জনপ্রিয় গানের শিল্পী বশির আহমেদের সুললিত কণ্ঠ চিরস্তব্ধ হয়ে যায় ১৯ এপ্রিল। অনেক দিন থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। কলকাতার খিদিরপুরে বশির আহমেদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৯ নভেম্বর। ষাটের দশকের শুরুতে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসার আগেই তিনি উর্দু চলচ্চিত্রে গান গেয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কিংবদন্তিসম ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলীর কাছে সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন তিনি। গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি সুরকার, সংগীত পরিচালক ও সংগীত শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী মিনা বশিরও ছিলেন গুণী শিল্পী। স্বামীর মৃত্যুর চার মাস পর ৭ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন।
চল্লিশের দশকের বিশিষ্ট কবি আবুল হোসেন চিরবিদায় নেন ২৯ জুন। তিনিও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। আবুল হোসেনের জন্ম ১৯১২ সালের ১৫ আগস্ট। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ নব বসন্ত প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪০ সালে। বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবি ছিলেন তিনি। প্রকাশনা ২৫টি, একুশে পদকসহ বিভিন্ন পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৫ জুন প্রয়াত হন সরদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক, লেখক ও চিন্তাবিদ ফজলুল করিম।
বরিশালের আটিপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯২৫ সালের ১ মে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু বামপন্থী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার ফলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। রাজনীতির কারণে একাধিকবার গ্রেপ্তার হন, কারারুদ্ধ ছিলেন মোট ১১ বছর। ষাট দশকের মাঝামাঝি বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। প্লেটোর রিপাবলিক ও অ্যারিস্টটলের পলিটিকসসহ একাধিক গ্রন্থ অনুবাদ করেন। স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে চল্লিশের দশকের ঢাকা, পূর্ববঙ্গ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে আলাপচারিতা, সেই সে কাল: কিছু স্মৃতি কিছু কথা, রুমীর আম্মা ও অন্যান্য প্রবন্ধ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বিশিষ্ট চারুকলা সংগঠক ও চারুশিল্পী সুবীর চৌধুরী পরলোকগমন করেন ৩০ জুন। তাঁর মৃত্যুও ছিল অনেকটা আকস্মিক। বেঙ্গল গ্যালারির পরিচালক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি সুবীর চৌধুরী অস্ট্রেলিয়া সফর করছিলেন বাংলাদেশের শিল্পীদের একটি যৌথ প্রদর্শনী নিয়ে। সেখানেই তিনি হঠাৎ অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর মস্তিষ্কে ক্যানসার ধরা পড়ে। সিডনিতে চিকিৎসা শুরু হয়, তবে অবস্থার আর উন্নতি হয়নি। সুবীর চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জামালপুরে।
বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পী ও সংগীত শিক্ষক পণ্ডিত রামকানাই দাস পরলোকগমন করেন ৫ সেপ্টেম্বর। সুনামগঞ্জে তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালে। একুশে পদক, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা, বাংলা একাডেমির ফেলোশিপসহ বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
নজরুল সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগম চিরতরে দূরে চলে যান ৯ সেপ্টেম্বর। মাত্র ১২ বছর বয়সে এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম গানের রেকর্ড। জন্ম ফরিদপুরে, ১৯৩৪ সালের ২৮ জুলাই। পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ অজস্র পুরস্কার। উপমহাদেশের বিশিষ্ট সুরকার কমল দাশগুপ্তের স্ত্রী ফিরোজা বেগমের সৌভাগ্য হয়েছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্য লাভ ও তাঁর কাছ থেকে গান শেখার। গভীর নিষ্ঠা ও সাধনায় নজরুলসংগীতে সম্রাজ্ঞীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তিনি।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে যাঁর নাম, সেই ‘ভাষা-মতিন’ আমাদের ছেড়ে গেছেন ৮ অক্টোবর। চিকিৎসাধীন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবদুল মতিনের জন্ম সিরাজগঞ্জের চৌহালিতে, ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে যখন বলেন, ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’, তখন আরও অনেকের মতোই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আবদুল মতিন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ২০ হাজার শিক্ষার্থীর সামনে আবদুল মতিন অকুণ্ঠ চিত্তে, নির্ভয়ে দ্বিধাহীনভাবে ১৪৪ ধারা অমান্য করার পক্ষে কথা বলেন। এর পরই ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামেন। আবদুল মতিন মরণোত্তর দেহ দান করে গেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে।
