মন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়
আমরা যাকে প্রবৃত্তি বলি, আরবিতে তাকে বলে নফস। নফস শব্দের মূল অর্থ আত্ম বা অহং। তবে মানুষের কামনা, বাসনা, চাহিদা ইত্যাদিকে সাধারণত নফস বা প্রবৃত্তি বলা হয়। অর্থাৎ, নফস হলো মানুষের ইন্দ্রিয়জ বাসনার নাম।
প্রবৃত্তির প্রকারভেদ
অবস্থানের দিক দিয়ে নফস বা প্রবৃত্তি তিন প্রকার। ১. নফসে আম্মারাহ ২. নফসে লাওয়্যামাহ ও ৩. নফসে মুত্বমায়িন্নাহ।
নফসে আম্মারাহ (প্রতারক প্রবৃত্তি): যে নফস মানুষকে জৈবিক কামনার দিকে আকৃষ্ট করে, সব সময় মন্দ চিন্তা-ভাবনা পোষণ করিয়ে রাখে, মন্দ কাজে উৎসাহিত করে, পাপের কাজের নির্দেশ দেয়, সেটি নফসে আম্মারা। কোরআনে আছে, ‘আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন তো মন্দকর্মপ্রবণ।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)
নফসে লাওয়্যামাহ (অনুশোচনাকারী প্রবৃত্তি): যে নফস, অন্যায় বা গুনাহ করার পর হৃদয়ে অনুশোচনার উদ্রেক করে, মন্দ কাজের জন্য অনুতাপ সৃষ্টি করে সেটি হচ্ছে নফসে লাওয়্যামাহ। কোরআনে আছে, ‘আমি আরও শপথ করছি সে আত্মার যে নিজের কাজের জন্য নিজেকে ধিক্কার দেয়।’ (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২)
নফসে মুত্বমায়িন্নাহ (প্রশান্ত প্রবৃত্তি): যে নফস সব কালিমা থেকে মুক্ত এবং যাবতীয় মহৎ ভাবনায় পরিতৃপ্ত, সমস্ত খারাপ কর্ম থেকে মুক্ত সেই নফসকে নফসে মুত্বমায়িন্নাহ বলা হয়। এ প্রশান্ত আত্মা সম্পর্কে কোরআনে আছে, ‘হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এসো।…আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা আল ফাজর, আয়াত: ২৭-৩০)
প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
১. নফস বা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। আল্লাহর ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা বানিয়ে নেওয়া। মনের কামনা বাসনার লাগাম টেনে ধরতে হবে।
২. আত্মসমালোচনা করতে হবে। অন্যের গিবত বা নিন্দায় পড়ে না থেকে নিজের ভুলত্রুটি বের করতে হবে। সেগুলো সংশোধনের জন্য মনোযোগী হতে হবে। কোরআনে আছে, ‘যে নিজেকে সংশোধন করে সে-ই সফল। আর যে নিজেকে পাপে মগ্ন রাখে সে ব্যর্থ।’ (সুরা আশ শামস, আয়াত: ৯-১০)
৩. নিষিদ্ধ কাজ করা যাবে না। ইসলামে যত ধরনের কাজকে নিষেধ করা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. আল্লাহর ভয় থাকতে হবে ।
৫. অন্তরে সব সময় এই ভয় রাখতে হবে যে, একদিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সেই জবাবদিহির সময় যেন অপমানিত, লাঞ্ছিত ও লজ্জিত হতে না হয় সেভাবে নিজের জীবন গড়তে হবে।