প্রজন্ম সংলাপ
সহিংসতার ভয়: সেকাল-একাল
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও কিশোর আলোর উদ্যোগে ‘সহিংসতার ভয়: সেকাল-একাল’ শীর্ষক প্রজন্ম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২১। আয়োজনের সম্প্রচার সহযোগী ছিল প্রথম আলো। আলোচনার নির্বাচিত অংশ এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো
অংশগ্রহণকারী
রাশেদা কে চৌধূরী
নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
মোহিত কামাল
কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ চিকিৎসক
ড. শাহনাজ হুদা
অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জিনাত আরা হক
প্রধান নির্বাহী, আমরাই পারি (উই ক্যান)
কাশফিয়া ফিরোজ
পরিচালক, গার্লস রাইটস, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
আনিসুল হক
সম্পাদক, কিশোর আলো; কবি ও কথাসাহিত্যিক
আঁখি
যুব প্রতিনিধি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
গার্গী তনুশ্রী পাল
শিক্ষার্থী, স্কলাসটিকা স্কুল
তাইফা
যুব প্রতিনিধি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
হামীম জুলফিকার
শিক্ষার্থী, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)
আরিয়ান
যুব প্রতিনিধি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
মোহাম্মাদ উল্লাহ জাফরী
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
সাদিয়া
যুব প্রতিনিধি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
নুসরাত সায়েম
সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সঞ্চালনা
লাবণ্য প্রজ্ঞা
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আলোচনা
লাবণ্য প্রজ্ঞা
‘প্রজন্ম সংলাপ’ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাই। আজকের আলোচনার বিষয় ‘সহিংসতার ভয়: সেকাল–একাল’। আমাদের সঙ্গে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত আছেন আমাদের গুরুজন, অভিভাবকতুল্য কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। আর নতুন প্রজন্মের আলোচক হিসেবে উপস্থিত আছে বিভিন্ন শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী। সবাইকে আমন্ত্রণ। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ‘সহিংসতার ভয়’ বিষয়ে দুই প্রজন্মের কথা শুনব এবং সমাধানের পথ খুঁজতে চেষ্টা করব।
কাশফিয়া ফিরোজ
আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে কাজ করছি। এসডিজি-কে মাথায় রেখে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরের কৌশলপত্র তৈরির সময় কিশোর-কিশোরী ও যুবদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ১০ বছরের জন্য সহিংসতার ভয় নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নির্ধারণ করে। সহিংসতার এই ভয় শুধু কিশোর-কিশোরীদের জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়। আর তাই, সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরুর প্রাক্কালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সকল বিভাগ থেকে পারিবারিক বলয়ে, রাস্তায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অনলাইনে-সহ বিভিন্ন পরিমণ্ডলে ‘সহিংসতার ভয়’ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। প্রায় ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর উপর জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হয়। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ও কিশোরী জানান তারা নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষার্থী দ্বারা বিভিন্ন বিরূপ ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবী করেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়ার কথা জানান অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ, আর কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের ৫৬ শতাংশ। যা তাদের মনে দীর্ঘমেয়াদি ভয় সঞ্চার করে। জরিপ হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি, ভয়ের কারণে অনেক সময় বাবা-মায়েরা মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলাধুলা, পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সে জায়গায় আমরা আইন ও আইনের বাস্তবায়নের বিদ্যমান প্রেক্ষাপট দেখতে চেয়েছি যা আমাদেরকে আইন ও নীতিমালা কাঠামো বিশ্লেষণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সহিংসতার ভয় থেকে কীভাবে বের হওয়া সম্ভব, আইন কী বলছে, তা জানতে ও বুঝতে আজকের এই প্রজন্ম সংলাপ থেকে আলোচনার সূচনা করতে চাই।
ড. শাহনাজ হুদা
আমরা যে গবেষণাটি করেছি, সেখানে সব বয়সী নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে একটি পরিবারে একাধিক মেয়েশিশু জন্মালে তাদের যৌতুকের টাকা নিয়ে অভিভাবকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এটা একটি সত্যিকারের বাস্তবতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় সহিংসতার ভয় মেয়েদের মনের ভেতরে ঢুকে যায়। ফলে অনেক কিছু থেকে সে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। নারীদের প্রতি অনেক ধরনের সহিংসতা হচ্ছে। নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও পিতৃতান্ত্রিকতা আমাদের দেশে রয়েছে। আমাদের সব নারীর মধ্যে সব সময়ই সহিংসতার একটি ভয় কাজ করে। তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে অনেক কিছু মানিয়ে চলতে হবে। এ মানিয়ে চলার দায়িত্ব সব সময় মেয়েদের ওপর ন্যস্ত হয়। আজকাল কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়েদের ওপর দোষারোপ করার একটি প্রবণতা দেখা যায়।
আইন বেশ কিছু অধিকার দেয়। কিন্তু আইনের কাছে পৌঁছানো জন্য দরকারি বিষয়গুলো হয়তো সব নারীর কাছে নেই। তাঁকে অনেক কষ্ট করে আনুষ্ঠানিক আইনব্যবস্থার কাছে পৌঁছাতে হয়। তার আগে তাকে গ্রাম্য সালিসে যেতে হয়। দেশে এখনো ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রাম্য সালিসে সমস্যা সমাধান করতে চায়। ধর্ষণের ক্ষেত্রে নারীদেরই দোষারোপ করা হয়। নারীকে কোনো কিছু থেকে বিরত রাখা, খোলাখুলিভাবে অধিকার ভোগ করতে না দেওয়া—সবকিছুই সহিংসতার মধ্যে পড়ে। সহিংসতা নারীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন। সহিংসতা হলে বিচার পাওয়া যাবে না, এ ভয় নারীদের মধ্যে আছে। আর বিচার পাওয়ার পথে যে ধরনের ভোগান্তি, তার চেয়ে বিচার না চাওয়াই ভালো বলে মনে করেন অনেক নারী। সে জন্য নারীরা চলাফেরাসহ সবকিছু সীমিত করে আনেন। সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে স্কুল-কলেজের মেয়েদের ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর, পাসওয়ার্ডসহ কোনো গোপন কিছু অনলাইনে রাখা উচিত না।
আঁখি
ছোটবেলায় আমার ভাইয়ের জন্য আনা হতো গাড়ি বা বল আর আমার জন্য রান্নার বাসন ও পুতুল। সংসার সামলানো, সন্তান লালন-পালন করা মেয়েদের কাজ বলে ছোটবেলা থেকে আমাদের বোঝানো হয়। পরিবার থেকে সমাজে এগুলোর বিস্তার ঘটে।
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমাদের সহিংসতার শিকার হতে হয়। শুধু মেয়েরা নয়, ছেলেরাও অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হয়। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এ হার অনেক বেশি। সহিংসতার ভয় পরিবার থেকে শুরু হয়। পরিবারের ক্ষেত্রে দুই ধরনের সহিংসতা হয়। একটা হলো মায়ের বাসায়, অন্যটি স্বামীর বাসায়। মায়ের বাসায় একধরনের, স্বামীর বাসায় আরেক ধরনের সহিংসতার শিকার হতে হয়। আগে বাইরে বের হলে কথা শোনানো হতো। এখন আমি আয় নিজে আয় করি। তাই আর কেউ কিছু বলে না। সে জন্য মেয়েদের তাদের অবস্থান তৈরি করতে হবে। স্বনির্ভর হতে হবে।
আনিসুল হক
আসলে আমার পরিবার ছিল অনেকটা মাতৃতান্ত্রিক। আমার মা আমাদের পরিবার নিয়ন্ত্রণ করতেন। আব্বা ছিলেন নিরীহ মানুষ। ফলে আমার অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে মিলবে না। কিন্তু ভয়ের বিষয়টি আমি নিজেই অনুভব করি। একবার রাস্তায় ছিনতাইকারী ছুরি ধরে আমার কাছে থাকা সবকিছু কেড়ে নিয়ে গেল। এরপর রিকশায় চলাচল করার সময় কোনো লোককে রাস্তা পার হতে দেখলেও ভয় লাগত। এটা ট্রমা হয়ে যায়। সহিংসতার অনেক রূপ আছে। সহিংসতার ট্রমাগুলো আমাদের স্বাভাবিক বিকাশ রুদ্ধ করে, উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে। স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে। আমাদের দেশে নারী, পুরুষ ও শিশুরা নানা ধরনের হয়রানি ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েই বড় হয়।
আমিও ছোটবেলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ছোটবেলায় আমাদের সমাজে এগুলো খুব একটা পাত্তা দেওয়া হতো না। আবার শিশুরা হয়রানির শিকার হলে জানাতেও ভয় পায়। আমাদের দেশে পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্যাতনের শিকার নারী, পুরুষ বা শিশুদের মন খুলে কথা বলার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। কিছুদিন আগে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও যৌন হয়রানি রোধ করার জন্য মানবাধিকার কমিশন আইনমন্ত্রীর কাছে আইনের একটা খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে। প্রথম আলোতে নারীর প্রতি অন্যায় প্রতিরোধে একটি কমিটি আছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিষয়টি বেশ জটিল। এটা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রথম কথা হলো, এ নিয়ে আলোচনাটা শুরু করা দরকার।
অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে হেয় হতে হবে না। যে অন্যায় করে, সে অপরাধী। সামাজিক লজ্জা অপরাধীর হবে, অন্যায়ের শিকার ব্যক্তির না। আগের থেকে এসবের উন্নতিও হয়েছে। আগে পত্রিকায় ভুক্তভোগীদের ছবি ছাপানো হতো। এটা বাংলাদেশের আইনে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন গণমাধ্যমে আকারে-ইঙ্গিতেও ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। আরও অনেক উন্নতির জায়গা আছে।
অনলাইনে আমরা কেউই নিরাপদ ও সুরক্ষিত না। যে কেউ চাইলেই তোমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে৷ সে জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কিছু বোলো না, রেখো না—যা অন্য কেউ দেখলে তোমার ক্ষতি হতে পারে। তোমার মা-বাবাকে যে জিনিস দেখাতে পারো না, সেটা অনলাইনে রেখো না।
নুসরাত সায়েম
স্কুলে-কলেজে সহিংসতা শিকার হলে শিক্ষকদের বললে হয়তো ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু আলাদা করে কোনো কমিটি নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহায়তা প্রদানে কোনো কমিটি থেকে থাকলে প্রথমেই এ কমিটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। নীরবে কোনো কমিটি হলে তো আমরা জানতে পারব না। সহিংসতার ভয়ের কারণে কোথাও যেতে হলে আমার সঙ্গে সব সময় পরিবারের কোনো সদস্য থাকেন। শপিংয়ে যাওয়ার সময় হয়তো একরকমের জামা পরতে ইচ্ছা করে। কিন্তু দোকানি কী বলবেন, এ ভয় কাজ করে। অনেক সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনেকে কটূক্তি করে দেয়। এ পরিবেশে কেমন জামা পরতে হবে, তা চিন্তা করতে হয়। ফলে মনের মধ্যে একটা চাপ তৈরি হয়। রিকশা বা হেঁটে চলাচল করার স্কুলব্যাগ সামনে নিয়ে হাঁটতাম। আমাদের মনে এটা গেঁথে গেছে যে সমাজে বেঁচে থাকলে এসব মেনে নিয়ে, সহ্য করে, কৌশল করে বাঁচতে হবে। এটি আমাদের জন্য সুখকর নয়। রাস্তা দিয়ে আমরা স্বচ্ছন্দে হাঁটতে পারি না। মাথার মধ্যে সব সময় এসব চাপ থাকলে আমরা নিজেদের ঠিকমতো মেলে ধরতে পারি না।
