জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে যে ভুল অনেকে করে থাকেন
পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করার চেস্টা করতে হবে। জামাতে নামাজ আদায় করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহ বলেন, রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জামাতে নামাজ পড়লে একাকী নামাজের তুলনায় সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। (বুখারি, হাদিস: ৬১৯)
জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে গিয়ে সাধারণত যেসব ভুল অনেকে করে থাকেন।
দৌড়ে এসে জামাতে শরিক হওয়া
জামাতের সওয়াব অর্জন করতে গিয়ে অনেকে শরিয়তের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফেলেন। তারা দৌড়ে এসে জামাতে শরিক হন। দৌড়ে এসে নামাজে শরিক হলে কেউ প্রথম তাকবির বা দুই–এক রাকাত বেশি পাবে, কিন্তু তখন সে স্থিরচিত্তে নামাজ পড়তে পারবে না। পুরো নামাজ জুড়েই অস্থিরতা থেকে যাবে। কেউ জোরে হেঁটে এসে ক্লান্ত না হয়ে নামাজ পড়তে পারলে অবশ্য কোনো সমস্যা নেই।
হাদিসে আছে, ‘নামাজের একামত শুনলে তোমরা ধীর ও শান্তভাবে মসজিদে বা জামাতে যাও। তাড়াহুড়া কোরো না। ইমামের সঙ্গে নামাজের যতটুকু অংশ পাও ততটুকু পড়ে নাও। আর যে অংশটুকু ছুটে যায়, তা একা পূরণ করে নাও। (বুখারি, হাদিস: ৬৩৬)
কাতারের মাঝখানে ফাঁক রেখে দাঁড়ানো
কাতার সোজা করার পর লক্ষ রাখতে হবে, কাতারের মাঝখানে যাতে কোনো ফাঁক না থাকে। অনেক সময় কেউ কেউ এমনভাবে ফাঁক রেখে দাঁড়ান যে যেখানে দুজন দাঁড়িয়েছেন, সেখানে খুব সহজেই তিনজন দাঁড়াতে পারত। হাদিসে এভাবে ফাঁক রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করার প্রতি জোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কাতারগুলো সোজা ও সঠিক করো, পরস্পরের কাঁধ সমান্তরাল রেখো, ফাঁক-ফোকর বন্ধ করো। ইবনু উমার (রা.)–এর বরাতে আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও, উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ করো আর তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। (তিনি আরো বলেন,) শয়তানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মেলাবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমত দিয়ে মেলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার ভঙ্গ করবে, আল্লাহও তার ওপর থেকে নিজের রহমত কেটে নেবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৬৬৬)
কাতার সোজা না করা
জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের প্রথম ধাপ হলো কাতার সোজা রেখে দাঁড়ানো। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতার সোজা করে দাঁড়াবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও মতভিন্নতা সৃষ্টি করে দেবেন। (বুখারি, হাদিস: ৭১৭)
হজরত উমর (রা). নামাজের কাতারগুলো সোজা ও ঠিকঠাক করার জন্য কিছু লোককে দায়িত্ব দিয়ে রাখতেন। যতক্ষণ না কাতার পুরোপুরি সোজা হতো, ততক্ষণ তিনি তকবির বলতেন না। (তিরমিজি)
হাদিসে কাতার সোজা না রাখার ব্যাপরে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। কাতার সোজা করার সহজ পদ্ধতি হলো মসজিদে কাতারের জন্য যে দাগ দেওয়া থাকে, পায়ের গোড়ালি সেখানে রাখা। সবার পায়ের পেছনের অংশ একই রেখায় থাকলে আপনা–আপনিই কাতার সোজা হয়ে যাবে। দাগে পায়ের গোড়ালি রাখাই কাতার সোজা করার পদ্ধতি।
সামনের কাতারে খালি জায়গা রেখে পেছনে দাঁড়ানো
সামনের কাতারে জায়গা ফাঁকা রেখে পেছনে দাঁড়ানো ঠিক নয়। নিয়ম হলো, প্রথমে সামনের কাতার পূর্ণ করবে। এরপর পেছনে নতুন কাতার করবে। এভাবে সামনে ভরে এলে ক্রমে ক্রমে পেছনের কাতার গড়ে তুলতে হবে।
জাবির ইবনু ছামুরাহ (রা.) বলেছেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) বেরিয়ে এসে আমাদের বললেন, ফেরেশতারা যেভাবে তাদের পালনকর্তার সামনে সারিবদ্ধ হন তোমরা কেন সেভাবে সারিবদ্ধ হও না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! ফেরেশতারা কীভাবে তাদের পালনকর্তার সামনে সারিবদ্ধ হন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা (প্রথমে) সামনের কাতারগুলো পূরণ করেন এবং শীসাঢালা প্রাচীরের মতো ফাঁক-ফোকর বন্ধ করে কাতারে দাঁড়ান। (মুসলিম, হাদিস: ৪৩০)
কখনো কখনো দেখা যায়, জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পর কেউ কেউ মসজিদে এসে তাকবির বা রুকু পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে পেছনে দাঁড়িয়ে যায়। অথচ তখনো সামনের কাতারে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল। কেউ কেউ আবার একটু শারীরিক আরামের জন্য সামনের কাতার ফাঁকা রেখে পেছনে দাঁড়ায়। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সামনের কাতার আগে সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ করো, তারপর এর পেছনের কাতার (এভাবে পর্যায়ক্রমে কাতারগুলো) পূরণ করো। যাতে করে অপূর্ণতা যদি থাকে, সেটা যেন সর্বশেষ কাতারেই থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭১)
রুকু না পেলে
রুকু না পেলে জামাতে শরিক না হয়ে অনেকে এমনিই দাঁড়িয়ে থাকে। হাদিসে আছে, তোমরা ইমামকে যেভাবে পাও, সে অবস্থাতেই নামাজে শরিক হয়ে যাও। আর যতটুকু ছুটে গেছে তা জামাত শেষে আদায় করো। (বুখারি, হাদিস: ৬৩৬)
ইমামকে যে অবস্থায়তেই পাওয়া যাক না কেন, সে অবস্থাতেই নামাজে শরিক হয়ে যেতে হবে।
ইমামের আগে রুকু-সেজদা না করা
জামাতে নামাজ পড়ার সময় ইমামের আগে রুকু-সেজদা করা যায় না।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.)–র বরাতে বলা হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কি এ নিয়ে কোনো ভয় করে না, যখন সে ইমামের আগে যে তার মাথা উঠিয়ে নেয়? আল্লাহ তখন তার মাথাকে গাধার মাথায় কিংবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে পাল্টে দিতে পারেন! (বুখারি, হাদিস: ৬৯১)
আরও কিছু ভুল
সেজদার সময় বেশি হাত বাঁকিয়ে রেখে পাশের নামাজিকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। খেয়াল রাখতে হবে একজনের কারণে অন্যে যেন বিঘ্ন না হয়।
মানুষ হিসেবে ইমাম সাহেবেরও ভুল হতে পারে। কিছু ভুলের জন্য সাহু সেজদার বিধান রয়েছে। আবার কিছু ভুল হলে ইমাম সাহেবকে তাৎক্ষণিকভাবে সুবহানাল্লাহ বলে সতর্ক করে দেওয়ার বিধান আছে।
মসজিদে নামাজ পড়তে এসে কোনো মুক্তাদি ইমামের সঙ্গে শুরু থেকে নামাজ না পেয়ে নামাজের কিছু অংশ পেলে তাকে মাসবুক বলে। এ অবস্থায় ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পরে মাসবুক ব্যক্তি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করবে।