ভাই কাদেরকে যে কারণে সরালেন এরশাদ
গত ২০ মার্চ ছিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের ৯০-তম জন্মদিন। ওই দিন এবং এর পরদিন ২১ মার্চ এরশাদের সঙ্গে দলের অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের সঙ্গে, যিনি এরশাদের ছোট ভাইও। সেদিন ভাই কাদেরকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি।
বিশেষ করে ২১ মার্চ এরশাদের বারিধারার বাসায় ছোট ভাই জি এম কাদেরের সঙ্গে অনেক কথা বলেন। সেখানে উপস্থিত জাতীয় পার্টির একজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘ওই দিন স্যার (এরশাদ) জি এম কাদেরের প্রশংসা করেন এবং দোয়া করেন। স্যার বলেন, “তুমি (কাদের) খুব ভালো করছ। ভালো ভাবে দল চালাচ্ছ। দোয়া করি”।’
এর ঠিক এক দিনের মাথায় অর্থাৎ ২২ মার্চ জি এম কাদেরকে দল পরিচালনায় ব্যর্থ উল্লেখ করে কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করেন এইচ এম এরশাদ। শুধু তা-ই না আজ ২৩ মার্চ শনিবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও জি এম কাদেরকে সরিয়ে দিয়ে সেই পদে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে নিয়োগ করেছেন এরশাদ।
এইচ এম এরশাদ নিজেই সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা।
ভাই ও দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদের এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন জি এম কাদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, পুরো বিষয়টা অদ্ভুত লেগেছে।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভাই এরশাদের নির্দেশে অংশ নেননি জি এম কাদের। অথচ ওই নির্বাচনে দলের অনেক নেতাই এরশাদের নির্দেশ মানেননি। ভাইয়ের প্রতি জি এম কাদেরের আনুগত্য নিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই। তাহলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ কেন হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের পক্ষে যেমন নেতারা আছেন, তেমনি বিরোধী পক্ষও রয়েছে। ফলে এ নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
জি এম কাদেরকে যাঁরা পছন্দ করেন তাঁরা এইচ এম এরশাদের এই হঠাৎ সিদ্ধান্তের পেছনে দুটি কারণ দেখছেন। এক. জি এম কাদেরের কারণে দলের দলের প্রভাবশালী নেতারা দলের ওপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারছেন না। দুই. ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি অংশও জাতীয় পার্টিকে তাদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারছে না। জিএম কাদের পুরোপুরি সরকারের ‘মুঠোর’ লোক নন বলেই তাঁদের মত। মূলত এই দুটি কারণে এইচ এম এরশাদকে ‘ভুল’ বুঝিয়ে বা ‘চাপে’ ফেলে জি এম কাদেরকে দলের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
এই পক্ষটি এর পেছনে জাতীয় পার্টির পাঁচজন নেতার হাত আছে বলে মনে করছে। তাঁদের চারজনই আওয়ামী লীগের বা ক্ষমতাসীনদের পছন্দের লোক বলে দলে পরিচিত। একজন এরশাদের ঘনিষ্ঠ, যাঁকে সরকারপন্থীদের অনেকেই পছন্দ করেন না।
এরশাদের বনানী কার্যালয়ে বসেন এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, জি এম কাদেরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি অংশের সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই ভালো যাচ্ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করা এবং পরবর্তী সময় ওই সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে সমালোচনা করাটা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই ভালোভাবে নেননি। ওই সময় থেকে দূরত্ব শুরু। এটা আর কখনো ঠিক হয়নি।
অপর পক্ষটি অবশ্য বলছে, এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের মনোমালিন্যই এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সবাই তো বলছে আমি দল ভালো পরিচালনা করছিলাম। তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত, তা বলতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে চার-পাঁচজন আছেন যাঁরা চাননি আমি থাকি। এঁরা জ্যেষ্ঠ সদস্য। তারাই এইচ এম এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে এমনটা করেছেন।’
আপনার ব্যাপারে এইচ এম এরশাদের কোনো আপত্তি বা অসন্তোষ ছিল কি না? জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, ‘না, তিনি আমাকে পছন্দ করেন। আমি যেভাবে দল চালাচ্ছি, সেটাকে সমর্থন করেন।’ কাদের বলেন, ‘যেদিন আমাকে অপসারণ করা হলো (২২ মার্চ) তার আগের দিন (২১ মার্চ) তিনি আমাকে দোয়া করেছেন। বলেছেন, “তুমি খুব ভালো দল চালাচ্ছ। যেভাবে এগোচ্ছে সেভাবে এগিয়ে যাও”।’
অবশ্য এরশাদের ঘনিষ্ঠ এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় চেয়ারম্যান দলের ভালোর জন্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, জি এম কাদের হয়তো আবেগের বশে দলের কোনো কোনো নেতাকে দায়ী করছেন। কিন্তু এটা একেবারেই ঠিক না। দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ যে সিদ্ধান্ত দেন, সেটাই সবাই মেনে নেন।