রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ নাম, ইসি গঠন হবে ‘দ্রুতই’

  • ৫ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে তারা।

  • কমিটি নিজেরা সাতটি বৈঠক করেছে। এ ছাড়া বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আরও চারটি বৈঠক করেছে।

নির্বাচন কমিশন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে জমা দিয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে সুপারিশ করা নামের তালিকা জমা দেন।

রাষ্ট্রপতি এসব নাম পর্যালোচনা করে দ্রুত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন বলে জানিয়েছেন অনুসন্ধান কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গত রাতে বঙ্গভবনের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ইসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হবে।

নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির।তবে সংবিধানে বলা আছে, কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতি অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

বঙ্গভবনে গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে ১০ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছেন অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা।

গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে অনুসন্ধান কমিটির পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে ১০টি নামের তালিকা তুলে দেন। অসুস্থতার কারণে কমিটির সভাপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বঙ্গভবনে যেতে পারেননি। বঙ্গভবনে যাওয়া কমিটির পাঁচ সদস্য হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

এদিকে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীনকে উদ্ধৃত করে বাসস জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটির সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। এই নির্বাচন কমিশন ভবিষ্যতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসমূহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনে সক্ষম হবে। রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটির সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার বৈঠক করে ইসি গঠনের জন্য ১০টি নাম চূড়ান্ত করে তা সিলগালা করে রাখে অনুসন্ধান কমিটি। এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আইন পাসের পর ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। নাম চূড়ান্ত করতে অনুসন্ধান কমিটি নিজেদের মধ্যে মোট সাতটি বৈঠক করেছে। এ ছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আরও চারটি বৈঠক করেছে তারা।

কমিটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। ব্যক্তিপর্যায়েও নাম আহ্বান করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে কমিটি। এরপরও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকে আরও কিছু নামের প্রস্তাব আসে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগসহ নিবন্ধিত কয়েকটি দল অনুসন্ধান কমিটির কাছে ইসি গঠনে কোনো নামের প্রস্তাব পাঠায়নি।

আইন হওয়ার আগে গত দুটি নির্বাচন কমিশনও অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে হয়েছিল। তবে দুটি কমিশন নিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক ছিল। এর মধ্যে কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। তখন বিনা ভোটে সাংসদ হন ১৫৪ জন। এরপর কে এম নূরুল হুদার অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন ওঠে। হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া ১০ জনের তালিকায় কারা আছেন তা প্রকাশ করেনি অনুসন্ধান কমিটি। যদিও কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সুশাসনের জন্য নাগরিকসহ (সুজন) বিভিন্ন সংগঠনও একই দাবি জানিয়েছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি নাম প্রকাশ করতে গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি দিয়েছিল। জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) অবস্থানও নাম প্রকাশের পক্ষে। কিন্তু কমিটি এসব দাবি বিবেচনায় নেয়নি।

অবশ্য অনুসন্ধান কমিটির একাধিক সূত্র বলছে, সামরিক ও বেসামরিক সাবেক আমলা, সাবেক বিচারক এবং শিক্ষকের নাম ১০ জনের তালিকায় রয়েছে।

রাষ্ট্রপতির কাছে নাম জমা হওয়ায় এখন তা প্রকাশ করা হবে কি না, এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যে পাঁচজনের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হবে, সেটিই প্রকাশ করা হবে।