বাংলাদেশে যেমন ‘জুলাই বিপ্লব’ ঘটে গেছে, তেমনি ফিলিস্তিনের মাটিতেও একদিন ‘জুলাই’ আসবে বলে আশা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কিছু শক্তি এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও ভারতের সংসদে পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিলের বিরুদ্ধে এনসিপির ঢাকা মহানগর কমিটি আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
গোয়েন্দা তৎপরতার জন্য ইসরায়েল থেকে আওয়ামী লীগের আমলে যেসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন আখতার হোসেন। এ ধরনের প্রতিটি চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশকে উচ্চকণ্ঠ হতে সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
যত দিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা না আসে, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, ফিলিস্তিনের মানুষেরা গণহত্যা থেকে মুক্তি না পায়, তত দিন পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো বন্ধুত্ব হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন এনসিপির এই শীর্ষ নেতা।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের মধ্যে থেকেও যে গুটিকয়েক মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছেন, সেই মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার কারণে যাঁদের গ্রেপ্তার-নিপীড়ন করা হচ্ছে, তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তিনি।
স্বার্থের রাজনীতি বন্ধ করে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
এনসিপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, গাজাবাসীর জন্য পুরো বিশ্ব আজকে থমকে গেছে। নৃশংসতায় একের পর এক ধাপ অতিক্রম করছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা ক্রমশ জঘন্য থেকে জঘন্যতর হচ্ছে।
বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল
ইসরায়েলের নৃশংসতার পাশাপাশি ভারতের সংসদে পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিলের কঠোর সমালোচনা করে সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির নেতারা।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘ভারত সরকার যে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত করেছে, এনসিপির পক্ষ থেকে আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, এটা নিতান্তই বৈষম্যমূলক এবং ভারতের মুসলমানদের জন্য নিপীড়নের আরেকটি পথকে উন্মোচন করা হয়েছে। ভারতের মুসলমান ও গণতন্ত্রকামী শক্তিগুলো এই বিলের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। সেসব কর্মসূচির প্রতি আমরা সংহতি জানাই।’
ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল থেকে সরে এসে ভারত সরকার আগের আইনে ফিরে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এনসিপির এই নেতা।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব লুৎফর রহমান, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশের পর শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এনসিপির নেতা–কর্মীরা। মিছিলটি বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয় পর্যন্ত যায়। মিছিলে নেতা–কর্মীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের মানুষের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর মধ্যে ছিল ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, জেনোসাইড নো মোর’।