২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রাজনীতি-সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে হেফাজতের নতুন কমিটি হচ্ছে

পাল্টা কমিটির প্রস্তুতিও চলছে

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি করছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। যেখানে প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মো. ইউসুফকেও রাখা হচ্ছে। এদিকে আহমদ শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানিপন্থীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে হেফাজতের পাল্টা কমিটি গঠনের। এখন তাদের চোখ বাবুনগরীদের কমিটির দিকে।

হেফাজতের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নতুন কমিটি অনেকটাই চূড়ান্ত। এবারের কমিটির আকার হবে ছোট, ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ সদস্যের। কমিটিতে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন নেতাদের রাখা হচ্ছে না। হেফাজতের বর্তমান আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী যেকোনো সময় নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেন। কমিটি চূড়ান্ত করার আগে সরকারি মহলের মতামত নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

একই সূত্র জানায়, জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নুরুল ইসলাম জেহাদিকে মহাসচিব করে হেফাজতের নতুন কমিটি করা হচ্ছে। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মীর ইদ্রিস ও প্রচার সম্পাদক পদে মহিউদ্দিন রাব্বানীকে রাখা হয়েছে। মীর ইদ্রিস বিলুপ্ত কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব, আর মহিউদ্দিন রাব্বানী কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। মহিউদ্দিন রাব্বানী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে প্রচার সম্পাদক পদে রাখা হচ্ছে এমন তথ্য তিনি এখনো জানেন না।

বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জিসহ যাঁরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, তাঁরা নতুন কমিটিতে পদ পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, নতুন কমিটিতে নায়েবে আমির পদে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল হক মোমেনশাহী, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী (দেওনার পীর), মাওলানা মুহিবুল হক (গাছবাড়ি), মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসকে (ফরিদাবাদ মাদ্রাসা) রাখা হচ্ছে। যুগ্ম মহাসচিব পদে রাখা হয়েছে মাওলানা সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা আরশাদ রহমানী (বসুন্ধরা), মাওলানা আবু তাহের নদভী (পটিয়া) ও মাওলানা মো. ইউসুফ (আহমদ শফীর বড় ছেলে)। এ ছাড়া মহিববুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান করে একটি উপদেষ্টা কমিটি এবং পৃথক খাস বা বিশেষ কমিটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করে হেফাজতের বর্তমান আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী ও সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে যুগ্ম মহাসচিব পদে রাখা মাওলানা সাজেদুর রহমান নতুন কমিটি গঠনের কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এবারের কমিটি ৩০ থেকে ৪০ জনের মধ্যে হতে পারে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে এ কমিটি হবে। হেফাজতে ইসলামকে রাজনীতিমুক্ত করার জন্যই নতুন কমিটি করা হচ্ছে।

গত ২৬ এপ্রিল হঠাৎ করে হেফাজতের কমিটি ভেঙে দেন জুনায়েদ বাবুনগরী। কয়েক ঘণ্টার মাথায় জুনায়েদ বাবুনগরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্যের কমিটি করা হয়। পরে কমিটি ২০১ সদস্যবিশিষ্ট করা হয়েছে। কমিটিতে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানির অনুসারী হিসেবে পরিচিত হেফাজত নেতাদের কাউকে রাখা হয়নি।

আনাসপন্থীদেরও প্রস্তুতি

জুনায়েদ বাবুনগরীদের পাল্টা কমিটি গঠনের জন্য আনাস মাদানির অনুসারীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে কমিটি গঠনের আগে তাঁরা শাহ আহমদ শফীর ‘মৃত্যুর’ ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হবেন। এ বিষয়ে আজ বুধবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শাহ আহমদ শফী (রহ.)–এর হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের ও উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তারপূর্বক বিচারকার্য দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে’ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আনাস মাদানি, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা সলিমুল্লাহসহ কয়েকজন আলেম বৈঠক করেছেন।

মঈনুদ্দীন রুহী গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কমিটি গঠনে একটু সময় নিচ্ছি। ওদেরটা প্রকাশ করুক, তারপর আমরা ঠিক করব, আমাদেরটা কখন ঘোষণা করা হবে।’ রুহী হেফাজতের প্রথম কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আনাসপন্থীরা এত দিন কমিটি করার জন্য প্রত্যাশা অনুযায়ী লোক না পেলেও এখন অনেককে পাচ্ছেন।

জুনায়েদ বাবুনগরীর কমিটির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হামিদ (মধুপুরের পীর) আজ আনাসপন্থীদের সংবাদ সম্মেলনে থাকতে পারেন। তিনি মুন্সিগঞ্জের মধুপুরের জামিআ ইসলামিয়া হালীমিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। গত মঙ্গলবার তাঁর একটি বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ায়। তাতে তিনি বলেন, ‘আমি আল্লামা আহমদ শফীর নীতি ও আদর্শের ওপর অবিচল আছি এবং আজীবন থাকব। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আহ্বায়ক কমিটির প্রতিও সমর্থন নেই। এই কমিটিকে আমি বৈধ মনে করি না।’ বিবৃতিতে তিনি গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জের মধুপুরে অপ্রত্যাশিত ঘটনাবলির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।

এই বিষয়ে জানতে মাওলানা আবদুল হামিদকে ফোন করলে তাঁর খাদেম পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, ‘হুজুর ব্যস্ত। আপনারা চাইলে বিবৃতিটি ছাপতে পারেন।’

প্রসঙ্গত, হেফাজতের হরতাল কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তখন মাওলানা আবদুল হামিদ নিজেও আহত হয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাঁর চার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। এখনো তাঁরা কারাগারে আছেন।

এদিকে মার্চে সহিংসতার ঘটনায় হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। প্রায় অর্ধশত নেতার বিষয়ে অনুসন্ধানপ্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই সময় হেফাজতের কমিটি ও পাল্টা কমিটি গঠনের তৎপরতায় সংগঠনের অনেকে বিরক্ত। তবে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। নেতাদের একটা অংশের ধারণা, সরকারের চাপ থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব রাজনীতি-সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করতে যাচ্ছেন।