মহানবীর (সা.) ইতিকাফ
মহানবী (সা.) রমজানে ইতিকাফ পালন করতেন একান্ত কিছুটা সময় আল্লাহর সান্নিধ্যে যাপন করার জন্য। প্রতি বছর রমজানে তিনি মদিনার মসজিদে ইতিকাফ করতেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২,০৪১)
তিনি মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন (বুখারি, হাদিস: ২,০২৬)। কেন? তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিনে। পরে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে, তা শেষ দশ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ করবে, সে যেন (এ-সময়) ইতিকাফ করে। ফলে, লোকজন তার সঙ্গে ইতিকাফ অংশ নিল। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৬৭)
তবে আবু হোরাইরা (রা.) জানান যে, যে-বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর ইতিকাফে কাটিয়েছেন তিনি বিশ দিন (বুখারি, হাদিস: ২,০৪৪)
কোথায় অবস্থান করতেন
ইতিকাফকালে রাসুল (সা.) মসজিদে সবার থেকে আলাদা করে একটি তাঁবু-সদৃশ টানিয়ে দেওয়ার আদেশ দিতেন। আবু সাইদ (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) এক তুর্কি তাঁবুতে ইতিকাফে বসলেন, যার প্রবেশমুখে ছিল একটি চাটাইয়ের টুকরো। (একবার) তিনি চাটাইটি হাতে ধরে একপাশে সরিয়ে রাখলেন এবং চেহারা বের করে লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৭৭৫)
বিশ তারিখের দিবসের সূর্যাস্তের পর একুশ তারিখের রাতের সূচনালগ্নে তিনি ইতেকাফগাহে প্রবেশ করতেন এবং বের হতেন ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর। আয়েশা (রা.) জানান যে, নবীজি (সা.) ফজর আদায় করে ইতেকাফগাহে প্রবেশ করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৭৩)
ইতিকাফের সময় কী করতেন
ইতিকাফকালে তিনি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন না, জানাজায় অংশ নিতেন না, স্ত্রী-সঙ্গ ত্যাগ করতেন। তবে স্ত্রীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং কথা বলতেন। সাফিয়া (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ইতিকাফে ছিলেন, আমি তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এলাম, আলাপ করলাম, এরপর চলে এলাম...। অন্য বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.)তাঁকে পৌঁছে দিতে এগিয়ে গেলেন। অথচ নবীজি(সা.)ইতিকাফে ছিলেন এবং সাফিয়ার আবাস ছিল উসামা বিন জায়েদের বাড়িতে। যদিও তিনি অত্যাবশ্যকীয় কোনো কারণ ব্যতীত ইতেকাফগাহ হতে বের হতেন না। (বুখারি, হাদিস: ৩,২৮১, ৩,০৩৯, ২,০২৯)
ইতিকাফের অজুহাতে যারা পরিবারের কথা ভুলে যায়, তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। এমনকি স্ত্রীকে ঘর পর্যন্ত এগিয়ে দিতে তিনি বাইরেও বেরিয়েছেন। কোনো বর্ণনায় আছে, আয়েশা (রা.) তাঁর মাথার চুল গুছিয়ে দিতেন (বুখারি, হাদিস: ২৯৬)। একবার তিনি মসজিদে অবস্থান করছিলেন, স্ত্রীরা তার পাশে ছিলেন এবং তারা ছিলেন আনন্দিত...। (বুখারি, হাদিস: ১,৮৯৭)
ইতিকাফের কাজা আদায়
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইতিকাফ করবেন বলে মনস্থ করলেন, ফজরের নামাজ আদায় করে ইতেকাফগাহে প্রবেশ করলেন। জয়নব (রা.) চাইলেন তার সঙ্গে ইতিকাফ করবেন। তিনি অনুমতি দিলেন। তার জন্যও তাঁবু টানানো হলো। এরপর রাসুলের অন্য স্ত্রীরাও একে একে এসে তাঁবু টানালেন এবং ইতিকাফ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। ফজর নামাজ শেষে রাসুল (সা.) অনেকগুলো তাঁবু দেখে বললেন, তোমরা কি এর মাধ্যমে পুণ্য অর্জন করতে চাইছ? এরপর তিনি নির্দেশ দিলেন তার তাঁবু সরিয়ে নিতে এবং তিনি রমজানে ইতিকাফ পরিত্যাগ করলেন। সে-বছর শাওয়ালের প্রথম দশদিন সেই ইতেকাফের কাজা আদায় করেছেন তিনি। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৬৬৩)
আরেকবার সফরে থাকার কারণে ইতিকাফ পালন সম্ভব না হওয়ায় তিনি রাসুল(সা.) পরবর্তী বছর বিশ দিন ইতিকাফ করে তা কাজা করে নেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৮০৩)