হামীম জুলফিকার
পরিবারে ছেলেদের আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা ছোটবেলা থেকে পরিবারে লৈঙ্গিক সমতা নিয়ে তেমন কথা বলি না। তার প্রভাব পড়ে সবখানে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে মেয়েদের খেলা, ছেলেদের খেলা বলে অনেক কিছুই আলাদা করে দেওয়া হয়। পুরুষের মধ্যে কর্তৃত্ব করার একটা প্রবণতা সমাজ শিখিয়ে দেয়।
রাস্তাঘাটের চেয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটে। এমনকি অনলাইনে কিছু সক্রিয় গোষ্ঠীও রয়েছে। ইদানীং কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এসবের প্রতিবাদ করছেন। সাইবার অপরাধের জন্য পুলিশের ফেসবুক পেজ আছে। সেখানে সাহায্য চেয়ে অনেক পোস্ট হয়। এসব বিষয়ের একটা যথাযথ সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আমরা সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে চলার চেষ্টা করি৷ যারা নারীদের অসম্মান করে, তাদের বর্জন করার চেষ্টা করি।
জিনাত আরা হক
কেন আমরা ভয় পাই? আমাদের ভয় তৈরি হয় পরিবার থেকে। পরিবারের একটা বিধিনিষেধ আছে। এসব বিধিনিষেধ থেকে ভীতি তৈরি হয়। পরিবারের বিধিনিষেধ মেনে নেওয়া থেকে আমাদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়ে থাকে। এ ভয় থেকে ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। মা-বাবাকে ভয় পাওয়ার কারণ হলো তাদের প্রতি নির্ভরশীল থাকা। তারপর প্রেমিক, বন্ধু ও স্বামীর ওপর ভয় পাওয়া শুরু হয়। স্কুল-কলেজেও আমরা ভয় পাই। রাস্তায় বখাটেরা হয়রানি করে। প্রতিবাদ করলে বরং পরিবারের কাছ থেকে শুনতে হতো, ‘তুমি পাশ কাটিয়ে চলে আসতে পারতে।’
আমি বলব, প্রথমেই নিজেকে তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে সহিংসতা রোধে ১২টি আইন ও কিছু সুবিধা আছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ এ তথ্যগুলো জানে না। এখন সহিংসতা রোধে অনেকগুলো হেল্পলাইন নম্বর আছে। এ নম্বরগুলো আমাদের জানতে হবে। জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ খুবই কাজের। কারও আচরণে বিরক্ত হলে তা কেন অফিসে জানানো যাবে না। এটা বলতে পারার মতো কর্মপরিবেশ থাকা উচিত। দুর্বলতা সবাইকে জানানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। জীবনদক্ষতা দিয়েই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে।
গার্গী তনুশ্রী পাল
আমি নিজে ভাগ্যবান। কারণ, আমি কখনো সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হইনি। কিন্তু আমার অনেক বন্ধুই সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে সহিংসতার শিকার হয়েছে। আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে স্কুলে একটি সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে সারাদিন নানাভাবে উত্যক্ত করা হয়। ফলে সেদিন সে তাড়াতাড়ি ছুটি নেয় এবং পরের দুই সপ্তাহ
স্কুল আসা বন্ধ রাখে। এভাবে সে মৌখিক সহিংসতার শিকার হয়। আমাদের সমাজে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকেই দোষারোপ করা হয় বেশি। ভুক্তভোগী দোষারোপ বন্ধ
করা এবং এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রতিবাদ করতে হবে। এটি সম্ভব হলেই সহিংসতা, নির্যাতন ও অত্যাচার বন্ধ করা যাবে। সে জন্য ভুক্তভোগী দোষারোপ বন্ধ করতে হবে।
নির্যাতন, অত্যাচার ও সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের পাশে থাকতে হবে।
তাইফা
স্কুল-কলেজের হয়রানি রোধে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ–এর একটি উদ্যোগ আছে। এ উদ্যোগে আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযোগ বাক্স দিয়ে আসতাম। আমাদের সমাজে বাল্যবিবাহ রোধে অনেক কাজ হচ্ছে। আমি নিজেও একটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। বাসে যাতায়াতের সময় অনেককে প্রায়ই কটূক্তি করতে শুনি। কেউ কিছু বললে আমি প্রতিবাদ করি। কিন্তু সবার মধ্যে এ মনোভাব থাকে না। আমার স্কুল আমাদের বাসা থেকে বেশ দূরে ছিল। আমার মায়ের সঙ্গে এক প্রকারের যুদ্ধ করেই ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ভর্তি হতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে দূরত্বের কারণে যাতায়াতে নিরাপত্তা নিয়ে মায়ের উদ্বেগ ছিল। ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। মায়ের মনে তখন ভয় কাজ করে। এসব ভয় নিয়ে কাজ করতে পারলে সমাজের দৃষ্টি অনেকাংশে বদলে যাবে।
মোহাম্মদ উল্লাহ জাফরী
সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার মূল কারণ, কার্যকর শিক্ষার অভাব। আমি অনলাইনে ভুল কিছু না করেও বিদ্রূপের শিকার হয়েছি। অনলাইনে ‘য়’ ও ‘ই’ ব্যবহার নিয়ে অনেক বিভ্রাট দেখা যাচ্ছে। এ রকম একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে ভুল থাকায় আমি বিনয়ের সঙ্গে তা সংশোধন করতে বলি। কিন্তু তিনি আমাকেই বিদ্রূপ করতে শুরু করেন। এর সঙ্গে যোগ দেন আরও অনেকে। আমরা দিনপরিবর্তনের প্রত্যাশা রাখি। আমরা আশা রাখতে পারি, আলো আসবেই। সেকাল কিংবা একাল, সহিংসতার ভয় দূর করে আমরা সবাই সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠব।
সাদিয়া
কোভিডের কারণে আমরা সবাই স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। বিশেষ করে শিশুরা ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের অভিভাবকদের অনেকেই এখনো ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে ভালো বোঝেন না। শিশুদের কাছে ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়ার পূর্বে অভিভাবকদের এ বিষয়ে ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। শিশুরা যেন তাদের জন্য অনুপযোগী সাইটে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা দরকার। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো নিয়ে স্কুলগুলোর কোনো প্রস্তুতি থাকে না। আমার স্কুলে প্রতি সপ্তাহে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হতো। মাসিক চলাকালেও যেন স্কুলে আসি, এ বিষয়ে সেখানে বলা হতো। এসব বিষয় নিয়ে ভয় না পাওয়ার জন্য স্কুল থেকে উৎসাহিত করা হতো। কিন্তু এসব শিক্ষা সব স্কুলে দেওয়া হয় না।
মোহিত কামাল
এখানে এসে আমি খুব উপকৃত হয়েছি। আমাদের কিশোর-কিশোরী ও যুবদের কথা শুনে নিজেকে ঋদ্ধ করেছি৷ ভুক্তভোগীদের দোষারোপের কথা বলেছেন একজন। ধর্ষণ হলে ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করা হয়। এতে পরিবারসহ সবাই আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি আমাদের বর্তমান মনমানসিকতা। এ ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনও আসছে। সমাজে ভুক্তভোগীকে কোনোভাবেই দোষারোপ করা যাবে না। কারণ, এটা ভুক্তভোগীর দোষ নয়। তবু সে সারা জীবন অন্যের দোষের বোঝা বহন করে। সে যেন এটা বহন না করে, সে যেন এটা নর্দমায় ছুড়ে দেয়। বাসে যাতায়াতের সময় অনেকে কটূক্তি করে। এ জন্য কেন তুমি যাতনা ভোগ করবে? বরং তোমার গর্ব হওয়া উচিত। কেননা তোমার কিছু ইতিবাচক বিষয় আছে বলেই সে মন্তব্য করছে। সে খারাপ কথা বলে থাকলে সেটা তার দোষ। কিন্তু তুমি ব্যক্তিগতভাবে যন্ত্রণা নিচ্ছ। তুমি কেন যাতনা নেবে? কেন নিজেকে দোষী ভাববে? যদি সে তোমাকে কোনো বাজে মন্তব্য করে, তখন সে দোষী হবে।
এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের অধিকাংশ অধ্যাপক নারী। এসব অধ্যাপক মেয়ে তাঁদের পরিবারের দেখাশোনা করছেন। তোমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করো। নৌবাহিনীতে মেয়েরা নৌযান চালাচ্ছেন। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ—সবখানে মেয়েরা যুক্ত হচ্ছেন। ইতিবাচক দিক দেখে নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তোমার দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে, যা তোমার আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে। তোমার দক্ষতাকে শাণিত করো। কেউ কবিতা লিখতে পারো, কবিতা লেখো। কেউ সাহিত্যচর্চা করছ, করো। তখন তোমার মধ্যে আশাবাদী মনোভাব তৈরি হবে। তখন সমাজের সব জঞ্জাল তুমি দূর করতে পারবে। অন্ধকারের ভেতর থেকে নিজেকে আলোকিত করতে পারবে। তোমাদের জন্য শুভকামনা।
আরিয়ান
সহিংসতার একটা বড় কারণ হলো ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা। ছেলে মানে ভয় দেখাবে এবং মেয়ে মানে ভয় পাবে—এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এগুলো আমাদের সহিংসতা রোধে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিছুদিন আগে ফেসবুক পেজে আমার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেখানে আমি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে প্রতিজ্ঞা করি। আমার বন্ধুরা এ ভিডিও দেখে আমাকে মেয়ে বলে নানান বিদ্রূপ করতে থাকেন। পুরুষ হয়ে নারীর বিষয়ে কথা বলতে গেলেও অনেক রকম বাধা আসে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বইয়ে শুধু প্রযুক্তিগত দিক আলোচনা করে এগোনো হয়েছে। সেখানে ডিজিটাল ও অনলাইন শিষ্টাচার নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট অধ্যায় নেই। তথ্য, যোগাযোগপ্রযুক্তি ও নৈতিক শিক্ষা হিসেবে পাঠ্যক্রম সাজালে বিষয়টি আরও যুগোপযোগী হবে।
রাশেদা কে চৌধূরী
যুব ও কিশোরদের জমায়েত করার জন্য প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালকে ধন্যবাদ। সবাই সমান সুযোগ পায় না। যারা সুযোগ পায় নি তাদের হাত ধরে তুলতে হবে। কারণ সবাই সমান সুযোগ পায় না। সৃষ্টিকর্তা সকলকে মেধা দিয়ে তৈরি করেন। কিন্তু সমান সুযোগ ও পরিবেশের অভাবে অনেকেই পিছিয়ে পড়ে। তাদের সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশের পথে বাধা তৈরি হয়। আমাদের মানসিকতায় নানা পর্যায়ে এখনো চিরাচরিত বিভিন্ন কুসংস্কার রয়ে গেছে। এই ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে যুবদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
আমাদের সময় আমরা দল বেঁধে হেঁটে স্কুলে যেতাম। ফলে কোনো ছেলের আমাদের কিছু বলার সাহস ছিল না। আরও আগের কালের ঘটনা বলি। আমার মা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে পড়তেন। তিনি চার সন্তানের জননী হয়ে পঞ্চাশের দশকে ডাক্তার হয়েছিলেন। তাঁর মুখে তাঁর কালের গল্প শুনেছি। বাসে তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়ালে যাতায়াত করতেন। বাস পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকত। বাসের ভেতর আয়া বেত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন যেন কোনো মেয়ের কণ্ঠ চালক শুনতে না পান। এমসি কলেজে পড়াকালে আমরা কালীদাস নাটক করলাম। তখন কিছু আত্মীয়স্বজন আমার বাবার কাছে অভিযোগ জানান। আমার বিয়ে নিয়েও সমস্যা হবে বলে তাঁরা জানান। আমার বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের বিয়ের চিন্তা আপনাকে করতে হবে না।’ পরিবারের পাশে থাকা খুব দরকার। এ জন্য আমাদের সবাইকে পরিবারের ভূমিকার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
