চান্দ্রবর্ষের ইসলামি আরবি সপ্তম মাস হলো রজব। এ মাসের পূর্ণ নাম আর রজবুল মুরাজ্জাব। রজব অর্থ সম্ভ্রান্ত, প্রাচুর্যময়, মহান। মুরাজ্জাব অর্থ সম্মানিত। আর রজবুল মুরাজ্জাব মানে হলো প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস। রজব মাসের আরেকটি বিশেষণ হলো মুদার, যার অর্থ বহুবিধ কল্যাণের সম্মিলন।
রজব ও শাবান হলো জোড়া মাস। এ দুই মাসকে একত্রে রজবান বা রজবাইন অর্থাৎ রজবদ্বয় বলা হয়। রমজানের আগে এই দুই মাস ইবাদত ও আমলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। (লিসানুল আরব)
চান্দ্রবর্ষের আরবি ১২ মাসের মধ্যে চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা ১২টি; এর মধ্যে ৪টি বিশেষ সম্মানিত।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)
রজব মাস থেকেই রমজানে ইবাদতের পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নিতে হবে। দান-সদকার পরিমাণ বাড়াতে হবে। দরিদ্র মানুষ যেন রমজানে ভালোভাবে ইফতার ও সাহ্রি করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে পরিকল্পনা করা রজব ও শাবান মাসের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ আমল
সম্মানিত ও যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ চারটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। (বুখারি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৬৭২)। এই মাসগুলোর বিশেষত্ব হলো এতে অধিক ইবাদত-বন্দেগি ও নেক আমল করলে অন্য মাসগুলোতেও তা সহজ হয়ে যায়। (আহকামুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১১১; মাআরিফুল কোরআন, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৩৭২)
রজব ও শাবান মাসজুড়ে প্রিয় নবীজি (সা.) এই দোয়াটি বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৫৯; সুনানে বায়হাকি, শুআবুল ইমান, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৭৫)
নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন শাবান মাসে, তারপর রজব মাসে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)–এর আমল দেখে তা বুঝতে পারতাম।
অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা রজব মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। কোরআন তিলাওয়াত শেখা ও শুদ্ধ করা, নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদ ভালোভাবে জানা অত্যন্ত জরুরি, যাতে রমজানের আমল সঠিকভাবে পালন করা যায়।
রজব ও শাবান মাস হলো রমজানের প্রস্তুতির মাস। রমজানের জন্য শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি নিতে হবে। রমজানে ইবাদত ও আহার-নিদ্রার সময়সূচি অনেকটা পরিবর্তন হবে; তাই সেভাবে অভ্যস্ত হতে হবে।
রজব মাস থেকেই ইবাদতের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং অন্যদেরও নেক আমলে উৎসাহিত করতে হবে। রমজানের শেষ দশকে রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল—ইতিকাফ। এর জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে।
হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) কখনো প্রতি চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ছাড়তেন না; অনুরূপভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ ও রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফও কখনো বাদ দিতেন না। (জামিউস সগির; বুখারি: ১৯৭৫)।
রজব মাস থেকেই রমজানে ইবাদতের পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নিতে হবে। দান-সদকার পরিমাণ বাড়াতে হবে। দরিদ্র মানুষ যেন রমজানে ভালোভাবে ইফতার ও সাহ্রি করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে পরিকল্পনা করা রজব ও শাবান মাসের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ আমল।
আরবি চান্দ্র মাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া। রজব মাসের ২৯ বা ৩০ তারিখে শাবান মাসের নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করতে হবে। নতুন চাঁদ দেখা নিশ্চিত হলে শান্তি, নিরাপত্তা এবং ইমান ও নেক আমলের জন্য দোয়া করতে হবে। নিজে আমল করার পাশাপাশি অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম