আত্মহত্যা অনুচিত ও মহাপাপ

আত্মহত্যাপ্রতীকী ছবি

আত্মহত্যা অনুচিত ও মহাপাপ। আল্লাহ মানুষকে মরণশীল করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহই মানুষকে জন্ম দেন এবং তার মৃত্যু ঘটান। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা মৃত্যুর স্বাভাবিক এই ধারাকে উপেক্ষা করতে চান। এ কারণে এটি অত্যন্ত গর্হিত। এটি কবিরা গুনাহ। আল্লাহ আত্মহত্যা পছন্দ করেন না। শরিয়তের নির্দেশনায় আত্মহত্যাকারীরও জানাজা হবে। তবু রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে কখনো তা পড়াননি, সাহাবিরা পড়েছেন।

শিরকের পর আত্মহত্যা সবচেয়ে বড় গুনাহ। ইসলামের চার মাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম। কারণ, আল্লাহ মানুষকে মরণশীল হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। ধনী-গরিব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সবাইকে মরতেই হবে।

আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণকেই মরণের স্বাদ নিতে হবে, তারপর আমারই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৫৭)

আরও পড়ুন

একমাত্র আল্লাহই মৃত্যু দান করেন। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না। তিনিই জীবন দেন এবং মৃত্যু ঘটান আর তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৬)

আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না, তোমরা অবশ্য পরস্পর রাজি হয়ে ব্যবসা করতে পারো। আর তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না। আল্লাহ তো তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ২৯)

আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ কোরো না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫)

কোরআনে আছে আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)

আরও পড়ুন

আল্লাহ বলেন, ‘অকারণে কেউ কাউকে হত্যা করলে, সে যেন তাতে পৃথিবীর সব মানুষকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন তাতে পৃথিবীর সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩২)

হজরত জাবির বিন সামুরাহ (রা.)-এর বরাতে একটি হাদিস পাওয়া যায়, রাসুলের (সা.)-এর এক সাহাবি আহত হন। এর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি তাঁর তিরের ফলা দিয়ে আত্মহত্যা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জানাজার নামাজ পড়াননি। রাবী বলেন, এটি ছিল তাঁর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় (শাস্তি)।

  হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) এর বরাতে এক হাদিসে জানা যায় যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লোহার অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লোহার অস্ত্র তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,৭৭৮; মুসলিম, হাদিস: ২০০)

আরও পড়ুন

হজরত সাবিত বিন যাহ্হাক (রা.) একটি হাদিসের বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১,৩৬৩, ৬,০৪৭, ৬,১০৫, ৬,৬৫২; মুসলিম, হাদিস: ২০২, ২০৩)

হজরত আনাস (রা.)-এর বরাতে এক হাদিসে জানা যায় যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ, আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,৬৭১)

আরও পড়ুন