সুরা গাশিয়ায় আছে পরকালে মানুষের পরিণতি সর্ম্পকে
গাশিয়া মানে আচ্ছাদনকারী।সুরা গাশিয়া পবিত্র কোরআনের ৮৮তম সুরা। এই সুরায় ১ রুকু, ২৬ আয়াত আছে। কিয়ামতের দিন কারও কারও মুখ অবনত, ক্লিষ্ট ও ক্লান্ত হবে, তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যাদের মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বলা হয়েছে, ‘অতএব তুমি উপদেশ দাও, তুমি তো একজন উপদেষ্টা। ওদের কর্মের নিয়ন্তা নও।’
সুরাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১ থেকে ৭ আয়াতে: পরকালে খারাপ মানুষের পরিণতি।
৮ থেকে ১৬ আয়াত: পরকালে ভালো মানুষের পরিণতি।
১৭ থেকে ২০ আয়াত: দুনিয়ায় নির্দশন দেখে পরকালের যৌক্তিকতা খোঁজার আহ্বান।
২১ থেকে ২২ আয়াত: আহ্বানকারীর বৈশিষ্ট্য।
২৩ থেকে ২৫ আয়াত: আহ্বান না শোনার ও না মানার পরিণতি।
প্রথমে পরকালে খারাপ মানুষদের পরিণতি, তারপরে ভালো মানুষদের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। খারাপ পরিণতির চেয়ে ভালো পরিণতির বর্ণনা আল্লাহ বিস্তারিতভাবে দিয়েছেন। এর পর দুনিয়ায় নিদর্শন দেখে পরকালের যৌক্তিকতা খোঁজার আহ্বান করা হয়েছে। এর পর আহ্বানকারীর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আহ্বান না শোনার ও না মানার পরিণতি বলে সুরাটি শেষ হয়েছে।
‘তোমার কাছে তো কিয়ামতের সংবাদ এসেছে।’ বলে আল্লাহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গাশিয়াহ অর্থ ঢেকে ফেলা। সে দিন সব ঘটনা, অবস্থা, চিন্তা, কাজ ঢেকে ফেলা হবে।
‘সেদিন অনেকেরই মুখমণ্ডল হবে অবনত।’ দ্বিতীয় আয়াতে এ কথা বলার মাধ্যমে কিছু মুখ যে সেদিন নিচু থাকবে এবং তাদের পরিণতি যে ভিন্ন হবে তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে বিচারের দিন নানা কর্মকাণ্ডে আশ্রয় খোঁজা, দাঁড়িয়ে থাকা, জবাব দেওয়া করতে করতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ওরা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে।’ পঞ্চম আয়াত অনুযায়ী জাহান্নামের পানি হবে ফুটন্ত। ‘ওদের ফুটন্ত ঝরনা থেকে পান করানো হবে।’
ষষ্ঠ ও সপ্তম আয়াতে আছে, ‘ওদের জন্য কোনো খাদ্য থাকবে না, শুকনো কাঁটা ছাড়া; যা ওদের পুষ্ট করবে না এবং ওদের খিদেও মেটাবে না।’
অষ্টম আয়াতে আছে, ‘সেদিন অনেকের মুখ হবে আনন্দে উজ্জ্বল।’ সেদিন শব্দটি ব্যবহার করার মাধ্যমে আল্লাহ আখিরাত বুঝিয়েছেন। ১০ থেকে ১৬ আয়াতে আছে, ‘থাকবে তারা সুমহান জান্নাতে, যেখানে তারা অসার কথা শুনবে না, সেখানে ঝরনা বইবে। (সেখানে থাকবে) উঁচু মর্যাদার আসন, প্রস্তুত পানপাত্র, সারি সারি তাকিয়া আর বিছানো গালিচা।’
জান্নাত কেমন হবে তারও বিবরণ আছে। জান্নাতিরা থাকবে প্রবাহিত ঝরনাধারার পাশে। এ সুবিধা চিরস্থায়ী হবে। জান্নাতে উৎকৃষ্ট বুননের জমকালো বিছানা পাতা থাকবে। জান্নাতিরা আরামে সেখানে বসবেন ও অখণ্ড অবসর সময় পার করবেন।
১৭ আয়াতে আছে, ‘তবে কি ওরা লক্ষ করে না, উট কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ উট এক বিস্ময়কর ও উপকারী প্রাণী। ১৮ তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কীভাবে আকাশ ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে।’ এর পর ১৯ তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পর্বতমালাকে কীভাবে শক্ত করে দাঁড় করানো হয়েছে।’
যারা দুনিয়াতে সঠিকভাবে ইবাদত করেছে, যাদের বিশ্বাস সঠিক ছিল, সুউচ্চ জান্নাত তাদের ঠিকানা হবে। পরের আয়াতগুলোতে সে কথা বলা হয়েছে।
কোরআনে আছে, ‘অতএব তুমি উপদেশ দাও; তুমি তো শুধু একজন উপদেষ্টা, ওদের কর্মের নিয়ন্তা নও। কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে ও অবিশ্বাস করলে আল্লাহ্ ওদের মহাশাস্তি দেবেন। ওদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে। তারপর ওদের হিসাবনিকাশ আমারই কাজ।’ (সুরা গাশিয়া, আয়াত: ২১–২৬)