ইতিহাসবিদ জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমেদ হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে ১৯ অক্টোবর রাতে ঘুমের মধ্যে চিরনিদ্রায় চলে যান। তাঁর জন্ম ১৯২২ সালে, ফরিদপুরে (তবে তাঁর শিক্ষাসনদে জন্মসাল উল্লেখ রয়েছে ১৯২৪)। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে সম্মানসহ স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। পরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণা করেন। পিএইচডি করেন লন্ডনে। তিনি জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৪৮ সালে। এখানে তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে ১৯৫৪ সালে ইতিহাস বিভাগে যোগ দেন এবং এখানে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে যোগ দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন ১৯৭৮ সালে এবং ১৯৮৪ সালে নিয়মিত চাকরি থেকে অবসর নেন। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ বিভিন্ন পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে বাঙালির সাধনা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ , বাংলাদেশ: জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা গণতন্ত্র, ইতিহাসের সন্ধানে ইত্যাদি।
নভেম্বরে আমরা হারিয়েছি দেশের চার কৃতী ব্যক্তিত্বকে। ‘আমি এক দুরন্ত যাযাবর’, ‘ওই দূর দূরান্তে’, ‘হেসে-খেলে জীবনটা যদি চলে যায়’, ‘হই হই হই রঙ্গিলা’—এমন অনেক জনপ্রিয় গানের শিল্পী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী চলে গেলেন ৪ নভেম্বর। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে মাতিয়েছেন তিনি গানে গানে। গেয়েছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি গান। নেত্রকোনায় জন্ম ১৯৪৪ সালে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
স্বনামখ্যাত শিক্ষাবিদ, কবি, প্রবন্ধিক ও অনুবাদক অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ইন্তেকাল করেন ১১ নভেম্বর। ঝিনাইদহের দুর্গাপুরে তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কৃতী ছাত্র ছিলেন। বরাবর প্রথম। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকেও স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তরেও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ। শিক্ষকতা করেছেন ঢাকা কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সর্বশেষ গণবিশ্ববিদ্যালয়ে। ছিলেন কলকাতার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর। ১৯৯০-৯১ সালে পালন করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব। পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা। কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ মিলিয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। শেক্সপিয়ারের সনেট ও মিলটনের অ্যারিওপ্যাজেটিকা তাঁর বিখ্যাত অনুবাদকর্ম।
বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু ছিল কেবল আকস্মিকই নয়, ছিল অভাবিত। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের চতুর্থ দিনে তিনি বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চেই হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। বিশেষ একটি কথা বলার জন্য তিনি নির্ধারিত বক্তব্যের শেষে আবার মাইক্রোফোনের সামনে এসেছিলেন, না-বলাই থেকে গেল কথাটি। কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের প্রকাশনাশিল্পে, সংবাদপত্রে, গ্রন্থের প্রচ্ছদ ও অলংকরণে আধুনিক রুচি ও সৌন্দর্যের সংযোগ করেছিলেন। বাংলার নিসর্গের সৌন্দর্য তুলে এনেছিলেন তাঁর কাজে। ফেনীতে ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ তাঁর জন্ম। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ বিভিন্ন পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
প্রবীণ অভিনেতা খলিলউল্লাহ খান মৃত্যুবরণ করেন ৭ ডিসেম্বর। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে তাঁর জন্ম ১৯৩৪ সালে। অভিনয় করেছেন দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে। জাতীয় চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন।
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমকে আমরা হারিয়েছি ১৯ ডিসেম্বর। তোষা ও দেশি পাটের জিন নকশা উন্মোচন করেন তিনি। কর্মরত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই কৃতী বিজ্ঞানীর জন্ম ১৯৫৪ সালে, ফরিদপুরে। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান রাইফেলসের কর্মকর্তা তাঁরা বাবা দলিলউদ্দিন আহমেদ ছিলেন একাত্তরের শহীদ। ড. আলম পাট ছাড়াও ছত্রাক, পেঁপে ও রাবারগাছের জিন নকশা উন্মোচন করেন।
বছরের শেষ প্রান্তে, ২৪ ডিসেম্বর চলে গেলেন দেশের বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক এখলাসউদ্দিন আহমদ। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার গৌরীপুরে তাঁর জন্ম ১৯৪০ সালের ১৬ ডিসেম্বর। অজস্র শিশুতোষ গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা রচনার পাশাপাশি তিনি সম্পাদনা করেছেন টাপুর টুপুর নামের বিখ্যাত শিশুসাহিত্য পত্রিকা। দেশের শিশুতোষ সাহিত্যের বিকাশ ও চট্টগ্রামের বইঘর প্রকাশনার মাধ্যমে দেশের প্রকাশনাশিল্পের আধুনিকায়ন ও শিল্পরুচি নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। রচনা ও সম্পাদনা মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ যুব পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া সদ্য বিগত বছরটিতে আমরা হারিয়েছি কথাসাহিত্যিক নয়ন রহমান, বিশিষ্ট আলোকচিত্র সাংবাদিক জহিরুল হক, সাংবাদিক বেবী মওদুদ, জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী ও কবি অরুণাভ সরকার, ভাষাসৈনিক ও শিল্পপতি হেদায়েত হোসেন চৌধুরী, রাজনীতিক সরদার আমজাদ হোসেন, ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আহসান জহির, অল পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক ও ধারাভাষ্যকার মনজুর হাসান মিন্টু, জাতীয় ফুটবল দলের স্ট্রাইকার শাহীনূর কবির শিমুলসহ অনেককে।
মৃত্যুর আঘাত অনিবার্য। তবু জীবনের স্পন্দন থামে না পৃথিবীতে। প্রাণে প্রাণে সঞ্জীব হয়ে ওঠে সবুজ ধরণি।