জুমাবারে সুরা কাহাফ পড়ার ফজিলত

প্রতীকী গুহা

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রাসুল (সা.)–এর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর বর্ষিত হবে।’ পবিত্র কোরআনের ১৮তম সুরা আল কাহাফ। কাহাফ মানে গুহা। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১১০।

সুরা কাহাফে চারটি ঘটনা, চারটি বক্তব্য ও উপদেশ রয়েছে। সুরার ১ থেকে ৮ আয়াতে রয়েছে বক্তব্য। ৯ থেকে ২৬ আয়াতে আছে আসহাবে কাহাফের ঘটনা। ২৭ থেকে ৩১ আয়াতে আবার বক্তব্য এসেছে। ৩২ থেকে ৪৪ আয়াতে দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা রয়েছে। এরপর আবার লম্বা বক্তব্য ও উপদেশ এসেছে ৪৫ থেকে ৫৯ আয়াতে।

এ সুরায় দুটি কাহিনি এসেছে ৬০ থেকে ১০১ আয়াতে। সে দুটি হলো মুসা (আ.) ও খিজির (আ.) ঘটনা এবং জুলকারনাইন সম্পর্কিত ঘটনা। আবার সুরা শেষ হয়েছে বক্তব্য ও উপদেশ দিয়ে।জুমাবারে সুরা আল কাহাফ পড়তে বলা হয়েছে

আরও পড়ুন

গুহাবাসীর চমকপ্রদ আখ্যান

অবিশ্বাসে ভরা সমাজে কয়েকজন যুবক আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছিলেন। বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাঁরা একটি গুহায় গিয়ে লুকালেন। সেখানে আল্লাহ তাঁদের সবাইকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে রাখলেন।

ঘুম ভাঙার পর এই যুবকেরা বুঝতেই পারেননি, তাঁদের ঘুমের মধ্যে আল্লাহ অনেকগুলো বছর অতিবাহিত করে ফেলেছেন। এ অবস্থায় তাঁদের একজন খাবার কিনতে শহরে গেলেন। তিনি ভেবেছিলেন, লোকজন তাঁকে চিনে ফেলবে ও তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলেন, কেউ তাঁকে চেনে না। খাবার কিনে টাকা পরিশোধ করার সময় পুরোনো মুদ্রা দেখে শহরের লোকেরা হতবাক হয়ে গেল।

এ ঘটনার তাৎপর্য একাধিক। তবে আল্লাহ কীভাবে তাঁর ওপর সমর্পিত বান্দাদের কী করে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন, তা দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

বাগানের মালিকের সম্পদের ঘটনা

এক ব্যক্তির সুন্দর একটি বাগান ছিল। কিন্তু লোকটি ছিলেন অহংকারী। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘আর তার প্রচুর ধনসম্পদ ছিল, তারপর কথায় কথায় সে তার বন্ধুকে বলল, ধনসম্পদে আমি তোমার থেকে বড় ও জনবলেও তোমার চেয়ে শক্তিশালী’ (কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, ‘সুরা কাহাফ’, আয়াত ৩৪, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)। অহংকারী হয়ে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যাওয়ায় আল্লাহ তাঁর বাগান ধ্বংস করে দেন।

ঘটনাটি তাঁদের জন্য, যাঁরা নিজের অহংবোধে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যান। তাঁরা ভুলে যান যে আল্লাহ চাইলেই মুহূর্তে তাঁদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

একসঙ্গে হজরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)

হজরত মুসা (আ.) খিজির (আ.)–এর সঙ্গে সফর করার সময় তিনটি ঘটনা সংঘটিত হয়।

প্রথম ঘটনায় খিজির (আ.) একটি নৌকা ছিদ্র করে ফেলেন, অথচ নৌকার মালিক বিনা ভাড়ায় তাঁকে নৌকায় উঠিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ঘটনায় তিনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেন। তৃতীয় ঘটনায় তিনি একটি দেয়াল উঠিয়ে দেন।

ঘটনা তিনটি দেখে হজরত মুসা (আ.) চুপ থাকতে পারলেন না। তখন খিজির (আ.) ঘটনাগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা দেন। হজরত মুসা (আ.) বুঝতে পারলেন, আল্লাহ কীভাবে কাউকে কাউকে অন্তর্দৃষ্টি দেন, যাতে তাঁরা সুদূরপ্রসারী অর্থে এমন কাজ করতে পারেন যা আপাতদৃষ্টিতে বোধগম্য বলে মনে হয় না। সব জ্ঞানের অধিকারী কেবলই আল্লাহ। তাই জ্ঞান নিয়ে অহংকার করা অনুচিত।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর এ দেয়ালটি ছিল শহরের দুই এতিমের। এর নিচে ছিল গুপ্তধন। আর ওদের পিতা ছিল এক সৎকর্মপরায়ণ লোক। সে জন্য তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলেন যে ওরা যেন সাবালক হয় ও তারপর ওরা ওদের ধন উদ্ধার করে। আমি নিজ থেকে কিছু করিনি। তুমি যে বিষয়ে ধৈর্য রাখতে পারনি এটাই তার ব্যাখ্যা’। (কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, ‘সুরা কাহাফ’, আয়াত ৮২, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)

আরও পড়ুন

জুলকারনাইনের ঘটনা

জুলকারনাইন ছিলেন ন্যায়পরায়ণ ও সৎ বাদশাহ। তিনি পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সফর করেছিলেন। দুই পর্বতের মাঝখানে তিনি এক জনগোষ্ঠীকে খুঁজে পান। তারা তাঁর কাছে ইয়াজুজ ও মাজুজের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি দেয়াল নির্মাণের আবেদন জানাল। জুলকারনাইন কাজটি করে দিতে সম্মত হলেন। তিনি তাঁর কাজ নিয়ে গর্ব দেখাননি।

দেয়াল তৈরির পর জুলকারনাইনের দেওয়া ভাষণ পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।’ (কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, ‘সুরা কাহাফ’, আয়াত ৯৮, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)

ওপরের চারটি ঘটনা থেকে চার রকম পরীক্ষার কথা জানা যায়। আসহাবে কাহাফের ঘটনা থেকে ধর্মবোধের পরীক্ষা, দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা থেকে সম্পদের ওপর পরীক্ষা, হজরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)–এর সাহচর্য থেকে জ্ঞান সম্পর্কে এবং জুলকারনাইনের ঘটনা থেকে ক্ষমতা নিয়ে পরীক্ষা।

আরও পড়ুন

চারটি দাওয়াত

চারটি ঘটনায় দাওয়াতের কথা রয়েছে। ১৪ নম্বর আয়াতে যুবকেরা বাদশাহকে দাওয়াত দিয়েছেন (আসহাবে কাহাফের ঘটনা)। ৩৭ নম্বর আয়াতে একজন সঙ্গী আরেক সঙ্গীকে দাওয়াত দিয়েছেন (দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা)। ৭০ নম্বর আয়াতে একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রকে দাওয়াত দিয়েছেন (হজরত মুসা (আ.) ও জ্ঞানী ব্যক্তির ঘটনা)। ৮৭-৮৮ আয়াতে একজন শাসক তাঁর প্রজাদের দাওয়াত দিয়েছেন (জুলকারনাইনের ঘটনা)।

আরও পড়ুন