সুরা কাহাফে রয়েছে বক্তব্য ও উপদেশ
পবিত্র কোরআনের ১৮ তম সুরা আল কাহাফ। কাহাফ মানে গুহা। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১১০। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরায়, গুহাবাসীদের বিবরণ স্থান পেয়েছে। সরল পথের আলোচনা করে মোহাম্মদ (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। বক্তব্য ও উপদেশ এসেছে ৪৫ থেকে ৫৯ আয়াতে। কোরআনে আছে, তুমি ওদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা উপস্থিত করো। এ পানির মতো যা আমি বর্ষণ করি আকাশ থেকে যার দ্বারা মাটির গাছপালা ঘন হয়ে ওঠে, তারপর তা শুকিয়ে এমন চুরচুর হয় যে, বাতাস যাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ্ তো সর্ববিষয়ে শক্তিমান। ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি তো পার্থিব জীবনের শোভা; আর সৎকর্মের ফল স্থায়ী, তা তোমার প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার পাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ ও বাসনাপূরণের জন্যও ভালো। যেদিন আমি পর্বতকে উপড়ে ফেলব আর তুমি পৃথিবীকে দেখবে একটা শূন্য ময়দান, আমি সেদিন সকলকে একত্র করব এবং কাউকেই অব্যাহতি দেব না। আর তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের সামনে সারি বেঁধে হাজির করানো হবে। আর (বলা হবে), 'তোমাদেরকে প্রথমে যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই তোমরা আমার সামনে হাজির হয়েছ, অথচ তোমরা মনে করতে যে তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুত মুহূর্ত আমি উপস্থিত করব না।' আর উপস্থিত করা হবে (হিসাবের) কিতাব, আর ওতে যা লেখা আছে তার জন্য তুমি দোষীদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত দেখবে।
আর ওরা বলবে, 'হায়, দুর্ভোগ আমাদের! এ কেমন কিতাব! এ তো ছোট-বড় কিছুই বাদ দেয়নি, বরং এ সবেরই হিসাব রেখেছে।' ওরা ওদের কৃতকর্ম সামনে হাজির পাবে। তোমার প্রতিপালক কারও ওপর জুলুম করেন না। আর আমি যখন ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, 'আদমকে সিজদা করো', তখন ইবলিস ছাড়া সকলেই সিজদা করল। সে ছিল জিনদের একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে ওকে ও ওর বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছ? ওরা তো তোমাদের শত্রু! সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য কী খারাপ বিনিময়! আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করতে তাদেরকে আমি ডাকিনি, এবং তাদের সৃষ্টি করতেও না। আর আমি তো বিভ্রান্তকারীদের সাহায্য গ্রহণ করি না আর যেদিন তিনি বলবেন, 'তোমরা যাদেরকে আমার শরিক মনে করতে তাদেরকে ডাকো, ওরা তখন তাদেরকে ডাকবে কিন্তু তারা ওদের কাকে সাড়া দেবে না। আর ওদের মাঝখানে রেখে দেব এক ধ্বংসের গহ্বর। অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝবে যে ওদেরকে সেখানে ফেলা হবে এবং তার থেকে ওদের কোনো পরিত্রাণ নেই।আমি মানুষের জন্য এই কোরানে বিভিন্ন উপমা দিয়ে আমার বাণী বিশদভাবে বয়ান করেছি। মানুষ বেশির ভাগ ব্যাপারেই তর্ক করে। যখন ওদের কাছে পথের নির্দেশ আসে, তখন কখন ওদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা হবে বা কখন শাস্তি এসে পড়বে এই প্রতীক্ষাই ওদেরকে বিশ্বাস করতে ও ওদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধা দেয়। আমি রসুলদেরকে পাঠিয়েছিলাম কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে, কিন্তু অবিশ্বাসীরা মিথ্যা তর্ক করে সত্যকে ব্যর্থ করার জন্য।
আর আমার নিদর্শন ও যা দিয়ে ওদেরকে সতর্ক করা হয় সেসবকে তারা হাসি-ঠাট্টার ব্যাপার ভাবে। তার প্রতিপালকের নিদর্শনগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় ও তার কৃতকর্মগুলো ভুলে যায় তবে তার চেয়ে বড় সীমালঙ্ঘনকারী আর কে! আমি ওদের অন্তরের ওপর আবরণ দিয়েছি যেন ওরা এ (কোরান) বুঝতে না পারে, আর ওদেরকে বধির করেছি। তুমি ওদের সৎপথে ডাকলেও ওরা কখনো সৎপথে আসবে না।আর তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ওদের কৃতকর্মের জন্য তিনি ওদেরকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি ওদের শাস্তি তাড়াতাড়ি এগিয়ে আনতেন; কিন্তু ওদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহূর্ত যার থেকে ওদের পরিত্রাণ নেই। সেইসব জনপদের অধিবাসীদেরকে আমি ধ্বংস করেছিলাম যখন ওরা সীমালঙ্ঘন করেছিল এবং ওদের ধ্বংসের জন্য আমি ঠিক করেছিলাম এক নির্দিষ্ট ক্ষণ। (সুরা সুরা কাহাফ, আয়াত ৪৫ থেকে ৫৯)