নারীর এগিয়ে চলা: বাধা ও উত্তরণের উপায়

নারীপক্ষ ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘নারীর এগিয়ে চলা: বাধা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ৩ ডিসেম্বর ২০২৪। আলোচকদের বক্তব্যের সারমর্ম এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

নারীপক্ষ ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘নারীর এগিয়ে চলা: বাধা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো কার্যালয়ছবি: প্রথম আলো

প্যানেল আলোচক

শিরীন হক

প্রধান, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন

 

সৈয়দ জামিল আহমেদ

মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি

 

সালমা আলী

প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মহিলা , আইনজীবী সমিতি

 

 

গীতা দাস

সভানেত্রী, নারীপক্ষ

 

তাসনীম আজীম

নির্বাহী সদস্য, নারীপক্ষ

 

হালিদা হানুম আখতার

সদস্য, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন

 

স্নিগ্ধা রেজওয়ানা

সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

শিরীন আক্তার

চেয়ারম্যান, উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন

 

তাসাফি হোসাইন

ম্যানেজিং পার্টনার, বহ্নিশিখা

 

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

শিরীন হক

প্রধান, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন

‘নারীর এগিয়ে চলা’ প্রকল্প তরুণ নারীদের মধ্যে নেতৃত্ব গড়ে তুলতে কাজ করছে। উপস্থাপনায় তরুণ নারীদের মধ্যে নেতৃত্বগুণ তৈরি হওয়ার আলামতও দেখা গেছে।

সাম্প্রতিক আন্দোলন-সংগ্রামে তরুণ প্রজন্মের নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। আমরা ভেবেছিলাম, এবার নারীরা নেতৃত্বের জায়গায় আসবেন। কিন্তু সরকার গঠনে মাত্র অল্প কিছু নারীকে নেওয়া হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা এসব নারীকে কেন পেছনে ঠেলে দেওয়া হলো? নারীরা অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে নারীদের প্রতিক্রিয়া ও ভাবনা জানাও দরকার।

নারীপক্ষ ৪০ বছরের বেশি সময় নারীর অধিকার আদায়ে লড়াই করছে। কিন্তু এ লড়াইয়ে আমরা খুব বেশি এগোতে পারিনি। কারণ, কিছু বদ্ধমূল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারণা আমাদের মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে। এ ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।

বেশির ভাগ সুপারিশে সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কোন সচেতনতা? বদ্ধমূল ধারণা পরিবর্তনে সচেতনতা, নাকি নারীর অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা? জাগরণ ও পরিবর্তনের জন্য উভয় রকম সচেতনতাই জরুরি।

বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। বাল্যবিবাহ নিয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রাধান্য দিয়ে কাজ হয়েছে। এরপরও বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বহুমুখী উদ্যোগ প্রয়োজন। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কী সুপারিশ করব, তা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

নারীদের ড্রাইভিংয়ের মতো পেশার প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, বৈরী পরিবেশে কীভাবে টিকে থাকতে হয়, তা–ও শেখাতে হবে।

নারীপক্ষ নারীকে মানুষ চেনার, জানার ও সম্মান করার একটা স্লোগান দেয়। নারীকে যতক্ষণ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র মানুষ হিসেবে চিন্তা করবে না, ততক্ষণ ইতিবাচক মানসিক পরিবর্তনগুলো আসবে না।

নারীপক্ষের মতে, রাষ্ট্র হবে ইহজাগতিক, সমাজ হবে ধর্মনিরপেক্ষ ও ব্যক্তি হবে অসাম্প্রদায়িক। ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

ধর্ষণ–পরবর্তী মেডিকেল প্রক্রিয়া নিয়ে নারীপক্ষ অনেক কাজ করেছে। অবশেষে ২০০২ সালে সরকার এ পরীক্ষা উপজেলা পর্যায়ে করার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এখন পর্যন্ত তা ঠিকভাবে কার্যকর হয়নি।

নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে নারী সংগঠনগুলো পরিবর্তনের জন্য অনেক প্রস্তাব রেখেছে। এসব প্রস্তাবের অনেকগুলো সরকার মেনেও নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের জায়গাটা একেবারে শূন্যের কোঠায়। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন এ ভালো প্রস্তাবগুলো উজ্জীবিত করার বিবেচনা করছে। বাস্তবায়নের জায়গায়ও নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন কাজ করবে। বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে ভাগ করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।

