পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মোহরানা
সাহাবি আবু তালহা (রা.) ইসলাম গ্রহণ পূর্বে উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান (রা.)-এর কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠন। উম্মে সুলাইম (রা.) নাকচ করে দেন। আবু তালহা তখন তাকে অনেক বেশি মোহর দেওয়ার প্রস্তাব করেন। উম্মে সুলাইম (রা.) বলেন, ‘আমি একজন মুশরিককে বিবাহ করতে পারি না। আবু তালহা, তুমি যার ইবাদত করো তার প্রতিকৃতি তো বানায় অমুক গোত্রের এক দাস। যদি তুমি তাকে আগুন দাও তবে তা সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে যাবে।’
আবু তালহা (রা.) তাতে বেশ কষ্ট পেলেন। তিনি তাকে আরও বেশি পরিমাণ মোহর দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করলেন। আশা ছিল হয়তো এবার উম্মে সুলাইমের অন্তর বিগলিত হবে এবং তিনি বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত হবেন। কিন্তু উম্মে সুলাইম (রা.) অত্যন্ত বিনম্র চিত্তে বললেন, ‘আবু তালহা, তোমার মতো পুরুষকে কোনো নারী প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। কিন্তু তুমি অমুসলমান, আর আমি মুসলমান। আমার জন্য তোমার সঙ্গে বিবাহ বৈধ নয়।’
আবু তালহা (রা.) বললেন, ‘আমি তোমাকে সোনা-রুপা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখব।’
উম্মে সুলাইম (রা.) তাতে রাজি হলেন না। কারণ, তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ইসলাম। তিনি বললেন, ‘আমার সোনা-গয়নার প্রয়োজন নেই। আমি চাই তুমি ইসলাম কবুল করো।’
আবু তালহা (রা.) বললেন, ‘এই ব্যাপারে আমি কার সঙ্গে কথা বলব?’
উম্মে সুলাইম (রা.) বললেন, ‘রাসুলের (সা.) সঙ্গে কথা বলো।’
আবু তালহা (রা.) তখন ‘রাসুলের (সা.) খেদমতে হাজির হলেন। আবু তালহা (রা.)-কে দেখে নবীজি উপস্থিত সাহাবিদের বললেন, ‘তোমাদের কাছে আবু তালহা আসছে এবং তার চোখে ইসলামের আলো রয়েছে।’
আবু তালহা (রা.) নবীজিকে সেই কথা বললেন যা উম্মে সুলাইমের কাছে বলেছিলেন। রাসুল (সা.) তাকে ইসলামের গ্রহণের পরামর্শ দেন। আবু তালহা গ্রহণ করেন। ইসলামে গ্রহণের ভিত্তিতে উম্মে সুলাইমের সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন করা হয়। আবু তালহার ইসলাম গ্রহণকে উম্মে সুলাইম (রা.) মোহরানা হিসেবে মেনে নেন। পৃথিবীর সবচে’ মূল্যবাদ সম্পদ তার মোহরানা হিসেবে ধার্য করে নেন। (মুসনাদে আবি দাউদ আত-তায়ালিসি, হাদিস: ২,১৬৮; মুসনাদে বাযযার, হাদিস: ৭,৩১০; বায়হাকি, ৪/১০৯)
এই মহিয়সী নারী সেই সব নারীদের জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত যারা শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা প্রত্যাশা করে। একটু ভেবে দেখুন, তাদের চরিত্র কীভাবে ইমান, ইয়াকিন, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের গুণে উদ্ভাসিত ছিল। তারা মহান প্রতিপালকের কাছে কী পরিমাণ মর্যাদা, সম্মান, সাওয়াব ও প্রতিদানের উপযুক্ত ছিলেন। তারা নিজেদের পেছনে কত প্রশংসনীয় স্মৃতি রেখে গেছেন। কত মহান ও শ্রেষ্ঠ সওয়াব ও প্রতিদান তারা অর্জন করেছেন। কারণ তারা আপন প্রতিপালকের সঙ্গে, নিজের সত্তার সঙ্গে এবং মানুষের সঙ্গেই নিষ্ঠাবান ও সৎ ছিলেন। যেদিন সত্যবাদিদের সততা তাদের উপকার পৌঁছাবে সেদিন তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। যেখানে তারা চিরদিনের জন্য অবস্থান করবে। তারা তাদের মহান সফলতা নিজ চোখে দেখতে পাবে।
লেখকের আসআদু ইমরাআতিন ফিল আলাম গ্রন্থ থেকে অনুবাদ: মনযূরুল হক