প্রতিবন্ধী শিশুদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি: সম্ভাবনা, বাস্তবতা ও করণীয়

সাইটসেভার্স বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘প্রতিবন্ধী শিশুদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি: সম্ভাবনা, বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।

আলোচনা

Suvra Kanti Das

ফজলে ছিদ্দীক মো. ইয়াহিয়া

পরিচালক (পরিকল্পনা, উন্নয়ন) জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এক্সেস টু ইনফরমেশনের সঙ্গে মিলে সবার ব্যবহার উপযোগী একটি টকিং বুক তৈরি করেছে। আমরা কোনো বিশেষ শ্রেণির কথা মাথায় রেখে নয়; বরং সবার কথা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করে যাব। আমরা বড় একটি কাজ শুরু করেছি। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) আমাদের যেসব কর্মকর্তা যান মৌলিক প্রশিক্ষণে, সেখানে প্রতিবন্ধিতা নিয়ে দুই ঘণ্টার একটি সেশন যুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে তাঁরা প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পাচ্ছেন। আমরা চিন্তা করছি, ভবিষ্যতে মন্ত্রণালয়গুলোয় সব ফোকাল পারসনের জন্য অনলাইনে একটি মডিউল করব।

প্রতিবন্ধিতা বিষয় নিয়ে এখন আমরা খোলামেলা কথা বলছি। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করছি। এটা যদি ধরে রাখা যায়, তাহলে নিশ্চয় আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে যাব। আমাদের সক্ষমতা বাড়ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। সবার জন্য যাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি নতুন বাংলাদেশের চিন্তার সূচনা করতে চাই। আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুরা জিডিপিতে অবদান রাখছে। আমাদের শিশুরা ফুটবলে ইস্ট-ওয়েস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। সেখানেও তাদের একটি অবদান আছে। আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুরা কিন্তু বেকারি পণ্য তৈরি করছে।

আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুরা মুক্তা পানি উৎপাদনের কাজে সহায়তা করছে। কিন্তু সে পণ্যকে উৎসাহিত করা হচ্ছে না ঠিকভাবে। এই অ্যাডভোকেসির জন্য তো আমাদের প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন আছে। কিন্তু সেটি আমরা যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারছি না। তবে আমরা এ–সংক্রান্ত উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আমরা এবার চাইছি খুব শিগগির তিনটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম তুলে ধরতে। পাশাপাশি আমরা টিভিসি ম্যাটেরিয়াল তৈরি করছি, যার মাধ্যমে আমরা টেলিভিশনেও আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানাব। আমাদের সেবাগুলো কীভাবে গ্রহণ করা যায়, তা–ও জানানো হবে। আমরা মনে হয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি ইতিবাচক দিকেই যাব। আর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শনাক্তকরণে একটি সুনির্দিষ্ট ও একক উপায় নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করব, যেন তথ্যের সুস্পষ্টতা ও সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে এবং সব দপ্তরই সেটি ব্যবহার করবে।

Suvra Kanti Das

মো. ফরহাদ আলম

উপ পরিচালক (পিইডিপি-৪), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি৪) মাধ্যমে ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষককে একীভূত শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। পাঁচ দিনের এ প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একীভূত শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া। ইতোমধ্যে ৯৮ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা নির্দেশনাবলি প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণের মূল বিষয়বস্তু ছিল সহানুভূতি ও সমানুভূতির বিষয়গুলো। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক যেন তাঁর দায়িত্বের জায়গা থেকে একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে সহানুভূতির বিষয়গুলোয় সহায়তা করতে পারেন। তিনি যেন সামাজিক প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে পারেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে অন্যদের কটূক্তি বা হেয়ভাবে দেখা থেকে বিরত রখতে পারেন ও সামাজিকভাবেও ভূমিকা রাখতে পারেন, এটিই লক্ষ্য।

এখনো কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁরা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চান না। আবার অনেক মা–বাবা প্রতিবন্ধী শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চান না। তাঁরা ভাবেন, তাঁদের শিশু কটূক্তির শিকার হবেন, বিদ্যালয়ে গিয়ে ভালো কিছু করার পরিবর্তে উল্টো মানসিক কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে আসবে। এ জায়গাগুলো যেন কিছুটা হলেও চিহ্নিত হয়, তাদেঁর মনোভাবের কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসে, সে জন্য পিইডিপি৪-এ আমরা প্রেরণাদায়ক বিভিন্ন কর্মসূচি রেখেছি।

আসন্ন পিইডিপি৫–এ শিশুদের শারীরিক–মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কল্যাণের বিষয়গুলো আরও জোরদার করার বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুদের বিবেচনায় রেখে কাজ করব। পিইডিপি ৫-এ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে অংশীদারি সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যাতে একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে আমাদের সম্পদগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত ও কার্যকর করা যায়।

তাহেরা জাবিন

সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার, ব্রিটিশ হাইকমিশন, ঢাকা

যুক্তরাজ্য বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। লন্ডনে ২০১৮ সালে প্রথম বৈশ্বিক প্রতিবন্ধিতা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধিতা জোটের সঙ্গেও বৈশ্বিকভাবে কাজ করছি। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সহযোগীদের সঙ্গে আমাদের বিস্তৃত কার্যক্রম রয়েছে। ‘এডুকেশন কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম’ নামে আমাদের একটি কারিগরি প্রকল্প রয়েছে। এতে ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংক আমাদের অংশীদার। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করছি। শিক্ষক, তত্ত্বাবধায়ক, প্রশাসকসহ অন্যদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। এই গ্রুপের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৮ হাজারের বেশি শিক্ষক এ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। আমরা কিছু স্কুলে পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করছি। এ প্রকল্পগুলো সামনের দিনে আমাদের অনেক তথ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেসব প্রতিবন্ধী শিশু পড়ছে না, তাদের কতজন শিক্ষা নিচ্ছে, কতজন শিক্ষার বাইরে রয়েছে—সে উপাত্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপশি প্রতিবন্ধিতার সঠিক ধরনসংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ করাও জরুরি। এ নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এ বছর জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠেয় বৈশ্বিক প্রতিবন্ধিতা সম্মেলনে একীভূত শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অঙ্গীকার কী হবে, তা নিয়ে করণীয় ঠিক করা প্রয়োজন। আগের সম্মেলনে বাংলাদেশ ১১টি অঙ্গীকার করেছিল। যার মধ্যে একটি অঙ্গীকার ছিল একীভূত শিক্ষাসংক্রান্ত।

অমৃতা রেজিনা রোজারিও

কান্ট্রি ডিরেক্টর, সাইটসেভার্স

প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার আইনি কাঠামোয় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কী নামে ডাকব, তা পরিষ্কারভাবে বলা আছে। সেখানে সংজ্ঞাটা কী হবে, কত ধরনের প্রতিবন্ধিতা আছে, তা-ও পরিষ্কারভাবে বলা আছে। কিন্তু তা যদি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে ব্যবহার না হয়, যেমন আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে গিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বলি, এখানে একটা অসংগতি তৈরি হচ্ছে। আমাদের অন্যান্য যে আইন রয়েছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করা দরকার। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আইনি কাঠামোয় অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। সম্পদের জায়গা থেকেও আমাদের কাজ করা দরকার। সরকারের অবশ্যই সম্পদের স্বল্পতা আছে। কিন্তু যে সম্পদটুকু আমাদের আছে তাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করে কাজ করতে হবে।

২০২২ সালের বৈশ্বিক প্রতিবন্ধিতা সম্মেলনে আমরা ১১টি অঙ্গীকার করেছিলাম। আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে এই অঙ্গীকারগুলো নিয়ে অগ্রগতি উপস্থাপন করতে হবে এবং নতুন অঙ্গীকার করতে চাই কি না, তা–ও জানাতে হবে। কিন্তু বিগত সময়ে এর পর্যালোচনা কতটুকু হয়েছে, আমরাই-বা এর অগ্রগতি যাচাইয়ে কতটুকু সম্পৃক্ত হতে পেরেছি। একইভাবে এসডিজি পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও আমাদের অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের যথাযথভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আমরা যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের করা অঙ্গীকারগুলো পূরণ করতে চাই, তাহলে একীভূত শিক্ষাকে উৎসাহিত করা ও সামনের এগিয়ে নিতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

লায়লা ফারহানা আপনান বানু

এডুকেশন এক্সপার্ট, ইউনিসেফ

একীভূত শিক্ষায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমাদের অনেক নীতি আছে, ফ্রেমওয়ার্ক আছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের স্বাগতম জানানোর ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্মুক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা এগিয়েছি। আমাদের নথিভুক্ত করার হার বেড়েছে। মূলত পরিমাণগত দিক থেকে আমরা এগিয়েছি, কিন্তু গুণগত দিক থেকে আমাদের এখনো অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে একীভূত শিক্ষায় যাওয়ার ক্ষেত্রে যে মানসিকতা, সক্ষমতা, সহায়ক উপকরণ, বিভিন্ন আয়োজন দরকার, তার ঘাটতি ও কমতি আছে। শিক্ষানীতি ২০১০–এ একীভূত শিক্ষার বিষয়টি ১৮ নম্বরে এসেছে, যা গুরুত্বের দিক থেকে অনেক পেছনে। আমরা এখন ২০২৫ সালে আছি। আমাদের শিক্ষানীতি যুগোপযোগী ও হালনাগাদ নয়। শিক্ষানীতিতে একীভূত শিক্ষার আসল দর্শন এখানে পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি।

প্রাথমিক শিক্ষায় কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে, লিঙ্গভেদে ভর্তির হারের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোনো তথ্য আমরা পাচ্ছি না। তাহলে আমরা ঠিকভাবে কর্মসূচি বা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করব কীভাবে! আমরা যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিই, শিক্ষাক্রম তৈরি করি বা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নীতিমালা তৈরি করি—এসব ক্ষেত্রে আমরা কখনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে বা তাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করি না। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবাই মিলে যদি কাজ করা যায়, তাহলে ধীরে ধীরে আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।

মো. শরীফ উল ইসলাম

শিক্ষা অফিসার, (তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ-আইএমডি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

সত্যিকার অর্থে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে চাইলে আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের উপাত্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমাদের একটা বড় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জরিপ পরিচালনা করার অনুমোদন নেই। এ দায়িত্ব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর। এ সমস্যা সমাধানে সরকার কাজ করছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বর্তমান তথ্য ব্যবস্থায় আমরা প্রতিবন্ধী শিশুদের তথ্য বিচ্ছিন্ন (ডিজঅ্যাগ্রিগেটেড) উপায়ে সংগ্রহ করি। বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির উপাত্তে দেখা গেছে, গত শিক্ষাবর্ষে প্রাক্‌–প্রাথমিক শ্রেণিতে ২৫ হাজার ৫৬৪ প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ১৫৯ জন বালক, ১১ হাজার ১০৫ জন বালিকা। আমাদের উপাত্তে ৭ ধরনের প্রতিবন্ধিতার তথ্য পাই, যদিও আইনে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার কথা বলা হয়েছে। আমরা আমাদের ফরমগুলো হালনাগাদ করার চেষ্টা করছি। অনেকগুলো প্রতিবন্ধিতা আছে, যা শিক্ষকের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এটি করতে হলে শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শনাক্তকরণ উপকরণ নিশ্চিত করতে হবে।

মাসুদুল হাসান তাপস

উপ পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, নরসিংদী

আমরা জেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি দিয়ে থাকি। অভিভাবকেরা শিক্ষা উপবৃত্তির পরিবর্তে প্রতিবন্ধী ভাতাকেই বেশি পছন্দ করেন। কারণ, এর মেয়াদ আজীবন। এ অর্থ দিয়ে তাঁরা শিক্ষা ব্যয় নির্বাহ করেন। এ জন্য আমরা প্রতিবন্ধী ভাতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ডিআইএস নামে আমরা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছি, যেখানে দেশের সব প্রতিবন্ধীর তথ্য আছে। পাশাপাশি কে কোন ধরনের প্রতিবন্ধী, তা–ও এখান থেকে জানা যাবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংখ্যা ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার ১৬১।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের এখনো পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের শ্রুতিলেখক–সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম সফল করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে জাতীয় বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র থেকে এক বছরের বিএসএড কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। আমরা প্রতিবন্ধী শিশুদের বৃত্তিসহ নানা সুবিধা দিলাম, কিন্তু যাঁরা তাকে পাঠদান করাবেন তাঁকে যদি যথাযথ প্রশিক্ষণ না দিই, তাহলে তা কার্যকর হবে না।

গোলাম ফারুক হামিম

বাংলাদেশ প্রোগ্রাম টিম লিড, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে অভিভাবক স্কুলে পাঠাতে চান না, কিন্তু বাড়িভিত্তিক শিক্ষা কর্মসূচির কারণে অভিভাবক ও শিশুর মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস জন্মেছে এবং তাদের বিদ্যালয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অনেক জায়গায় এ ধরনের প্রকল্প বা সুযোগ নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অভিগম্যতার সুযোগ নেই। প্রতিবন্ধী শিশুদের অভিগমন উপযোগী নকশা থাকার পরও স্থানীয় ঠিকাদারের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণের কারণে অনেক ক্ষেত্রে এ সুযোগগুলো থাকে না।

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার পরিসর অনেক বেশি বিস্তৃত। এর পুরোটা এককভাবে সরকারের দায়িত্ব নয়, এখানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। আমাদের অনেক আইন ও নীতিমালা আছে, কিন্তু এর বাস্তবায়ন আমরা সেভাবে দেখছি না। অনেক ক্ষেত্রেই দায়সারা কাজ করলেও জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা অনেক পরামর্শ পাই, কিন্তু বাস্তবায়নের রোডম্যাপ কেউ দেন না। সামনে পঞ্চম প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (পিইডিপি-৫) আসছে। এতে কীভাবে কার্যকরভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে পারি, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।

মো. জাহাঙ্গীর আলম

সিনিয়র কো–অর্ডিনেটর, সিডিডি

প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষায় আনতে আগে আমাদের ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। ওয়াশব্লকের অপ্রতুলতাসহ অবকাঠামোগত কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। প্রবেশগম্যতা একটি গভীর বিষয়, কেবল একটি র‌্যাম্প তৈরি করলেই প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হয় না। অবকাঠামোর পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও অভিগম্যতা প্রয়োজন।

২০০২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে ৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যায়। ২০২১ সালের জরিপে তা বেড়ে হয়েছে ২৩ শতাংশেরও বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে, আমরা আশাবাদী। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মূল ধারার অংশ হিসেবে প্রথমে গ্রহণ করতে হবে। খালি মেনে নিলে হবে না, মনেও নিতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতির চাপে হয়তো আমরা মেনে নিয়েছি, মনে এখনো ঠিকঠাকভাবে নিতে পারছি কি না সে জায়গায় নিজেদের পরখ করে নিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার ও সমাজসেবা শিক্ষা পরিবারের মধ্যে সমন্বয় করা খুবই জরুরি। কারণ, বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও প্রাথমিক শিক্ষার কারিকুলাম অনুসরণ করে।

রনক চন্দ্র মোহন্ত

পরিচালক, এমইআরএলএ, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল

আমাদের মূল কাজ হচ্ছে গবেষণা করা। এ কাজে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তথ্যের অপ্রতুলতা। অনেক ক্ষেত্রে তথ্য থাকে ঠিকই, কিন্তু তা বিস্তারিত নয়। আমাদের প্রকল্প থেকে আমরা যেসব কারিকুলাম তৈরি করেছি, সেখানে প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নের জন্য কী করা যায়, তা ছিল। এসব বিষয় আমরা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতেও অন্তর্ভুক্ত করেছি। শিক্ষকদের ঘাটতি দূর করতে শিক্ষক প্রশিক্ষণে আমরা এই মডিউলগুলো যুক্ত করেছি। আমরা বাংলাদেশের ২০ হাজার স্কুলের তথ্য নিয়ে জিআইএস প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি৷ এভাবে সর্বত্র তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহার করলে উপাত্তের অপ্রতুলতা সমস্যা অনেকাংশেই দূর হবে। এই জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে অনেকেই কাজ করছেন। কিন্তু সবার কাজের উপাত্ত আমরা পাই না। এ ক্ষেত্রে সবাই একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে বড় সফলতা পাওয়া সম্ভব।

রহিমা খাতুন

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তারের দাদি

আমার নাতনি পাঁচ বছর পর্যন্ত হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারত না। এমনকি সে ঘর থেকে বের হতো না। একদিন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তাকে দেখেন। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলে ওর সম্পর্কে জানেন। পরে তিনি বাড়িভিত্তিক শিক্ষার সহায়ককারীর মাধ্যমে সামিয়াকে ব্যায়াম করাতেন, দাঁড় করানোর চেষ্টা করতেন। এভাবে তিনি বেশ কয়েক দিন আমাদের বাড়িতে আসেন। পরে সামিয়াকে স্কুলে ভর্তি করান। শুরুর দিকে তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া লাগলেও এখন সে নিজে নিজেই বিদ্যালয়ে যাওয়া–আসা শিখেছে। নিয়মিত ব্যায়াম করার কারণে সে এখন অনেকটাই সুস্থ। সে লেখাপড়ায়ও ভালো। তার বন্ধুবান্ধব আছে, বেশ আনন্দে থাকে। স্কুলের ম্যাডামরা আমাদেরও অনেক কিছু শিখিয়ে দেন যে কীভাবে ওকে আরও ভালো রাখা যায়। এ পরামর্শগুলো আমরা মেনে চলার কারণেই তার উন্নতি হচ্ছে। এখন সে নিজে নিজে কিছু কাজ করতে পারে।

জয়শ্রী সাহা

প্রধান শিক্ষক, ফারুক আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরসিংদী

শিশু জরিপের মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধী শিশুদের চিহ্নিত করি। বিদ্যালয়ের প্রবেশগম্যতার অনেক আগে থেকেই আমরা তাদের চিহ্নিত করতে পারি। কারণ, আমাদের জরিপে শূন্য থেকে ১৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুরা অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে এই জরিপ পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা কিছু সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছি। অনেক ক্ষেত্রেই শিশুর অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানের প্রতিবন্ধিতা স্বীকার করতে চান না। আমরা উঠান বৈঠক বা মা সমাবেশের মাধ্যমে তাঁদের সচেতন করার চেষ্টা করি। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে অপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলার জন্যও কাউন্সেলিং করি। শুরুতে তারা প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাভাবিকভাবে না নিলেও কাউন্সেলিং করার পর তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রবেশগম্যতার জন্য র‌্যাম্প ও তাদের উপযোগী শৌচাগার থাকে না। এটি নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।

মো. মোতাহার হোসেন

প্রেসিডেন্ট, রাইটস অ্যান্ড অ্যামপাওয়ারমেন্ট

প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে হলে নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে সমন্বয় সবচেয়ে বেশি জরুরি। বেশির ভাগ স্কুলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য র‌্যাম্প, ব্রেইল বই, শ্রবণযন্ত্র, বিশেষ সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবস্থা নেই। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষক বা সহায়ক কর্মীরও অভাব রয়েছে। অনেক পরিবার ও সমাজ এখনো মনে করে, প্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষালাভে অক্ষম বা শিক্ষা তার জন্য প্রয়োজনীয় নয়। ফলে তাদের শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর পক্ষে প্রতিবন্ধী শিশুর বিশেষ শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যায় বহন করা কষ্টসাধ্য। সরকার বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করলেও তা বাস্তবায়নের অভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলো ভূমিকা রাখতে পারে। অভিভাবক, শিক্ষক ও সমাজের অংশীজনদের সচেতন করতে হবে। এতে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

এওয়ানা মার্জিয়া

টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ডিআইডি-আইই, সাইটসেভার্স

বাংলাদেশের সংবিধান, বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন ও জাতীয় শিক্ষানীতি—একীভূত শিক্ষার মূলভিত্তি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনেও একীভূত শিক্ষার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে এবং পিইডিপি-৪ প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তবে প্রবেশগম্য অবকাঠামো, উপযোগী শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়ন সমন্বয় এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ের অভাব প্রকট এবং বিশেষ ও একীভূত শিক্ষার ধারণা সবার কাছে সুস্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সাইটসেভার্স, অন্যান্য বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থা সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। শিখবো সবাই প্রকল্পের মাধ্যমে একীভূত শিক্ষার পাশাপাশি বাড়িভিত্তিক শিক্ষা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। পিইডিপি৫-এ একীভূত শিক্ষাকে অগ্রাধিকার, বাড়িভিত্তিক শিক্ষা, গণসচেতনতা, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রম সমন্বয়, বাজেট ও সমন্বয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

মৃণাল কান্তি দাস

কনসোর্টিয়াম প্রোজেক্ট অ্যান্ড এমইএল ম্যানেজার, ডিআইডি, সাইটসেভার্স

বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা’ নামে বিশেষ একটি তহবিলে প্রতিবছরই বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ তহবিল কীভাবে একীভূত শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে বা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্যবহার করা যায়, সে জন্য আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি, উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করি। শুরুতে একটু জটিলতা থাকলেও আলোচনার মাধ্যমে একটা পর্যায়ে এ তহবিল প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার কাজে ব্যবহার করার পথ সুগম হয়। আমরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সভায় আমাদের শিখনগুলো আলোচনা করতাম। দ্রুতই এ বিষয়গুলো সব স্কুলে বাস্তবায়িত হওয়া শুরু করে। ফলাফলে দেখা যায় ৪৫টি বিদ্যালয় লক্ষ্য হলেও ২ হাজার ৪৪৪টি বিদ্যালয় তাদের তহবিলের একটা অংশ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্যবহার শুরু করেছে। এ বিষয়গুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে তা প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের পথ সুগম হবে।

এ ছাড়া গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন সামিয়া আক্তার, শিক্ষার্থী, ভেলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরসিংদী; মো. মনিরুজ্জামান, ফাইন্যান্স কো–অর্ডিনেটর, সাইটসেভার্স; মো. মনিরুজ্জামান, জেলা সমন্বয়কারী, ডিআইডি, সাইটসেভার্স; শাহনাজ, রিহ্যাবিলিটেশন অফিসার, সিডিডি, নরসিংদী। গোলটেবিল বৈঠকটি আয়োজনে সার্বিক সমন্বয় করেন খোন্দকার সোহেল রানা, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন কো–অর্ডিনেটর, সাইটসেভার্স। সঞ্চালনা করেন ফিরোজ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো।

সুপারিশ:

  • প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের বিচ্ছিন্ন উপায় বাদ দিয়ে সুনির্দিষ্ট একক উপায় নিশ্চিত করা, যেন তথ্যের সুস্পষ্টতা ও সামঞ্জস্য বজায় থাকে এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য এ তথ্য সহজলভ্য হয়, যা নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।

  • সব শিক্ষার্থীর প্রবেশগম্য অবকাঠামো নিশ্চিত করা এবং একীভূত শিক্ষা সম্পর্কে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের পরিবর্তনে ব্যাপক প্রচারণার কৌশল গ্রহণ করা।

  • শিক্ষকদের জন্য একীভূত শিক্ষায় পাঠদানের আধুনিক ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং পাঠদানের উপযোগী উপকরণ সরবরাহ এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা।

  • বাড়িভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমটি মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় সম্পৃক্ত ও পিইডিপি ৫-এ অন্তর্ভুক্ত করতে নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছা এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা।

  • একীভূত শিক্ষায়, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ও একক শিক্ষাকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

  • ‘শিক্ষক বাতায়ন’ অনলাইন পোর্টালে একীভূত শিক্ষার বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এটুআই–এর উদ্যোগের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব গড়ে তোলা।

  • সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরগুলো, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি কার্যকর করা, যা একীভূত শিক্ষায় প্রকল্পগুলোর উদ্যোগ এবং কার্যক্রমকে জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সমন্বিত করবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, বিশেষ করে পিইডিপি ৫ ডিজাইনে সহায়তা করবে।