সকালে দেবর–ভাবীর নাশতার পর বিকেলে ঐক্যের ডাক
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে এক টেবিলে নাশতার পর বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো বক্তব্যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
লিখিত বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘আমি সব সময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই।’ পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই ওঠে না উল্লেখ করে তিনি পার্টিতে একসময় যাঁরা যুক্ত ছিলেন ও নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তাঁদেরও দলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি দলের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করতে শিগগিরই দলের নেতাদের সঙ্গে বসবেন বলেও জানিয়েছেন রওশন এরশাদ।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে গত রোববার দেশে ফিরেছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। ঢাকা ফিরে তিনি গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে থাকছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এই হোটেলে গিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন জি এম কাদের। দুজনে এক টেবিলে বসে নাশতাও করেছেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আবু হোসেন (বাবলা)। তিনি প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে রওশন এরশাদ আরও বলেন, ‘আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি, আমি পার্টির সব এমপি, প্রেসিডিয়াম এবং অন্যদের সঙ্গে যেকোনো বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বসব। আমি নিশ্চিত, সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারব।’ যাঁরা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু, কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তাঁদেরও দলে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির সমালোচনা করে রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের নেতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমিসহ দলের হাজার হাজার নেতা–কর্মী জেল খেটেছিলাম। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেওয়া হয়নি। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে কতশত নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলব কী করে? তা ছাড়া আমরা তাদের শাসনামলে “হাওয়া ভবনের” দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপতৎপরতা দেখেছি।’ বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ত্রুটি রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন এবং আমি তাঁকে অনুরোধ করব এই বিষয়গুলোকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সমাধান করতে এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আরও বেশি আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে।’
সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, ‘বর্তমান ভূরাজনীতি বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত এবং সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।’
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে রওশন এরশাদ বলেন, ‘রংপুরে আমাদের প্রিয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্নেহধন্য এবং তাঁর পছন্দের যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই লাঙ্গলের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হবে। যাঁকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে, তাঁর নির্বাচন ও বিজয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল হিসেবে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পাবে।’