অবশেষে রাজশাহীতে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি
অবশেষে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার সমাবেশ চলবে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তবে বিএনপি চেয়েছিল মাদ্রাসা মাঠ। দেওয়া হয়েছে মাঠের পাশের রাস্তা। সেখানেই গতকাল রাতে বিএনপি মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে রাত ১১টার দিকেও মঞ্চ নির্মাণ চলছিল।
এদিকে সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে বিভাগের বিভিন্ন পথে বাস বন্ধ করে দেওয়া এবং বিএনপির ৩৮৮ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বেলা ১১টায় রাজশাহী নগরের মালোপাড়ায় বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন, রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকত, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকারসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান বলেন, কোনো বাধাই বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ বন্ধ করতে পারবে না। এই অবৈধ সরকারের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন তাঁদের অসহযোগিতা করছে। ১২ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য প্রশাসনে আবেদন করা হয়। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের আবেদন নাকচ করে দেয়। স্কুলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে মর্মে ওই মাঠসংলগ্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক তাদের কাছে একটি আবেদন করেছেন—এ জন্য অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এটা সত্য নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে নগরের মণিচত্বর, গণকপাড়া ও ফায়ার সার্ভিস মোড়ে সমাবেশ করার জন্য আবেদন করা হলেও গতকাল সংবাদ সম্মেলন করা পর্যন্ত প্রশাসন অনুমতি দেয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন তিনি।
সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান আরও বলেন, অনুমতি না দিলেও মাদ্রাসা মাঠেই বিভাগীয় সমাবেশ করা হবে। কোনো বাধাই তাঁদের সমাবেশ পণ্ড করতে পারবে না। গভীর রাতের সরকার বিএনপিকে নিয়ে তামাশা শুরু করেছে। এই সমাবেশ নিছক কোনো সমাবেশ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সমাবেশ খালেদা জিয়া ও দেশের জনগণের মুক্তির সমাবেশ। সমাবেশ বন্ধ করতে ইতিমধ্যে এই ফ্যাসিস্ট সরকার বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহীতে যেন নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ না আসতে পারে, তার জন্য যানবাহন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না। বিএনপির যে জোয়ার বইছে, এই জোয়ারে সব বাধা ঝড়ের গতিতে উড়ে যাবে। নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণকে সব বাধা অতিক্রম করে মাদ্রাসা মাঠে সময়মতো উপস্থিত হতে পুনরায় আহ্বান জানান তিনি। সেই সঙ্গে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সমাবেশ সফল করার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন তিনি।
এদিকে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, এই সমাবেশকে ঠেকানোর জন্য গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে মোট ৩৮৮ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত শুধু রাজশাহীতে ৮০ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহী বিভাগের সব পথে চলাচলকারী বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এসব করেও সমাবেশ ঠেকানো যাবে না। মাদ্রাসা মাঠেই সমাবেশ হবে।
গতকাল বিকেল পৌনে চারটার দিকে রাজশাহী নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনালে গিয়ে জানায় যায়, তখনই ছয়টি কাউন্টার থেকে আর বাস না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাউন্টার মাস্টাররা জানিয়েছেন, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তাঁদের বাস ছাড়তে বারণ করা হয়েছে।
এ সময় রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী থেকে আঞ্জু আরা ও সূর্য আরা নামের দুই নারী পরিবারের পাঁচ–ছয়জন সদস্য নিয়ে তানোরে যাওয়ার জন্য বাস খুঁজছিলেন। বাস না পেয়ে তাঁদের ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশায় উঠতে দেখা যায়। আঞ্জু আরা বলেন, বিপদে পড়েছেন। আর কিছু করার নেই। তারা অটো নিয়েই যাবেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমানের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হয়তো সন্ধ্যার পর তারা সেটা হাতে পেয়েছে। গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তিনি বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, শুধু তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হয়নি।