রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে
আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘আল-হালিম’। ‘হালিম’ মানে যিনি তাঁর সৃষ্টির ওপর রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন, যদিও তাঁর সৃষ্টি রাগ করার মতো কিছু করেছে। মানুষ প্রতিনিয়ত এমন কাজ করে, যার ফলে আল্লাহ মানুষের ওপর রাগ করতে পারেন। কিন্তু তিনি না রেগে তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর চেয়ে বেশি ধৈর্যধারণকারী আর কেউ নেই। লোকেরা তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, এরপরও তিনি তাদের রিজিক দান করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,০৯৯)
কোরআনে আছে, ‘আর জেনে রাখো আল্লাহ তোমাদের মনোভাব জানেন। অতএব তাঁকে ভয় করো আর জেনে রাখো, আল্লাহ তো ক্ষমা করেন, সহ্য করেন (হালিম)। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৫)
রাগ নিয়ন্ত্রণের পুরস্কার
রাগ সংযত রাখা মুমিনের অন্যতম গুণ। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এই গুণের প্রশংসা করেন এবং যারা নিজেদের রাগ সংযত করে, তাদের তিনি তিনটি পুরস্কারের ঘোষণা দেন। সেগুলো হলো, ক্ষমা করে দেবেন, জান্নাত দান করবেন, মুত্তাকিদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা প্রতিযোগিতা করো তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য, যা আকাশ ও পৃথিবীর সমান প্রশস্ত, যা সাবধানীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে ও যারা ক্রোধ সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ্ (সেই) সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন। (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছু সংবরণে নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,১৮৯)
নবীজির (সা.) উপদেশ
একবার এক লোক রাসুলের (সা.) কাছে পরামর্শ নিতে এলো। তিনি তাকে পরামর্শ দিলেন, ‘রাগ কোরো না।’ লোকটি আরও উপদেশ চাইল। তিনি প্রতিবারই তাকে বললেন, ‘রাগ করো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৬,১১৬)
একবার তিনি সাহাবিদের জিজ্ঞেস করেন, ‘সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি কে?’ সাহাবিরা বললে, ‘যে কুস্তিতে অন্যকে পরাজিত করে।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে কাউকে কুস্তিতে পরাজিত করে সে প্রকৃত বীর নয়। বরং আসল বীর সে, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬,১১৪, মুসলিম; হাদিস: ৬.৫৩৫)
যেভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন
যে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে মূলত তিনটি শক্তির ওপর বিজয়ী হয়। নিজের প্রবৃত্তিকে পরাজিত করে, নিজের সঙ্গে থাকা শয়তানকে পরাজিত করে এবং অন্য লোকটির সঙ্গে থাকা শয়তানকেও পরাজিত করে। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েকটি কাজ করতে পারেন।
১. দোয়া করা: দুজন সাহাবি রাসুলের (সা.) সামনে রাগ করলেন। রাগের কারণে একজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল। রাসুল (সা.) তখন বললেন, আমি এমন একটা দোয়া জানি, যা পড়লে রাগ দূর হয়ে যাবে। তা হলো, ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বয়ান’ (শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই)।’ (বুখারি, হাদিস: ৩,২৮২)
২. অজু করা: রাসুল (সা.) বলেন, ‘রাগ আসে শয়তান থেকে। শয়তানকে আগুন থেকে তৈরি করা হয়েছে। অতএব, তোমাদের কারও রাগ হলে সে যেন অজু করে নেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৭৮৪)
৩. অবস্থান বদলানো: রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়, সে যেন বসে পড়ে। এতে যদি তার রাগ কমে, তাহলে তো ভালো; অন্যথায় সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪,৭৮২)
৪. নীরব থাকা: রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কারও রাগ হলে সে যেন চুপ থাকে। (সহিহ বুখারি, আদাবুল মুফরাদ: ২৪৪)