যেভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন
ইসলাম মানুষকে রাগ সংযত করার নির্দেশ দিয়েছে। রাগ মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও ধর্মের পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়। রাগের কারণে মানুষের আচার-আচরণ ও চিন্তায় খারাপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই রাগ করা অবস্থায় ক্ষমার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। বিশেষ করে কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকার পরও প্রতিশোধ না নেয় এবং ক্ষমা করে দেয়, তাহলে তার এ কাজটি ইসলামের দৃষ্টিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
মানুষের মতো পশু-পাখিরাও রাগ করে, আচার–আচরণে তাদের রাগ প্রকাশ করে। তবে পশু-পাখির সঙ্গে মানুষের রাগের প্রধান পার্থক্য হলো, মানুষের ভালো রাগ মন্দকে প্রতিহত করতে অত্যন্ত কার্যকরী, আর খারাপ রাগ অতি মাত্রায় বিধ্বংসী। যেখানে রাগ করা উচিত, সেখানে নীরবতা পালন কাপুরুষতার পরিচায়ক। তেমনি যেখানে নীরব থাকা কাম্য, সেখানে রাগ দেখানো নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে যা করা যায়:
আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া
সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রা.)–এর বরাতে বলা আছে যে নবী (সা.)-এর কাছে এসে দুই ব্যক্তি কথা-কাটাকাটিতে প্রবৃত্ত হলো। তাদের একজনের চোখ রাগে লাল হয়ে হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে যে কারো রাগ দূর হয়ে যায়। আর তা হচ্ছে ‘আমি বিতাড়িত শয়তানের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৪৫৮)
চুপ হয়ে যাওয়া
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারো যখন রাগ হয়, সে যেন চুপ হয়ে যায়।’কেননা রাগের মুহূর্তে আমাদের মুখ লাগামহীন হয়ে পড়ে। হিতাহিত জ্ঞান শূন্যের কোঠায় নেমে যায়, ফলে তখন এমন কথা মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে, যার জন্য পরবর্তী অনেক পস্তাতে হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষণিকের নীরবতা ভবিষ্যৎ অনেক শঙ্কা থেকে মুক্তির মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
অবস্থান পরিবর্তন করা
আবু যার (রা.)–এর বরাতে বলা হয়েছে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বললেন, ‘যদি তোমাদের কেউ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগান্বিত হয়, তবে সে যেন বসে পড়ে। যদি এতে রাগ চলে যায়, তবে ভালো; নয়তো সে শুয়ে পড়বে।’
আতিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত; আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আর শয়তান আগুন হতে সৃষ্ট। আগুনকে পানিই নেভাতে পারে। কাজেই তোমাদের কেউ রাগান্বিত হলে সে যেন অজু করে।’
মহানবীর অসিয়ত স্মরণ করা
আবু হুরাইরাহ (রা.)–র কাছ থেকে বর্ণিত আছে যে এক লোক নবী (সা.)-এর কাছে আবেদন জানাল, আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ কোরো না।’ লোকটি আবার একই আবেদন জানাল। তিনি (প্রতি বারেই) তাকে এই অসিয়ত করলেন, ‘তুমি রাগ করো না।’ (বুখারি) । রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেন, ‘ধরাশায়ী করার মাঝে কৃতিত্ব নেই। বরং রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই আসল কৃতিত্ব।’
রাগ দমনের সওয়াব
আল্লাহ বলেন, ‘ভালো ও মন্দ (দুই-ই) সমান হতে পারে না। ভালো দিয়ে মন্দকে বাধা দাও। এতে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।. এ-চরিত্র তাদেরই হয় যারা ধৈর্যশীল, এ-চরিত্র তাদেরই হয় যারা মহাভাগ্যবান।. যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে উসকানি দেয় তবে তুমি আল্লাহ্ স্মরণ নেবে, তিনি সব শোনেন, সব জানেন।’ (সুরা হামিম সিজদা, ৩৪-৩৬)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাগ দমন করে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার অন্তরকে সন্তুষ্টি তারা পূর্ণ করে দেবেন।’
নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তার রাগ দমন করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর গোটা সৃষ্টির সামনে তাকে ডাকবেন এবং তাকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী হুর নির্বাচন করতে দেবেন।’(আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৭৭)