আল্লাহর অস্তিত্ব এবং আমাদের চিন্তা করার সামর্থ্য
এই বিশ্ব এবং এই মহাকাশ, এ সবকিছু কোত্থেকে এল? এর আগেই–বা কী ছিল? মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, প্রথমে ছিলেন আল্লাহ, আর কিছুই ছিল না। না কোনো পানি, আরশ, আকাশ কোনো কিছুই ছিল না।
সুনানে তিরিমিজিতে এসেছে, এক সাহাবি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে প্রশ্ন করলেন, ‘আল্লাহ শুরুতে কোথায় ছিলেন?’ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জবাব দিলেন, ‘তিনি সব সময়ই ছিলেন, তাঁর ওপর এবং নিচে কিছুই ছিল না, এমনকি বাতাসও না।’
আমরা যখন আল্লাহকে চিন্তা করি, তখন আমরা আমাদের মানব মস্তিষ্ক দিয়ে ভাবি। যেমন এক হাদিসে আছে, আল্লাহ রাতের শেষ অংশে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন। অনেকে এটা শুনে ভাবতে পারেন, আল্লাহ হয়তো বাস্তবেই নিচে নেমে আসছেন। এভাবেই আমরা আল্লাহকে মানুষের চিন্তা দিয়ে মাপতে থাকি। আবার অনেক সময় আরাফার ময়দানে দোয়া করার মুহূর্তে প্রশ্ন আসতে পারে, আল্লাহ কি এত মানুষের ভিড়ে আমার কথা শুনতে পাবেন? এগুলো সবই আমাদের মানবিক চিন্তা। এভাবেই আমরা আল্লাহকে মানুষের চিন্তা দিয়ে মাপতে থাকি।
এ বিষয়ে ইসলামের বিজ্ঞজনেরা একটি নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর কথা ভাববে এবং তখন তোমার মনে যা কিছুই আসুক, যেকোনো ছবি কিংবা কোনো অবয়ব, তুমি ধরে নেবে, যা ভাবছ আল্লাহ তার চেয়ে ভিন্ন।’ আল্লাহর আকৃতি নিয়ে চিন্তা করার সামর্থ্য আমাদের মস্তিষ্কের নেই।
আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সুন্দর একটি দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘ও আল্লাহ, আপনিই হলেন প্রথম, আপনার আগে কিছু ছিল না। আপনিই সর্বশেষ, আপনার পর আর কিছু নেই। আপনিই প্রকাশ্য, এর চেয়ে প্রকাশ্য আর কিছু নেই। আবার আপনিই লুকায়িত, আপনার চেয়ে গোপন কিছু নেই।’
সুরা হাদিদের আয়াতটিও একই কথা বলছে, ‘তিনি শুরু ও শেষ, তিনিই প্রকাশিত এবং তিনিই লুকায়িত। তিনি সব বিষয়ে জ্ঞান রাখেন।’
বিজ্ঞজনেরা বলেন, আল্লাহ একই সঙ্গে গোপন ও প্রকাশ্য হলেও তিনি কিন্তু তাঁর সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন নন। যেমন দুনিয়ার রাজা-বাদশারা শাসন করেন ঠিকই, কিন্ত তাঁরা প্রজাদের বিষয়ে কমই অবগত থাকেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন, ‘আকাশ ও পৃথিবীর কোনো কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। তিনি সব বিষয়ে পরিপূর্ণ অবগত।’
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আল্লাহকে তোমরা তাঁর সেরা নাম তথা ইসমে আজম দিয়ে ডাকো।’ তিনি বলেছেন, এ নামটি সুরা বাকারা, সুরা আল-ইমরান এবং সুরা ত্বহাতে রয়েছে। অনেকে মনে করেন এই নামটি হলো ‘আল হাইইউ ওয়াল কাইয়ুম’ অর্থ—চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।
এ নামটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হিসেবে পণ্ডিতেরা বলেন, এই নাম অনুযায়ী, তিনি সব সময় ছিলেন এবং থাকবেন। ‘কাইয়ুম’ অর্থ—যিনি নিজেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিজেই নিজের সব প্রয়োজন পূরণ করেন। উল্লেখ্য, তিনটি সুরাতেই এই নাম পাওয়া যায়।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