রবি ঠাকুর বলেছেন, ‘সমাজ মূর্খদের দ্বারা নষ্ট হয় না। সমাজ নষ্ট হয় শিক্ষিতদের মূর্খ আচরণ দ্বারা।’ আশির দশকের শেষের দিকের আরেকটা ঘটনা বলি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তকে নারীর চিত্রায়ন নিয়ে গবেষণা করতে আসেন। তাঁর কাজ করতে গিয়ে দেখি, আমার পরিবারে কোনো লিঙ্গবৈষম্য ছিল না। তখন প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে একটা চিত্র ছিল। চিত্রে দেখা যাচ্ছে, বাবা কৃষিকাজ করে মাঠ থেকে এসে খেতে বসছেন, মা বাতাস করছেন। ভাই স্কুল থেকে এসেছে আর বোনটা খাবার বেড়ে দিচ্ছে। নারীকে এভাবে পাঠ্যপুস্তকে দেখানো হতো। এখন পাঠ্যপুস্তকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
২০১৮ সালে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তারা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় কি না, তা আমরা তাদের কাছে জানতে চাই। তারা জানায়, তারা লেখাপড়া করতে চায়। কিন্তু মা-বাবা বিয়ে দিয়ে দিতে চান। কারণ হিসেবে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে যৌন হয়রানির বিষয়টি এসেছে। জেলা প্রশাসক স্কুলে কাউন্সেলিং দেওয়ার কথা বলেন। মেয়েরা সোজাসাপটা বলেছিল, ‘আমাদের কাউন্সেলিং লাগবে না। বখাটে ছেলে ও তাদের মা-বাবাদের কাউন্সেলিং করান।’ এ জায়গায় আমরা বেশি দূর এগোতে পারিনি। এখানে আমাদের কাজ করতে হবে।
এখানে পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ জায়গায় কমিউনিটি রেডিওর ভূমিকা আছে। স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি রেডিও খুবই জনপ্রিয়। নারীদের নির্যাতনের ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র কোনো বৈষম্য নেই। সে জন্য নীরবতা ভাঙতে হবে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতা আছে। এটা আমাদের কালেও ছিল; একালেও আছে। গণপরিবহনে সহিংসতার বিষয়টি এসেছে। প্রতিবাদ করা বন্ধ করা যাবে না। বেসরকারি পর্যায়ে আরও জরিপ হওয়া প্রয়োজন। তোমাদের বলব, কখনো হাত ধরতে হবে ও অন্যদের জায়গা করে দিতে হবে। তোমাদের কাছ থেকে তা–ই আশা করছি।
কাশফিয়া ফিরোজ
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা এই ‘প্রজন্ম সংলাপ’ চালিয়ে নিতে চাই। আমরা সবাই যুবদের নেতৃত্বের কথা বলি। কিশোর-কিশোরীদের বিকাশ ও নেতৃত্বের কথা বলি। কিন্তু সিদ্ধান্ত নির্ধারকের বেশির ভাগই আমাদের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ। আমরা আমাদের মতো ভাবি ও সিদ্ধান্ত নিই। আমরা চাই কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের ভালো চিন্তা করবে। তোমরাও বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আসবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা তোমাদের কথা আরও শুনতে চাই।
লাবণ্য প্রজ্ঞা
এ আলোচনা অব্যাহত থাকুক। আমরা আশা করি, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি আনন্দময় এবং ভয়মুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হবে। ঘরে–বাইরে সবখানে। ‘প্রজন্ম সংলাপে’ অংশগ্রহণ করায় আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
সুপারিশ
পাঠ্যপুস্তকে অনলাইন শিষ্টাচার সম্পর্কে জানাতে হবে
গণপরিবহনে নারীদের হয়রানি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
সহিংসতা রোধে নতুন প্রজন্মের চাওয়া-পাওয়া বিবেচনায় রেখে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন
নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা রোধে কার্যকর কমিটি গঠন করা দরকার
সহিংসতার বাস্তব চিত্র তুলে আনতে বেসরকারি পর্যায়ে আরও জরিপ ও গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে