এবার নিজেদের নেতৃত্বে আন্দোলন-নির্বাচনের ছক কষছে বিএনপি
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আগেই মাঠের রাজনীতিতে দলীয় অবস্থান শক্ত করতে চায় বিএনপি। সে লক্ষ্যে সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে আন্দোলনের ছক কষছে দলটি। পাশাপাশি এবারের আন্দোলন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। কোনো কারণে খালেদা জিয়া অসুস্থ হলে বা সরকার খালেদা জিয়াকে আবারও কারাবন্দী করলে সে ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনে মাঠে থাকবে দলটি।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে এসব কথা জানান। তাঁরা বলেন, সাম্প্রতিক দলের বৈঠকে বিএনপির সব নেতাই চান নিজেদের শক্তির ওপর আস্থা রাখতে।
ওই সূত্রগুলো বলেছে, আন্দোলনে যেতে মোটাদাগে চার দফা দাবি সামনে আনবে বিএনপি। এগুলো হলো ১. নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, ২. নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ৩. বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি এবং ৪. বিএনপির গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার। এ ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, হামলা-নির্যাতন বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বেশ কিছু দাবিও উত্থাপনের পরিকল্পনা আছে দলটির। সব মিলে ১০ থেকে ১২টি দাবি নিয়ে এগোতে পারে দলটি।
তবে কি বিএনপি জোটবদ্ধ আন্দোলন বা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে—এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির একজন দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টা এমন নয়। বিএনপি সব দলকে সঙ্গে নিয়েই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করতে চায়। ক্ষমতাসীন সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চায়। কিন্তু নেতৃত্বটা বিএনপি নিজের হাতেই রাখতে চায়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং নেতা-কর্মীরা যেন বিভ্রান্ত না হয়, সে জন্যই এমন চিন্তা। বিএনপি কোনো দলকেই দূরে ঠেলে দিচ্ছে না; বরং দলটি সব সময় চায় সরকারবিরোধী বড় জোট গঠন করতে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনের ফল বিএনপির জন্য ভালো হয়নি বলেই মনে করে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। সম্প্রতি দলের ধারাবাহিক সভায় বড় দল হিসেবে বিএনপিকে নেতৃত্বে থাকার জন্য নেতারা আহ্বান জানান। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী হাফিজউদ্দীন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মতো নেতারাও মনে করেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। নেতা জেলে থাকলেই তাঁকে বাদ দিয়ে এগোতে হবে—এমন ধারণা ঠিক নয় বলেই মনে করেন এই নেতারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনই দলের কৌশল নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেছেন, দলের ধারাবাহিক বৈঠক চলছে। বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য আসছে, মতামত আসছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। দাবিদাওয়া আদায়ে রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, শিগগিরই দলের করণীয় ও অবস্থান সম্পর্কে গণমাধ্যমের মাধ্যমে মানুষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মনে করেন, গত নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া কারাবন্দী ছিলেন। ওই সময় বিএনপি বলা যায় খালেদা জিয়াকে নেতৃত্বের বাইরেই রেখেছিল। দলের নেতারা সাম্প্রতিক বৈঠকে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি বলে তাঁদের মত জানিয়েছেন। তাই এবার জোট হলেও নেতৃত্ব বিএনপির চেয়ারপারসনের হাতেই রাখার পক্ষে অনেক নেতা মত দিয়েছেন। তা ছাড়া তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল যে ঐক্যবদ্ধ এবং এই নেতৃত্ব নিয়ে দলের মধ্যে যে কোনো দ্বিমত নেই, সে বার্তা তৃণমূলে পৌঁছাতে চান তাঁরা।
বিএনপির একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, সরকারবিরোধী দলগুলোকে একই ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে এবারও বিএনপি কাজ করবে। যারা আসতে চাইবে না, তারা যেন যুগপৎ বা নিজ নিজ আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকে, সে ব্যাপারেও বিএনপির পক্ষ থেকে দলগুলোর সঙ্গে থাকা হবে। তবে যারাই সরকারবিরোধী আন্দোলন করুক না কেন, বিএনপি সবার সামনে থাকতে চায়, পথ দেখাতে চায়। বিএনপির প্রায় সব নেতাই মনে করেন, সেই সক্ষমতা দলটির আছে।