২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আ.লীগ ও জাপার দুই প্রার্থীই প্রচারণায়

একাদশ সংসদ নির্বাচন
একাদশ সংসদ নির্বাচন

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট ১ আসনে (সদর ও পাঁচবিবি) জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আ স ম গোলাম মোক্তাদির প্রচারণা শুরু করেছেন। গতকাল রোববার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বেলা ১১টার দিকে জয়পুরহাট শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানের স্মৃতিসৌধে তিনি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
সেখান থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে গোলাম মোক্তাদির নির্বাচনী মিছিল বের করেন। সেটি শহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় শহরের বিভিন্ন এলাকায় জাপার পক্ষে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছুল আলম কয়েক দিন ধরেই প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তিনি গতকাল বিজয় দিবস উপলক্ষে জয়পুরহাট পৌর কমিউনিটি সেন্টারে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বিকেলে পাঁচবিবি বাজারে বিজয় দিবস উপলক্ষে জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন। সন্ধ্যায় শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এ আসনে আরও চারজন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন বিএনপির ফজলুর রহমান, বাসদের ওয়াজেদ পারভেজ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জহুরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী আলেয়া বেগম।
লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোক্তাদির প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জাপার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা দেশে ২৬ জন প্রার্থী মহাজোট থেকে দলের হয়ে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া ১৪২ জন প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন করছেন। তিনিও জয়পুরহাট-১ আসনে জয়ের লক্ষ্যে নির্বাচন করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছুল আলম বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে জেলায় বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগ, ভয়াবহ সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে এবার ভোটাররা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগ এবার জেলার দুটি আসনেই জয় লাভ করবে, এ ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’
বিএনপি প্রার্থী ফজলুর রহমান সন্ধ্যার পর পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ড, হারাইল, মুসলিম নগরসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে তাঁদের দল ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রতি মানুষের বিপুল সাড়া পাচ্ছেন। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা ভোট দিতে পারলে তিনি জয়ী হবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, আসনটি বিএনপিজামায়াত-অধ্যুষিত। এর মধ্যে মহাজোটে থেকেও জাপার প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করছেন। জাপার কমবেশি কিছু ভোট আছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ক্ষতি হবে। আর জেলা জামায়াতের আমির ফজলুর রহমান সাঈদ স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তিনি তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জামায়াত আদর্শগত কারণে বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে নির্বাচনে জাপার প্রার্থী খন্দকার ওলিউজ্জামান ১ হাজার ৫৯২, জামায়াতের প্রার্থী আব্বাস আলী খান ৪৩ হাজার ১৬৯, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্বাস আলী মণ্ডল ৪৮ হাজার ৪৩ পান। এ আসনে ৪৮ হাজার ১২৭ ভোট পেয়ে বিএনপির প্রার্থী গোলাম রব্বানী সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাপার প্রার্থী আবদুল হাকিম মণ্ডল ২০ হাজার ৫৬১, জামায়াতের প্রার্থী আব্বাস আলী খান ৩৭ হাজার ৪৪৭ ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্বাস আলী মণ্ডল ৬০ হাজার ৫০৫ ভোট পান। বিএনপির প্রার্থী আবদুল আলীম ৯১ হাজার ২৭৬ ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০০১ সালে জাপার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ৮ হাজার ৭৪ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্বাস আলী মণ্ডল ৮০ হাজার ৮৯৮ ভোট পান। বিএনপির প্রার্থী আবদুল আলীম ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩০ ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জাপা ও জামায়াতের প্রার্থী অংশ নেননি। বিএনপির প্রার্থী মোজাহার আলী প্রধান আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাজা সামছুল আলমকে ৩৪ হাজার ২৯২ ভোটে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে জাপার প্রার্থী আ স ম গোলাম মোক্তাদির তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছুল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন।
মহাজোটের শরিক দল হয়েও জাপার প্রার্থী থাকার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী বলেন, জাপার প্রার্থী ও নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির তিনজন নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন দল যতই বাধা দিক না কেন, বিএনপি কোনো হাঙ্গামায় যাবে না। তারা ভোটারের মন জয় করবে।
িজুর রহমান ও জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ভোটাররা যদি কেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান, তাহলে জয়পুরহাটে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত।
জয়পুরহাট-১ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯। নারী ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৬ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৩।