এটা সম্পূর্ণ দেউলিয়া বাজেট: ঐক্যফ্রন্ট
সরকারের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে দেউলিয়া বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিরোধী এই জোট বলেছে, বাজেটে বরাদ্দের চেয়ে ঋণ বেশি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দায়বদ্ধতায় ফেলে দিচ্ছে সরকার।
আজ শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো এক বিবৃতিতে নেতারা বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন। ১১ জুন প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পেশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এটা সরকারের পুরো দেউলিয়া বাজেট। সরকারকে আগামী বছর ঋণ নিতে হবে ৫ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা, যেখানে আগামী বছরের প্রস্তাবিত বাজটে হলো ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার, অর্থাৎ ঋণ হলো বছরের সর্বমোট বাজেট বরাদ্দের চেয়ে বেশি। নেতারা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে এ রকম মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি হয়েছে বলে তাঁদের জানা নেই। এ ছাড়া তাঁরা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর শেষে নবজাতকের ওপর ঋণের বোঝা চাপবে প্রায় এক লাখ টাকা। সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দায়বদ্ধতায় ফেলে দিয়েছে।
ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের কথা মাথায় রেখেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা দরকার ছিল। এই সময়ে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন, যাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন ও জীবিকার সমাধান হয়।
সরকার যে অতিরিক্ত প্রণোদনা দিচ্ছে, তা কোত্থেকে আসবে সে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। তাঁরা রাজস্ব আদায়ে অবনতি ও অব্যবস্থাপনার কথাও বলেন। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে মানুষের কাছে অর্থ সরবরাহের ব্যবস্থাকে সহজলভ্য করতে হবে বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
তৈরি পোশাক খাতে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, ‘এই বিষয়গুলো আমাদের আগামী বাজেটে বিবেচনায় আনতে হবে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্সেও ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘আমরা বিগত ১০ বছরে দেখেছি, বাজেটে রাজস্ব ব্যয় চরমভাবে বেড়েছে। এই রাজস্ব ব্যয় যদি কমিয়ে না আনতে পারি, তাহলে আগামী বছরের সম্পূর্ণ লাল হয়ে ওঠা বাজেটকে কোনোভাবইে সবুজে আনা যাবে না।’
কালোটাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা করে বিরোধী এই জোট বলেছে, ‘বছরের পর বছর ধরে দেখছি, নামমাত্র কর দিয়ে অবধৈ সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির কী উত্তরণ হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত কারও কাছে বোধগম্য নয়। এখন সময় এসেছে এ ধরনের অবৈধ সম্পদ বাজয়োপ্ত করে এই বিপদের সময়ে দেশের করোনায় আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করা।’
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও তার সঠিক ব্যবহার হয় না বলে জানান ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তাঁরা আরও বলেন, অর্থনীতি বাঁচাতে হলে কৃষক ও কৃষি উভয়ই বাঁচাতে হবে। কেবল সেবা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সংকট মোকাবিলা করা যাবে না।
বিবৃতি দেন জাতীয় ঐক্যফন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন।