সাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)
খন্দকের যুদ্ধের সময়ের কথা। মদিনার ইহুদি গোত্র বনু কুরাইজা মুসলমানদের সঙ্গে সম্পাদিত মৈত্রী চুক্তি ভেঙে ফেলে। রাসুল (সা.) তাঁদের অবস্থা জানতে গুপ্তচর হিসেবে কাউকে পাঠাতে চাইলেন। সাহাবাদের উদ্দেশ্য করে তিনি তিনবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে তাদের সংবাদ নিয়ে আসতে পারবে? প্রত্যেকবারই যুবাইর (রা.) বললেন, আমি! ইয়া রাসুলুল্লাহ!
রাসুল (সা.) যুবাইর (রা.)-এর উদ্দীপনায় সংকট হয়ে বলেছিলেন, প্রত্যেক নবীরই একজন ঘনিষ্ঠ অনুসারী থাকে। যুবাইর আমার অনুসারী।
মক্কায় একবার এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে অবিশ্বাসীরা রাসুল (সা.)–কে বন্দী অথবা হত্যা করেছে। খবরটি শোনামাত্র একটি বালক ক্ষিপ্ত হয়ে তলোয়ার হাতে বেরিয়ে পড়ল। ঘটনাটির সত্য–অসত্য নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে হাজির হলো রাসুল (সা.) এর দরবারে। রাসুল (সা.) তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে?
সে উত্তর দিল, আমি শুনেছি আপনি বন্দী অথবা নিহত হয়েছেন। তাই আমি প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছি।
তাঁর প্রতি বালকটির এমন ভালোবাসা আর সাহস দেখে রাসুল (সা.) অত্যন্ত মুগ্ধ হন। তিনি বালকটির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) নামে সেই বালকটিই ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের একজন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন।
যুবাইর (রা.)–এর মা হজরত সাফিয়া ছিলেন রাসুল (সা.)–এর ফুপু এবং যুবাইর (রা.)–এর স্ত্রী আসমা বিনতে আবু বকর ছিলেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)–এর বোন।
অল্প বয়স থেকেই যুবাইর (রা.) ছিলেন খুব দুঃসাহসী। ছোটবেলা থেকেই তিনি বড় বড় পালোয়ান ও শক্তিশালী লোকদের সঙ্গে কুস্তি লড়তেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনন্য। অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে ইসলামের প্রায় সব যুদ্ধেই অসামান্য অবদান রেখেছেন।
বদরের যুদ্ধে শত্রুপক্ষের আঘাতে যুবাইর (রা.)–র শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। একটি ক্ষতের গভীরতা গর্তের মতো হয়ে যায়। পরে তাঁর ছেলে বলেছিল, আমরা বাবার সেই গর্তে আঙুল ঢুকিয়ে খেলা করতাম।
উহুদের ময়দানে যখন পরিস্থিতি মুসলিমদের প্রতিকূলে গিয়ে রাসুল (সা.) অরক্ষিত হয়ে পড়েন, সে সময় যে ১৪ জন সাহাবি নিজেদের জীবনের বিনিময়ে রাসুল (সা.)-কে কেন্দ্র করে প্রতিরোধ করেন যুবাইর (রা.) ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তাঁর এমন দুঃসাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর মা সাফিয়া (রা.)–র অবদান ছিল অনেক।
মক্কা বিজয়ের দিন রাসুল (সা.) মুসলিম সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। সর্বশেষ এবং ছোট দলটিতে ছিলেন রাসুল (সা.) নিজে। এ দলটির পতাকাবাহী ছিলেন যুবাইর (রা.)।
উহুদ যুদ্ধে তাঁর মামা হজরত হামজা (রা.) শাহাদত বরণ করেন তাঁর মা সাফিয়া (রা.) ভাইয়ের কাফনের জন্য দু টুকরো কাপড় নিয়ে আসেন। মামার পাশেই ছিল একজন আনসারি সাহাবির লাশ। একটি লাশের জন্য দুটি কাপড় হবে, আরেকটি লাশ থাকবে কাফনহীন—এ ব্যাপারটি তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তিনি দুজনের মধ্যে ভাগ করার জন্য কাপড় দুটি মাপলেন। লটারি করে বিষয়টি সমাধান করে দুজনের জন্য দু টুকরো কাপড় দিয়ে কাফন করলেন।
উমর (রা.)–এর শাসনামলে ইয়ারমুক নামে একটি যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে যুবাইর (রা.) অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধে যুবায়ের (রা.) মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। উমর (রা.)–র মৃত্যুর পর শূরা কমিটিতে খলিফা নির্বাচনের জন্য যে ছয়জন সাহাবির নাম ছিল, তাঁদের একজন ছিলেন যুবাইর (রা.)।
ইসলামের ইতিহাসে যুবাইর (রা.)–র অসামান্য অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরদিন।