সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি
আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ ও সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ)। সংগঠন দুটি বলেছে, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু স্বৈরাচারী ব্যবস্থা এখনো বহাল আছে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা এ কথা বলেন। এর আগে বামপন্থী সাত ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট গতকাল মঙ্গলবার মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান জানায়। এই জোটের বাইরে থাকা ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা আজ তাঁদের বক্তব্য জানাল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাত দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ ও সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন; ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার ও নিহত-আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ; আবাসিক হলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও সন্ত্রাস-দখলদারত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, ছাত্রসংগঠন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে হলে হলে সন্ত্রাস-দখলদারত্ববিরোধী মনিটরিং সেল গঠন, মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে সিট বণ্টন; দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা; সারা দেশে সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ উপাচার্য-প্রক্টরসহ দায়ী প্রশাসনের ব্যক্তিদের অপসারণ; আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আন্দোলনকারী সব ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি ও দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনামলে যেসব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ধারাবাহিকভাবে লড়াই পরিচালনা করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ও মতামতের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, হাসিনা পদত্যাগের পর সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি যে বৈঠক করেছেন, সেখানে সব ছাত্র নেতৃত্ব ও সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে আহ্বান জানানো হয়নি। বরং গণহত্যার জন্য দায়ী যুদ্ধাপরাধী দল ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন, যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু স্বৈরাচারী ব্যবস্থা এখনো বহাল আছে উল্লেখ করে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এক স্বৈরাচারের বদলে আরেক ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনস্থাপিত করার জন্য আন্দোলন করেনি। আমরা মনে করি, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার বিজয়ের প্রথম ধাপ অর্জিত হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণের দ্বিতীয় ধাপটি ব্যাহত হয়েছে।
সংগঠন দুটি বলেছে, হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরপরই একটি মহল দেশব্যাপী লুটতরাজ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও মানুষ হত্যার উৎসবে মেতেছে। আমরা অবিলম্বে এই হামলা, লুটপাট, ভিন্নমতাবলম্বী ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নির্মম হামলা-নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানাই। আজ সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও এই ঘৃণ্য আক্রোশ যারা চরিতার্থ করছে, তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের প্রতি জানাচ্ছি এবং এই অন্ধকারের অপশক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।