আমাদের মান-ইজ্জত আপনাদের হাতে: ইসি রফিকুল
সত্যিকার অর্থে নির্বাচন করেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তাই সঠিকভাবে আইন অনুসারে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য এসব কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. রফিকুল ইসলাম। আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণে ইসি রফিকুল এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে নির্বাচন করেন আপনারা। নির্বাচনের প্লানিংটা করে নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয়। আমাদের মান-সম্মান-ইজ্জত আপনাদের হাতে ন্যস্ত। নির্বাচনের সব দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন।’
প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া বেআইনি উল্লেখ করে ইসি রফিকুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা কাউকে ব্যালট পেপার দিয়ে দিলেন। উনি গোপন কক্ষে না গিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দিলেন। আমার ভোট আমি প্রকাশ্যে দিয়েছি, অসুবিধা কী—এ কথা অনেকেই বলতে পারেন। যেহেতু আইনে এটা পারমিট করে না, আপনারাও অ্যালাউ করবেন না। আপনাদের প্রশিক্ষণার্থীকেও (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা) বলবেন, ডোন্ট অ্যালাউ ইট। কারণ, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি এবং এগুলো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইসি রফিকুল বলেন, ‘নির্বাচনের দিন পত্রিকা, টেলিভিশনে আমরা দেখতে পাই, একজন ভোটার এসে বলছে, আমার ভোটটা দেওয়া হয়েছে গেছে। যদি নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ঠিকমতো তাঁর কাজটা করেন, তাহলে একজনের ভোট আরেকজনের দেওয়ার কথা নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনে ভোট দেওয়া হয়ে গেলেও ভোট দেওয়ার কিন্তু বিধান আছে। যদি আপনি সেটিসফায়েড হন, সে সত্যিকার অর্থে ভোটার, তার ভোটটা অন্য কেউ দিয়ে গেছে। জাস্ট অ্যালাউ হিম উইদাউট এনি কোশ্চেন। আপনারা যদি আইনটাকে ফলো করেন, তাহলে আর নির্বাচনকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবে না।’
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে দেখবেন নির্বাচন মানেই কিন্তু এক দিন। শিডিউলে ৪৬-৪৫ দিন বা যত দিনই থাকুক না কেন, নির্বাচন মানে এক দিন, মানে সেই নির্বাচনের দিন। এই নির্বাচনের দিন কী হলো, এটা যদি ঠিক না হয়, এটা যদি আইনানুগ না হয়, তাহলে পরে কিন্তু আমরা সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হব।’
ইসি রফিকুল বলেন, ‘প্রতিটি পত্রিকা খুললেই একটাই কথা—সবার ভেতরেই শঙ্কা, ভোট দিতে পারবেন কি না। ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না। আশঙ্কার কথা যদি বারবার বলা হয় ভোট দিতে পারবেন কি না, এই জিনিসটুকু আপনাদের ওপর নির্ভর করে। কারণ, আপনি যদি ব্যালটটাকে ঠিকমতো সংরক্ষণ করেন, কেন্দ্রটিকে ঠিকমতো তৈরি করেন, আপনার দায়িত্ব এবং আপনি যাদের ট্রেনিং দেবেন, তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন। আপনার কাছে ছবিসহ ভোটার তালিকা আছে। ঠিকমতো যদি আইডেন্টেফিকেশন হয়, যদি আপনারা কাউকে জোর করে বের করে না দিয়ে এজেন্টদের ঠিকমতো রাখেন, তাহলে কোনোক্রমেই একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না। প্রত্যেকের ভোটাধিকার আপনার কেন্দ্রের ভেতর নিশ্চিত করতে হবে। আপনার দায়িত্ব কিন্তু এটুকুই। ঠিকমতো তাকে আইনডেন্টিফাই করা, আইন অনুসরণ করে ব্যালট পেপার দেওয়া এবং ব্যালট দেওয়ার পরে তাকে দিয়ে গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা। উনি যেন আর দ্বিতীয়বার ভোট দিতে আসতে না পারেন, তার জন্য ওনার আঙুলে কালো কালি দিয়ে চিহ্নিত করা। কোনো ভোটারকে চিহ্নিত না করা পর্যন্ত তাঁকে ভোট দিতে ব্যালট পেপার দেবেন না। এগুলো যদি আপনারা করতে পারেন, তাহলে কোনোভাবেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।’
ইসি বলেন, ‘আপনারা যদি কাজগুলো করতে পারেন, তাহলে আমরা কি ভোট দিতে পারব, নাকি আগেই আমার ভোটটা দেওয়া হবে—এই শঙ্কা কি থাকতে পারে? আপনারা কী মনে করেন? এই শঙ্কাটা কি থাকতে পারে যে আমি কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারব না। কেন্দ্রে এলে পরে আপনারা ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।’
ইসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রে আসতে পারবে কি না, কেন্দ্রে গেলে তো ভোট দেব—এ রকমও প্রশ্ন আসছে। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আছে। দরকার হলে আমরা আরও ব্যবস্থা নেব যাতে করে ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে পারেন। তারপরও যদি কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয়, তাহলে আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’
ইসি রফিকুল বলেন, ‘আপনারা আপনাদের নিরাপত্তার জন্য চিন্তা করবেন না। একেবারে চৌকিদার থেকে সেনাবাহিনীর কেউ বাদ থাকবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সবাই যুক্ত থাকবেন। আপনাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই জীবন, মালামাল নিয়ে। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখবেন। আপনার অনুমতি ছাড়া তারা যেন কোথাও যেতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখবেন।...নির্বাচনের মালামাল গ্রহণের সময় সবকিছু আপনারা বুঝে নেবেন। এটা কিন্তু আইনে বলা নেই। তারপরও মালামাল, ব্যালট সবকিছু দেখে গ্রহণ করবেন। এমনও তো হতে পারে, সেখানে ব্যালটের পরিবর্তে সাদা কাগজ চলে এল, সে জন্য সবকিছু আপনারা বুঝে নেবেন। এগুলো আপনাদের দায়িত্বে থাকবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কারও কাছে এগুলো রেখে কোথাও যাবেন না। তারাও ব্যালটের অপব্যবহার করতে পারে, যদিও তারা তা করবেন না। তারপরও আপনি সার্বক্ষণিক এগুলোর সঙ্গে থাকবেন। কারণ এগুলো নেওয়ার সময় আপনি (প্রিসাইডিং কর্মকর্তা) স্বাক্ষর করে নেবেন।’ ‘তাই এর দায়দায়িত্বও আপনার’ বলে যোগ করেন তিনি।