রাত থেকে নাকি তালিকা ধরে ধরপাকড়, জেনেছেন রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগ, তাঁরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছেন, নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছে পুলিশ। রিজভী এও বলেন, সারা দেশের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের তালিকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জমা দিয়েছেন। এই তালিকা ধরে আজ রাত থেকে নাকি নেতা-কর্মীদের আটক করা হবে।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ের অংশ হিসেবে আজ শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।
সেখানে রুহুল কবির রিজভী ক্রমানুসারে বলেন, অপেক্ষাকৃত যুবক বয়সের কর্মীরা সিল মারার দায়িত্বে থাকবে, পাঁচজন করে কেন্দ্রভিত্তিক সিল মারা গ্রুপ ঠিক করা হয়েছে, শুধু দলনেতার কাছে মোবাইল থাকবে এবং ২৯ তারিখ রাতে নির্দিষ্ট নম্বর ছাড়া অন্য কোনো কল রিসিভ করবে না, রাতে ৩০ শতাংশ ভোট সিল মারা হলে তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাবে, রাত ও দিনের বেলা কেন্দ্রের বাইরে পাহারা দেওয়ার জন্য কর্মীদের দ্বারা পৃথক টিম গঠন করে দিয়েছে পুলিশ, সিল মারার সময় বাইরে সতর্ক অবস্থায় থাকবে বিভিন্ন বাহিনী, দিনের বেলায় আওয়ামী লীগের অন্য কর্মীরা লাইনে থাকবে, বারবার বিশৃঙ্খলা তৈরি করে আবার ঠিক করা হবে এবং ভোট প্রদানের গতি অনেক মন্থর করা হবে, পুলিশের মোবাইল টিম কর্তৃক বিরোধী দলের সমর্থিত এলাকার লোকদের আসার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, আজ থেকে বিএনপি, ২০–দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপারেশনের মাত্রা বৃদ্ধি করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের তালিকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জমা দিয়েছে। এই তালিকা ধরে ধরে আজ রাত থেকে নাকি নেতা-কর্মীদের আটক করা হবে।’
বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, পুলিশ-প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে নির্বাচন ‘একতরফা’ করতে সব শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন ‘মরণকামড়’ দিচ্ছে। ধানের শীষের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের চালুনি দিয়ে ছেঁকে তুলছে। সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দেওয়া হচ্ছে তাঁদের ধরার জন্য। নেতা-কর্মীদের না পেয়ে নারী সদস্যসহ পরিবারের লোকজনদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং কোথাও কোথাও বিএনপি নেতা-কর্মীকে না পেয়ে তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রিজভী আরও বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন যে আওয়ামী লীগ ২২০ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে। সেটার বাস্তবায়নের জন্যই ‘মাস্টারপ্ল্যান’ করে বিএনপির প্রার্থিতা বাতিল ও স্বয়ং সংসদ সদস্য প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং জামায়াতের নেতা বলে আরও ২২ থেকে ২৩টি আসনের প্রার্থিতা বাতিল করার পরিকল্পনা চলছে। তিনি বলেন, ইসি কর্তৃক তালিকা চূড়ান্ত করার পর প্রার্থিতা বাতিল চরম ‘প্রতারণামূলক’। এর দায় ইসিকেই নিতে হবে। ২৭ ও ২৮ তারিখের মধ্যে এ পদ্ধতিতে বেশ কিছু আসনের জয় তারা নিশ্চিত করতে চায়।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, নৌকা মার্কার প্রার্থী চিত্রনায়ক ফারুক ঋণখেলাপি হয়েও প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ও আদালত এ ক্ষেত্রে নির্বিকার। অসংখ্য দণ্ডিত ও ঋণখেলাপি নৌকা মার্কার প্রার্থী। আসলে ক্ষমতা হাতে থাকলে পাহাড়েও নৌকা ভাসানো যায়।
বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার, আহমদ আযম খান, মুনির হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।