বাজেটে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা না থাকা লজ্জার: জাফরুল্লাহ চৌধুরী

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ফাইল ছবি

বাজেটের কোথাও সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, এটা লজ্জার, ন্যক্কারজনক। তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন বদলাতে হবে। আমলাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে শাসনভার দিতে হবে। তবেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে বীর উত্তর মেজর হায়দার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ‘একজন নাগরিকের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ বাজেটের তদবির ও গতানুগতিকতা’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সভায় মূল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান রাশেদ আল তিতুমীর। আরও বক্তৃতা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম ও গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক। সভার সঞ্চালনায় ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাঘববোয়ালদের জন্যই ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে শ্রমিক ও ক্ষুদ্র খামারি কারও জন্য কিছু নেই। জনপ্রশাসন তথা আমলাদের কাছে যাচ্ছে ১৯ শতাংশ।

বিচার বিভাগের উন্নয়ন খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমানোয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিচার তো হয় না, অন্যায় হয়। এই খাতে বরাদ্দ কমানোয় আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট হয় না। তাই কমিশনের উন্নয়ন বাজেট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দেশে নতুন দরিদ্র তৈরি হয়েছে এবং জীবনযাত্রার সংকট চলছে বলে মনে করেন অধ্যাপক রাশেদ আল তিতুমীর। তিনি বলেন, এই জীবনযাত্রার সংকট শুধু বাইরে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেই কারণে অথবা জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, সেই কারণে নয়। এর যথেষ্ট অভ্যন্তরীণ কারণও আছে।

সভায় নুরুল হক বলেন, পদ্মা সেতু অবশ্যই সক্ষমতার পরিচায়ক। একই সঙ্গে গত ১৩ বছরে সরকার যে বর্বর ও অমানবিক কাজ করেছে। সেগুলোর জন্য তাদের নিন্দা সারা জীবন পেতে হবে। ৩ হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা, ৬০০ মানুষকে গুম করা, লাখ লাখ মানুষকে মামলার আসামি করা, ধর্মীয় নেতাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করাসহ এমন শত শত অপরাধ ও পাপ করে তা একটা পদ্মা সেতু দিয়ে মোচন হবে না বলে মন্তব্য করেন নুরুল হক।

বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘সবকিছুর বিকল্প দেখানো হচ্ছে। যেমন বেগুনের দাম বেড়েছে, তাই কুমড়া কেনার কথা বলা হয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু একবার যদি বলি, এই সরকার ঠিকভাবে কাজ করছে না। তার বিকল্প নিয়ে কথা বললে রাষ্ট্রদ্রোহ হবে। গণতন্ত্রের সীমাটাও সীমিত করে ফেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, “আমার অধীন থেকে গণতন্ত্র করতে হবে।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গত ১৩ বছরে বিনিয়োগ বাড়ছে সরকারি খাতে। বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি ঘটেছে কি সমানতালে? দেখা যাচ্ছে সমানতালে হচ্ছে না। ফলে একটা প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে না। কারণ, এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নীতি নেই।

সাকির অভিযোগ, সরকার বড় বড় প্রকল্প দেখাচ্ছে কিন্তু জনগণের জীবনমানের উন্নতি ঘটল কি না, সে বিষয়ে ন্যূনতম চিন্তা তাদের নেই।