বিএনপির তিন প্রার্থীর ভোট বর্জন, আছে সংঘর্ষের ঘটনাও
কুমিল্লা চান্দিনা পৌরসভা নির্বাচনে নারী পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। দ্বিতীয় ধাপে আজ শনিবার দেশের ৬০টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া বেশির ভাগ পৌরসভায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনটি পৌসভায় বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এ ছাড়া কয়েকটি কেন্দ্রে গোলযোগ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ভোট হচ্ছে এমন কয়েকটি এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি, গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। ৬০ পৌরসভায় মেয়র হতে লড়ছেন মোট ২২১ জন প্রার্থী।
বেলা ১১টার পরে মেয়র পদে নির্বাচন করা বিএনপির তিনজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। তাঁরা হলেন রাজশাহীর ভবানীগঞ্জের বিএনপি প্রার্থী আবদুল রাজ্জাক, বাগেরহাটের মোংলা এবং কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী।
গোলযোগ হয়েছে ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভার একটি কেন্দ্র। সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হন। বাগেরহাটের মোংলায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সংঘর্ষে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে এক মেয়রপ্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ চলে। তবে বেলা ১১টার পর কোথায় কোথায় বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া, কেন্দ্রে এজেন্টকে মারধর, বিএনপির চিহ্নত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে।
রাজশাহী আড়ানী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে গত দুদিন ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও আজ সেখানে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ হচ্ছে। তবে ভোটের আগের রাতে সেখান থেকে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই অবস্থা নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায়ও। সেখানকার ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল কাদের ধারাবাহিক অভিযোগ করলেও আজকের ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় এই নেতা।
দ্বিতীয় ধাপের ৬০টির মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হচ্ছে। বাকি ৩২টিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হবে।
৬০ পৌরসভাতে মেয়র প্রার্থী ২২১ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ৭৪৫ এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৫০৮টি।
যেসব পৌরসভায় ভোট চলছে
দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ (ব্যালট), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), বেলকুচি (ব্যালট), উল্লাপাড়া (ব্যালট), সদর (ব্যালট) ও রায়গঞ্জ (ব্যালট), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ (ব্যালট), কুষ্টিয়া সদর (ব্যালট), কুমারখালী (ইভিএম), ভেড়ামারা (ব্যালট) ও মিরপুর (ব্যালট), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (ব্যালট) ও কমলগঞ্জ (ব্যালট), নারায়ণগঞ্জের তারাবো (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী (ব্যালট), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ (ব্যালট) ও সদর (ব্যালট), দিনাজপুর সদর (ব্যালট), বিরামপুর (ব্যালট) ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া (ব্যালট), ফরিদপুর (ইভিএম), সাথিয়া (ব্যালট), ঈশ্বরদী (ব্যালট) ও সুজানগর (ব্যালট), রাজশাহীর আড়ানী (ইভিএম), ভবানীগঞ্জ (ব্যালট) ও কাকনহাট (ইভিএম), সুনামগঞ্জ সদর (ব্যালট), ছাতক (ব্যালট) ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), হবিগঞ্জের মাধবপুর (ব্যালট) ও নবীগঞ্জ (ব্যালট), ফরিদপুরের বোয়ালমারী (ব্যালট), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম) ও মুক্তাগাছা (ব্যালট), মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর (ব্যালট) ও গোপালপুর (ব্যালট), বগুড়ার শেরপুর (ব্যালট), সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও সান্তাহার (ইভিএম), পিরোজপুর সদর (ইভিএম), নেত্রকোনার কেন্দুয়া (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকুপা (ইভিএম), পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদর (ইভিএম), বান্দরবান জেলার লামা (ব্যালট), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী (ইভিএম), কুমিল্লার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জ সদর (ব্যালট) ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহাট (ইভিএম) এবং বাগেরহাটের মোংলা (ইভিএম) পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হচ্ছে।
দেশে পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। এ ছাড়া তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে।
এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হয়। এর মধ্যে ১৯টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী এবং তিনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি দুটি পৌরসভায় জয় পেয়েছেন বিএনপির প্রার্থী।