আবদুল বাছিত খেলাফত মজলিসের আমির ও আহমদ আবদুল কাদের মহাসচিব পুনর্নির্বাচিত
মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ খেলাফত মজলিসের আমির এবং আহমদ আবদুল কাদের মহাসচিব পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর শাহজাহানপুরে মাহবুব আলী ইনস্টিটিউটে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার অধিবেশনে তাঁদের আমির ও মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। তাঁরা ২০২৫-২৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করবেন। এই অধিবেশনে দলের প্রধান দুই নেতা ছাড়াও ১১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। পরে সবার শপথ অনুষ্ঠান হয়।
খেলাফত মজলিস জানিয়েছে, মজলিসে শুরার এই অধিবেশনে দলের আমির আবদুল বাছিত আজাদকে প্রধান করে ৬৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদে ৩৫ জন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নবনির্বাচিত নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা হলেন নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসাইন, আহমদ আলী কাসেমী, হাফিজ মজদুদ্দিন আহমদ, আবদুল্লাহ ফরিদ, আবদুল কাদির সালেহ, সিরাজুল হক, সাইয়্যেদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, আবদুল হামিদ; যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, এ বি এম সিরাজুল মামুন, মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, মো. আবদুল জলিল, সদরুজ্জামান খান, এ এ তাওসিফ; সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, কাজী মিনহাজুল আলম, আহমদ আসলাম, সামছুজ্জামান চৌধুরী, আবদুল মজিদ, মাওলানা এস এম খুরশিদ আলম, শেখ সালাহ উদ্দিন; সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, হাসানুজ্জামান হেলাল, আসাদুল্লাহ, খন্দকার শাহাবুদ্দিন আহমদ, আবদুল হক আমিনী, বোরহান উদ্দিন সিদ্দিকী, আবু সালমান, আবদুল হান্নান; বায়তুলমাল সম্পাদক আবু সালেহীন; সমাজকল্যাণ ও শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ; পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম মাহবুবুল আলম; শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আবু সালমান; প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম; সাংস্কৃতিক সম্পাদক রুহুল আমীন সাদী; প্রচার, প্রকাশনা ও তথ্য সম্পাদক আবদুল হাফিজ খসরু; স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রিফাত হোসেন মালিক; দাওয়াহ–বিষয়ক সম্পাদক শিহাবুদ্দীন; শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আবদুল করিম; আইনবিষয়ক সম্পাদক শায়খুল ইসলাম; ওলামাবিষয়ক সম্পাদক আলী হাসান উসামা; যুববিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম; কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান; মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা নাসরিন বেগম; মহিলাবিষয়ক সহকারী সম্পাদিকা রায়হানা লোপা প্রমুখ।
প্রকাশ্য কাদা–ছোড়াছুড়ি বন্ধের আহ্বান
শুরার অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ মন্তব্য করেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে গণ-অভ্যুত্থানের সুফল স্থায়ী হবে না। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে বিভেদ ও কাদা–ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সুসংহত করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। এর জন্য গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্য অটুট রাখতে স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্তদলীয় সংলাপ অব্যাহত থাকা দরকার।
খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে পথচলা শুরু করলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা আনতে সক্ষম হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আবার কিছু অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে তাদের সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেগুলো হলো সরকার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসরদের দেশে ফিরিয়ে এনে এখনো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেনি। জুলাই গণহত্যার দায়ে গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি। ৫ মে গণহত্যাসহ খুনি শেখ হাসিনার আমলে সংঘটিত সব গুম ও হত্যাকাণ্ডের আসামিদের বিরুদ্ধে এখনো সুস্পষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি প্রসিকিউশন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। ফ্যাসিস্টের তাঁবেদার কিছু আমলা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রশাসনে এখনো ঘাপটি মেরে রয়েছেন। শহীদ ও আহত বেশ কিছু পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় শতাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর ও ভ্যাট আরোপের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখনো পাচার করা কোনো অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারেনি। গত সেপ্টেম্বর মাসে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিতে সক্ষম হয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন
অন্তর্বর্তী সরকারকে উপরোল্লিখিত সীমাবদ্ধতাগুলো উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান খেলাফত মজলিসের আমির। এ ছাড়া আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসকে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে প্রতিস্থাপন করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার নিশ্চয়তাসহ সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকি পরিবর্তনের চেয়েও সেবা ও নৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
শুরার অধিবেশনে সারা দেশের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পর্যালোচনার পাশাপাশি পাঁচটি বিষয়ে প্রস্তাব পাস করা হয়। এর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের ওপর শোকপ্রস্তাব, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য, অন্তর্বর্তী সরকার, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভারতীয় আধিপত্যবাদ, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অন্যতম।