গীতা দাস

সভানেত্রী, নারীপক্ষ

নারীপক্ষের প্রিয় স্লোগান ‘আমি নারী সারা পৃথিবী আমার যুদ্ধক্ষেত্র’। এ স্লোগান অনেক আগে নির্ধারণ করা হলেও এখনো সারা পৃথিবী নারীর জন্য যুদ্ধক্ষেত্র। পৃথিবীকে নারীর উপযোগী করতেই নারীপক্ষের পথচলা।

নারীপক্ষ ১৯৮৩ সাল থেকে নারীর অবস্থা, অবস্থান ও অধিকার নিশ্চিত এবং নারীর প্রতি সব বৈষম্যের অবসানে কাজ করছে। আমাদের স্বপ্ন নারী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে অধিকারসম্পন্ন নাগরিক ও মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

আমাদের আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশে নারী অন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের অধিকারসম্পন্ন নাগরিক ও মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।

নারীপক্ষ সদস্যভিত্তিক নারী সংগঠন। আমরা গতানুগতিক কাজ করি না, জীবনভিত্তিক অভিজ্ঞতার আলোকে কাজ করি। আমাদের কাজের অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে। এর মধ্যে সহিংসতামুক্ত নারীজীবন নিশ্চিত করা আমাদের প্রথম ক্ষেত্র। পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। এ তিনটি মূল থিম নিয়ে আমরা কাজ করি। এ ছাড়া ভিন্নধর্মী কিছু কার্যক্রমও আমাদের রয়েছে।

দেশের সমাজে উপেক্ষিত বীরাঙ্গনা নারীদের নিয়েও আমরা কাজ করি। এ কর্মসূচির নাম ‘৭১ যে নারীদের আমরা ভুলেছি’। আমাদের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নে এ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়। এসব নারীর অনেকেই বয়োবৃদ্ধ। তাঁদের স্বাস্থ্যসমস্যাও রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র আমাদের সহায়তা করে থাকে।

যুদ্ধসন্তানদের কথা সমাজে বলা হয় না। আমরা তদের নিয়ে কাজ করি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়েও আমাদের নানা কাজ রয়েছে৷

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারী স্বাস্থ্যে কী ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়ে নারীপক্ষ গবেষণা করছে। এ সবকিছু মিলিয়ে আমাদের নারী এগিয়ে চলা প্রকল্প।

স্বেচ্ছাশ্রম ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সদস্যেরা নিয়মিত চাঁদা ও অনুদান দেন। যা দিয়ে সব কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন। সে জন্য বাধ্য হয়েই আমরা দাতা সংস্থার সহায়তা নিই। বিভিন্ন সংগঠনের জন্য পরামর্শ ও জেন্ডার নীতিমালা প্রণয়ন করেও নারীপক্ষ কিছু আয় করে। নারীপক্ষের একজন সদস্য জীবনে কেবল একবারই সভানেত্রী হতে পারেন। তৃণমূল পর্যায়সহ সারা দেশে আমাদের ‘দুর্বার’ নামে নারী নেটওয়ার্ক রয়েছে। এটি নারীপক্ষের শক্তির জায়গা। গবেষণা, প্রশিক্ষণ, পথনাটক, বিক্ষোভ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কৌশল নিয়ে নারী অধিকার বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।

বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নারীপক্ষ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে লবিং করে। নারী স্বাস্থ৵ ও সহিংসতার ঘটনা নিয়ে কাজ করা থানা, হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট  প্রতিষ্ঠানের তদারক করে নারীপক্ষ। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও আমরা প্রতিবাদ করি।

সৈয়দ জামিল আহমেদ

মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি

আমার শরীরটা পুরুষের। আমি কখনো গর্ভধারণ করতে পারব না। তাই নারীর সমস্যাগুলো আমার পক্ষে শতভাগ বোঝা সম্ভব না। ফলে আমার কথার অনেক অর্থ ও ব্যাখ্যা হতে পারে।

লিঙ্গ (সেক্স) ও সামাজিক লিঙ্গ (জেন্ডার) পরিচয়ের পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। আলোচনায় বারবার নারী শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে নারী বলা হলে বড় ধরনের গন্ডগোল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন উঠেছে, বাল্যবিবাহের কথা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে আইনগতসহ নানা সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এসব কিশোরীর দায়িত্ব না নিয়ে শুধু বাল্যবিবাহ কমছে না বললে

সমস্যার সমাধান হবে না। বাবার একটা সামাজিক দায়িত্ব আছে, ভালোবাসা আছে। তিনি কোনো রকম অপদস্থ হওয়ার আগে দায়মুক্ত হওয়ার চিন্তা করেন। অভিভাবকদের এসব চিন্তা বের করতে হলে অবশ্যই ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা রাখতে হবে।

আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর শিল্পকলা একাডেমির কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সমস্যাগুলো

জানতে চেয়েছি। এর মধ্যে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি এসেছে। সেদিনই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের ফাইল খোলা হয়। এখানে তিনজন নারী সদস্য যুক্ত রয়েছেন।

নারীর বিরুদ্ধে হেট স্পিচ (ঘৃণামূলক বক্তব্য) দেওয়ার বিষয়টি এসেছে। এটি শুধু আইনের মাধ্যমে বন্ধ করা যাবে না। কারণ, এটি একটি সাংস্কৃতিক লড়াইও বটে। এ সাংস্কৃতিক লড়াই সব সময় সব জায়গায়ই বিদ্যমান।

আমি মনে করি শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন না আনলে সার্বিক পরিবর্তন আসবে না। শিক্ষা মানে পাসের হার বাড়ানো না, শিক্ষা মানে প্রশ্ন করতে শেখানো। এ ছাড়া পরিবারে শিশুকে বড় করার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবারে গন্ডগোল থাকলে আইন বা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা কঠিন।

জীবন অনিত্য ও পরিবর্তন অনিবার্য। আমি চাই বা না চাই। আমাদের নতুন প্রজন্মের কর্মীদের এ বিষয়টি মাথায় রেখে সাহস না হারিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

নারীদের বিরুদ্ধে এত আক্রমণ, বিদ্বেষ ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের পরও নারীরা দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে চলেছে। তার মানে নারীদের শক্তি আছে। শক্তি আছে বলেই পাল্টা ঘৃণামূলক বক্তব্য আসছে। 

নারীদের ক্ষমতায়নের কথা এসেছে। ক্ষমতা ভাসমান। ক্ষমতা স্থিত নয়। এটি সর্বদা পরিবর্তনশীল। এই প্রক্রিয়াটি একটি চলমান সংগ্রামের প্রক্রিয়া। এই কথাটা মনে রাখতে হবে এবং সেইভাবে এগোতে হবে।

ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও এসব বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে এ ধরনের সংলাপের আয়োজন করা হবে। শিল্পকলা একাডেমির সাপ্তাহিক বাহাসে দুজন ভিন্নমতের স্কলার থাকবেন। তাঁদের দ্বান্দ্বিক আলোচনা থেকে দর্শক তাঁর মতো করে পথ বেছে নেবেন।

সবক্ষেত্রে আইন করে পরিবর্তন আনা কঠিন। এটা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে হতে হবে। পরিবার, শিক্ষাক্ষেত্র, নাটক, গান ইত্যাদি জায়গায় প্রশ্ন উত্থাপনের মাধ্যমেই পরিবর্তন আনার পথ তৈরি হবে।

সালমা আলী

প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি

ক্ষমতার চাবিকাঠি পুরুষের হাতে। এত দিনে নারী শুধু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এরশাদের পতনের পর ভোটাধিকার নিয়ে কাজ আরম্ভ করেছিলাম। তখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারীরা ভোট দিতে পারতেন না৷ হাইকোর্টে মামলা নারীদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হয়েছে।

নারীদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়েছি। কিন্তু এখনো অনেক জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে।

২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন হয়েছে। এটি একটি প্রতিরোধমূলক আইন। বিদ্যমান আইন প্রয়োগের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে অঙ্গীকার প্রয়োজন। এ বিষয়ে কাগজে–কলমে অনেক পরিকল্পনা ও প্রকল্প থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর নয়।

বাল্যবিবাহ কমাতে অনেক প্রকল্প রয়েছে। এনজিওগুলো এ নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছে। এ কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে।  অনেক নারী মনে করেন বিয়ের পর তিনি ভালো পরিবেশ পাবেন, এ ভয়াবহ ধারণা থেকে তাদের বের করে আনতে হবে।

নারীদলের সদস্যরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় তুলে এনেছেন। এসব নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর নিরাপত্তায় আমরা আলাদা আইন চাই। মহিলা আইনজীবী ও ল কমিশনের সঙ্গে বসে এ আইনের খসড়া করা হয়েছে। এ সময় আইনটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর করা জরুরি। এ আইন হলে বিচারকাজ ও পরবর্তী সময়ে নারীর নিরাপত্তাবলয় নিশ্চিত করা যাবে।

‘ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার’ সেবায় বাংলাদেশ বেশ ভালো অগ্রগতি করেছে। এটি সব জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এসব কার্যক্রমে যথেষ্ট বাজেট বরাদ্দ নেই।

ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো ‘ফার্স্ট ট্রাক কোর্টের’ মাধ্যমে দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করা দরকার। এতে ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে স্বস্তি আসবে।

এসব ক্ষেত্রে সমন্বয় ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ঘাটতি রয়েছে। নারীদের এগিয়ে নিতে বিশ্বাস ও প্রয়োগযোগ্য পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ।

মধ্যপ্রাচ্যে পাচারের শিকার নারী কর্মীরা লাশ হয়ে ফিরছেন। আমরা এসব দেশকে কোনো জবাবদিহির আওতায় আনতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা দরকার। এ ছাড়া আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে জবাবদিহি ও সহায়তাগুলো নিশ্চিত করতে হবে।

নারীবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে আইনজীবী, পুলিশ, পাবলিক প্রসিকিউটর ও বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রশিক্ষণ জরুরি।

হালিদা হানুম আখতার

সদস্য, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন

বাল্যবিবাহ নারীর জীবনের জন্য একটি বিরাট হুমকি। ১৫ থেকে ১৯ বছরের ৪ জন কিশোরীর মধ্যে ১ জন গর্ভধারণ করছে। ১৭ শতাংশ কিশোরীর ১৫ বছরের কম বয়সে বিয়ে হচ্ছে। ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের মধ্যে ১৫ জনের ১ জন মা হচ্ছে। এসব গর্ভধারণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ৪৩ শতাংশ কিশোরী জীবনসঙ্গী দ্বারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এর বাইরেও কিশোরীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এখনো দেশে মাতৃমৃত্যুর হার অনেক বেশি। গর্ভসংক্রান্ত জটিলতায় এখনো প্রতিদিন ১৪ জন নারী মারা যান।

২০১৬ সালের মাতৃমৃত্যু জরিপ অনুযায়ী, গর্ভসংক্রান্ত জটিলতার ১৩ শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশ গর্ভপাত করতে গিয়ে মারা যেতেন। সেটা বেড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ গর্ভপাতের ক্ষেত্রে নারীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০২৩ অনুযায়ী, ৪৩ শতাংশ নারী বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করছেন। আর ৫৩ শতাংশ নারী এখনো বাড়িতে সন্তান প্রসব করেন। এই ৫৩ শতাংশ ডেলিভারির মাত্র ৩ শতাংশ দক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। অদক্ষ ধাত্রী দিয়ে ডেলিভারি করালে মাতৃমৃত্যু ও জটিলতা বাড়ে। আবার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হওয়া ডেলিভারির মধ্যে সিজারিয়ান সেকশনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নারীর সিজারিয়ান সেকশন লাগে। সেখানে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৮০ শতাংশের বেশি সিজারিয়ান সেকশন হচ্ছে। তাই অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন বন্ধে কাজ করতে হবে।

নারীরা যেন ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এইচপিভি টিকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জরায়ু ক্যানসার কমিয়ে আনতে হবে। দায়িত্ব ও জবাবদিহির ওপর জোর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

তাসনীম আজীম

নির্বাহী সদস্য, নারীপক্ষ

১৯৮৭ সাল থেকে নারীপক্ষ নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে কাজ করে। সে সময় মাঠপর্যায়ের একটি ঘটনা বিশ্লেষণ করে তা আন্দোলন হিসেবে এগিয়ে নিই। এ আন্দোলনের স্লোগান ছিল ‘শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার’। এ স্লোগান এখনো প্রযোজ্য। কারণ, নারীর স্বাস্থ্য ও শরীরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখনো তার হাতে নেই।

নারীপক্ষ মাঠপর্যায় থেকে নারীর কণ্ঠস্বর তুলে আনতে পেরেছে। এ জন্য ২০০৩ সালে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও জেলায় নারী দল প্রতিষ্ঠা করেছি। নারীস্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে কাজ করতে উৎসাহীদের নিয়েই দল করা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করা হয়েছে। স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে তাঁদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে কাজ করা হয়েছে। এভাবে সম্মিলিতভাবে নারীর কণ্ঠস্বর ও মতামত নিয়ে নারীপক্ষ এগিয়েছে।

নারীপক্ষের বিভিন্ন অগ্রগতির উদাহরণ থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। নতুন ‘তরুণ নারী দল’ ‘নারী দলের’ সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে। এ জোটটি রাখতে হবে।

নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে; কিন্তু অনেক জায়গায় এ ক্ষেত্রে আমরা এগিয়েছি। এখন এ–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করতে পারছি। আশির দশকে যা বেশ কঠিন ছিল।এসব ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তিত সময়ে পরিবর্তিত চাহিদাও তৈরি হয়েছে।

জরায়ু ক্যানসারের এইচপিভি টিকা নিয়ে কয়েকজন নারী অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার। বৈশ্বিকভাবে এ টিকাটি খুবই নিরাপদ কার্যকর দেখা গেছে। এ টিকা বিশ্বব্যাপী জরায়ু ক্যানসার কমিয়েছে।

ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়ন্ত্রণের (এমআর) ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এই এমআর নিরাপদ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে অনেক কাজ হচ্ছে। এখানে আমাদের ইতিবাচক অংশগ্রহণ থাকা জরুরি। আমরা বাংলাদেশকে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রগতির উদাহরণ হিসেবে দেখাতে চাই।

স্নিগ্ধা রেজওয়ানা

সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

নারীর যুদ্ধটা কোনো বিশেষ রাজনীতি বা দেশের নয়। তাই নারীর নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানের ভার কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে দেওয়ার অর্থই আমাদের পরাজয় মেনে নেওয়া। তাই এ যুদ্ধের ভার কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে দিতে আগ্রহী নই।

আগে বাজারে নারীরা সবজি বিক্রি করত। এখন তাদের দেখা যায় না। নারীদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু হয়েছে। নারীরা এ ঋণ নিলেও পুরুষেরাই তা ব্যবহার করছেন। তাহলে অর্থায়ন ও ক্ষমতায়ন কার হচ্ছে?

নারী বলে আমরা তাদের নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিচ্ছি। আমরা শুধু প্রজননস্বাস্থ্যের ওপর জোর দিচ্ছি। অন্য জায়গাগুলোতেও জোর দেওয়া জরুরি।

এখন তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ। তাই নারীদের এসব জানা দরকার। যুবকল্যাণের গাড়ি, এসিসহ সব মেকানিক্যাল কোর্স পুরুষদের জন্য। তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৭০ থেকে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। তৈরি পোশাক খাতে শুধু সুইং বিভাগে নারীদের রাখা হয়। সুপারভাইজার পদে কোনো নারী নেই।

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কেন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকবে না?

শুধু সন্তানের দেখভাল করার জন্য অনেক নারী কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে চলে যান। দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু হলে সেখানেও অনেক নারীর কর্মসংস্থান হবে। নীতিগত এ কার্যক্রম কেন হচ্ছে না, তা জানতে চাই।

নারীর প্রতি ঘৃণামূলক বক্তব্য আইনের আওতাভুক্ত করা প্রয়োজন। সংসদে ডামি নারী আসনের কোনো প্রয়োজন নেই। নির্বাচন করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০ শতাংশ নারী আসন দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে আসবেন। সেটাই নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন।

নাটক ও সিনেমায় নারীর প্রতি সহিংসতাকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না, এ আইন থাকা জরুরি।

২০১৯ সালে বিভিন্ন মহলের চাপে শিশুদের জন্য করা ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ বন্ধ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

শিরীন আক্তার

চেয়ারম্যান, উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন

প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। জাতিসংঘ এবারের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ, বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ’।

নারীপক্ষের অগ্রযাত্রার পোস্টার ছিল, ‘আমি নারী, সারা পৃথিবী আমার যুদ্ধক্ষেত্র’। প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সারা পৃথিবী আরও ভয়ংকর ও চরম যুদ্ধক্ষেত্র। ২০০৭ সালে উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এ যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে চলার যাত্রা শুরু করেছি। 

উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্ম। সহিংসতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারী প্রতিবন্ধকতাগুলো সহিংসতার জন্য সুবিধাজনক জায়গা তৈরি করে। ফলে প্রতিবন্ধী নারীরা প্রতিনিয়তই সহিংসতার শিকার হন। এ ক্ষেত্রে সমমনা নারী সংগঠন ও কিছু ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা পাই। কিন্তু প্রতিবন্ধী নারীর প্রতি সহিংসতার কোনো বিচার হয় না। এ ক্ষেত্রে যথাযত ব্যবস্থা ও সচেতনতার অভাব রয়েছে।

প্রতিবন্ধী নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি নেই বললেই চলে। তাঁদের শুধু ভাতা কার্যক্রমে সীমিত রাখা হয়। প্রতিবব্ধী নারীরা স্বাস্থ্যসেবা পান না। কারণ, প্রতিবন্ধী নারীদের মানুষ বা নাগরিক মনে করাই সবার জন্য অনেক কঠিন।

প্রতিবন্ধী নারীদের সব ক্ষেত্রেই চরম অবমূল্যায়ন করা হয়। এ–সংক্রান্ত গবেষণাগুলোয় প্রতিবন্ধী নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। দেশে আজ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী মানুষদের কোনো সঠিক তথ্যভান্ডার তৈরি হয়নি।

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য যথাযথ অবকাঠামো ও তথ্যগত প্রবেশাধিকার নেই। যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। এতে সমাজ ও রাষ্ট্র ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

তাসাফি হোসাইন

ম্যানেজিং পার্টনার, বহ্নিশিখা

নারীর প্রতি সহিংসতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে নারীদের লক্ষ্য করে সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। নারীদের কীভাবে চলা উচিত, তা নিয়ে কিছু মোরাল পুলিশিং হয়েছে। নারীরা কী ধরনের কাপড় পরছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তা নিয়ে মন্তব্য করা বেড়েছে। তা ছাড়া জেন্ডার ডাইভার্স গ্রুপের সদস্যরাও এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন।

রূপান্তরিত নারী (ট্রান্সওমেন) ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর ওপর সরাসরি আক্রমণ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। টাঙ্গাইল, দিনাজপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় রূপান্তরিত নারী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জমিতে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

টাঙ্গাইলে গত অক্টোবর মাসে পূজা চলাকালে একজন রূপান্তরিত নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত বা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

পরিবারে জেন্ডার ডাইভার্সড সন্তান আছে, এমন বেশ কিছু জায়গায় কমিউনিটির সঙ্গে এসব পরিবারের একধরনের বোঝাপড়া হয়েছিল। এখন এসব জায়গায় এ পরিবারগুলো নতুন করে হয়রানির শিকার হচ্ছে। ফলে এসব জায়গায় আত্মহত্যার চেষ্টা করার ঘটনাও ঘটেছে।

দেশে এখন পর্যন্ত জেন্ডার সংবেদন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়নি। লিঙ্গবৈচিত্র্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে চিন্তা করলে স্বাস্থ্যসেবা খাত আরও বেশি পিছিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংবেদনশীলতা নেই। এমনকি লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন নেই বলে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বলা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বৈষম্য রয়েছে।

সুপারিশ

* বাল্যবিবাহ রোধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

* প্রতিবন্ধী নারীদের পূর্ণাঙ্গ তথ্যভান্ডার করতে হবে।

* কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন।

* নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার।

* নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

* নারী, কিশোরী, প্রতিবন্ধীদের ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি।

* স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে এ–সংশ্লিষ্ট গবেষণায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।