ধৈর্যের গুরুত্বের কথা ইসলাম ধর্মে বারবার বলা হয়েছে
সবর বা ধৈর্যের গুরুত্বের কথা ইসলাম ধর্মে বারবার বলা হয়েছে। তাফসিরে বায়জাবি অনুসারে ধৈর্য তিন প্রকার: ১. ‘সবর আনিল মাসিয়াত’, অর্থাৎ অন্যায়-অপরাধ থেকে বিরত থাকা। ২. ‘সবর আলাত তআত’, অর্থাৎ ইবাদতে আল্লাহর আনুগত্য ও সৎ কর্মে কষ্ট স্বীকার করা। ৩. ‘সবর আলাল মুসিবাত’, অর্থাৎ বিপদে অধীর না হওয়া।
কোনো লোক যদি ওপরের পথ ধরে ধৈর্য অবলম্বন করে, তবে তার জীবনে পূর্ণতা ও সফলতা আসবে। এই সবরে বা ধৈর্যে কিছু মূল্যবান উপাদান আছে। প্রথমত, অন্যায়-অপরাধ ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকা। সব রকমের অকল্যাণ ও গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটি অন্যতম উপায়। দ্বিতীয়ত, ইবাদত ও সৎ কাজ করা। ইবাদত ও সৎ কাজ পবিত্রতা এনে দেয়। তৃতীয়ত, প্রতিকূলতার সময় ধৈর্য ধরে থাকা। সবরে কামিল বা পরিপূর্ণ ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে।
যেকোনো অযাচিত পরিবেশে ও অনাহূত পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ আছে যেমন হজরত মুসা (আ.)–এর জীবনীতে। তিনি নদীর পারে এসে নদী পারাপারের উপায় না দেখে প্রবল বিপদের মুখোমুখি হয়েও ধৈর্য হারাননি। বরং উম্মতকে সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘কালা কাল্লা! ইন্না মায়িয়া রব্বি ছাইয়াহদিন।’ অর্থাৎ, ‘কিছুতেই না। আমার সঙ্গে আছেন আমার প্রতিপালক; তিনি আমাদের পথ দেখাবেন।’ (সুরা শোআরা, আয়াত: ৬২)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পথে সাওর পর্বতের গুহায় আত্মগোপন করে থাকার সময় তাঁর সঙ্গী হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.)–কে এভাবেই আশ্বস্ত করেছিলেন। কোরআন শরিফে তার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা তাকে (রাসুলকে) সাহায্য না কর, (তবে স্মরণ করো) আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন, যখন অবিশ্বাসীরা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সে ছিল দুজনের একজন। অপরজন আবু বকর (রা.), যখন তারা গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, মন খারাপ কোরো না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন। তারপর আল্লাহ তার ওপর তাঁর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন। আর এমন এক সৈন্যবাহিনী দিয়ে তিনি তাকে শক্তিশালী করলেন, যা তোমরা দেখনি আর তিনি অবিশ্বাসীদের কথা তুচ্ছ করলেন। আল্লাহর কথাই সবার ওপরে। আর আল্লাহ তো শক্তিমান তত্ত্বজ্ঞানী।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৪০)
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)–র কাছ থেকে একটি হাদিস জানা যায়। হজরত আবু তালহা (রা.)–এর এক ছেলে একবার অসুস্থ হয়ে পড়ল। আবু তালহা (রা.) বাইরে গেলেন। সে সময় ছেলেটি মারা যায়। তিনি ফিরে এসে জানতে চাইলেন, ছেলেটি কী করছে?
তাঁর স্ত্রী হজরত উম্মে সুলায়ম (রা.) বললেন, সে আগের চাইতে শান্ত। এর পর তাঁকে রাতের খাবার দিলেন। তিনি খাদ্য গ্রহণের পর উম্মে সুলায়মের সঙ্গ নিলেন। এর পর উম্মে সুলায়ম বললেন, ছেলেকে দাফন করে এসো।
সকাল হলে আবু তালহা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে এসে ঘটনাটি বললেন। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, গত রাতে তুমি কি স্ত্রীর সঙ্গে ছিলে?
তিনি বললেন, হ্যাঁ!
নবী (সা.) বললেন, ‘ইয়া আল্লাহ! তাদের জন্য তুমি বরকত দান করো।’
এরপর উম্মে সুলায়ম (রা.) একটি সন্তান প্রসব করলেন।
আবু তালহা (রা.) সেই শিশুটিকে নিয়ে নবী করিম (সা.)–এর কাছে গেলেন। যাওয়ার সময় উম্মে সুলায়ম সঙ্গে কিছু খেজুর দিয়ে দিয়েছিলেন।
নবী (সা.) শিশুটিকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ওর সঙ্গে কি কিছু আছে?
তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। খেজুর আছে।
রাসুল (সা.) খেজুর চিবিয়ে চিবানো খেজুর শিশুটির মুখে দিলেন। এর পর শিশুটির নাম রাখলেন আবদুল্লাহ। (বুখারি, হাদিস: ৫,৪৭০)