ইস্তিগফার আল্লাহর পছন্দের একটি ইবাদত
ইস্তিগফার একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। কোনো পাপ মাফ করার জন্য এ ইবাদত করা হয় না। তওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহর পছন্দের একটি ইবাদত। ইস্তিগফার পড়ার সময় মুমিনের মনে হবে, আল্লাহ, আপনার ইবাদতের (নামাজের) হক আদায় হয়নি।
কোরআনে আছে, আর আল্লাহ তো এমন নন যে তুমি তাদের মধ্যে থাকবে, তবু তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আর তিনি এমন নন যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তবু তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সুরা আনফাল, আয়াত: ৩৩)
কোরআনে আছে, ‘তারপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাও। তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে সমৃদ্ধ করবেন, তোমাদের জন্য রাখবেন বাগান আর বইয়ে দেবেন নদীনালা। তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাচ্ছ না।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১৩)
কোরআনে ইস্তিগফারের কথা
কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ বান্দাকে ইস্তিগফার করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারা সে নির্দেশ মেনে ইস্তিগফারের আমলের জন্য নিজেদের নিয়োগ করেছে, তারাই মুস্তাজাবুদ দাওয়ায় (যার দোয়া কবুল হয়) পরিণত হয়েছে। তারা আল্লাহর কাছে কোনো জিনিস চাইলে মহান আল্লাহ তা বান্দাকে দিয়ে দেন।
ইস্তিগফার প্রসঙ্গে কোরআন আছে:
১. ‘তখন তুমি তোমার রবের প্রশংসা তসবি পাঠ করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সুরা নসর, আয়াত: ৩)
২. ‘আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৬)
৩. ‘আর তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নর-নারীর ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৯)
৪. ‘সুতরাং বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। (ইস্তিগফার করলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত ঝরাবেন। তিনি তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে পূর্ণ করবেন এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন জান্নাত তথা বহু বাগান ও প্রবাহিত করবেন নদ-নদী।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১২)
৫. ‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে; সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১১০)
৬ ‘হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। এরপর তার কাছে তওবা করো, তাহলে তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সঙ্গে আরও শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৫২)
৭. ‘আর আল্লাহ এমন নন যে তাদের আজাব দেবেন এ অবস্থায় যে তুমি তাদের মধ্যে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে আজাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৩৩)
৮. ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং প্রত্যেক আনুগত্যশীলকে তার আনুগত্য মোতাবেক দান করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের ওপর বড় একদিনের আজাবের ভয় করছি।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৩)
ইস্তিগফার নিয়ে একটি ঘটনা
ইস্তিগফার নিয়ে একটি ঘটনা পাওয়া যায় ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র.)-এর জীবনীতে। সারাটা জীবন তিনি হাদিস সংগ্রহে কাটিয়েছেন।
একবার তিনি একটা শহরে যাচ্ছেন। পথে এশার নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গেলে তিনি কাছের একটি মসজিদে ঢুকলেন। রাত হয়েছে, তাঁকে অনেক দূর যেতে হবে। তিনি চিন্তা করলেন ফজরের নামাজ পড়েই এ মসজিদ থেকে আবার যাত্রা শুরু করবেন। তিনি নামাজ পড়ে মসজিদে বসে থাকলেন। তাঁকে নামাজের পরও মসজিদে বসে থাকতে দেখে মসজিদের দ্বাররক্ষী এসে বললেন, রাতে মসজিদে থাকা যাবে না। আহমাদ ইবনে হাম্বল নিরুপায় হয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে পড়লেন।
মসজিদের বাইরেই ছিল একটা রুটির দোকান। আহমাদ ইবনে হাম্বল যুবক দোকানদারকে সালাম দিয়ে বললেন, ‘শীতের রাত। আমি কি তোমার কাছে আগুন পোহাতে পোহাতে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারি?’
দোকানদার বললেন, ‘এখানে আগুন পোহাতে পোহাতে রাত কাটালে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
আহমাদ ইবনে হাম্বল লক্ষ করলেন, যুবকটি রুটির খামির তৈরি করতে করতে বলছেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’, বেলুন দিয়ে রুটি বানাতে বানাতে বলছেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’, ক্রেতার হাতে রুটি তুলে দিতে দিতে বলছেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’, টাকা নিতে গিয়েও বলছেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’। অর্থাৎ সব কাজেই যুবকটি শুধু বলছেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’।
আহমাদ ইবনে হাম্বলের কৌতূহল বেড়ে গেল। বললেন, ‘যুবক! আমি আসার পর থেকেই দেখছি আপনি কিছুক্ষণ পরপর শুধু পড়ছেন‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। কেন আপনি এত ইস্তিগফার করছেন?’
যুবক বলল, ‘আমি সব সময় ইস্তিগফার পড়ি। এই আমলের ফলে আল্লাহ আমাকে ‘মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ’ (দোয়া করলেই তা কবুল হয়ে যায়) বানিয়ে দিয়েছেন। যখনই আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি, আল্লাহ তা কবুল করে নিয়েছেন।
যুবকের কথা শুনে আহমাদ ইবনে হাম্বল একেবারেই অবাক। যুবকটি বললেন, ‘তবে আমার একটা দোয়া এখনো কবুল হয়নি। সেটি ছাড়া আল্লাহ আমার সব দোয়া কবুল করে নিয়েছেন।’ ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনার যে দোয়াটটি এখনো কবুল হয়নি, সেটা কোনটা? এবার রুটিওয়ালা বললেন, ‘আল্লাহর কাছে আমি অনেকবার এই দোয়া করেছি যে আল্লাহ, শুনেছি এই সময়ের বড় মুহাদ্দিস ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল। আমি তাঁর দেখা যেন পাই।’ এবার আবেগে আহমাদ ইবনে হাম্বলের চোখে পানি চলে এল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘আপনার কবুল না হওয়া দোয়াটাও আজ কবুল হলো। আপনার সামনে আমিই আহমাদ ইবনে হাম্বল। নিশ্চয় আপনার দোয়ার কারণে আল্লাহ আমাকে আপনার দোরগোড়ায় টেনে এনেছেন।’