মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে শিগগিরই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের আলোচনা শুরু হয়েছে। বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে আরও সাত-আটজন নতুন মুখ যুক্ত হতে পারেন। এ যাত্রায় পূর্ণ মন্ত্রীর চেয়ে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীই বেশি হতে পারেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তিন-চারজন মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন, এমন আলোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কবে নাগাদ মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত হবে, এর সুনির্দিষ্ট তারিখ কেউ বলতে পারছেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, খুব শিগগির মন্ত্রিসভার এই সম্প্রসারণ হতে পারে। এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। এর পর থেকেই আলোচনা আছে যে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা পুনরায় সম্প্রসারিত হবে।
৪৮ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য মনোনয়ন দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দিয়েছে দুজনকে। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ৫০ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার পরিপত্রও জারি করা হয়েছে। এখন শপথ নিলেই তাঁরা সংসদে যোগ দিতে পারবেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী বাদে পূর্ণ মন্ত্রী রয়েছেন ২৫ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। ৩৭ সদস্যের এই মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই। এর আগের মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী এবারের মতোই ২৫-২৬ জনে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ২০ জনের মতো। এ ছাড়া তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। সব মিলিয়ে আগের মন্ত্রিসভা ছিল ৪৯ সদস্যের।
আলোচনায় যেসব মন্ত্রণালয়
সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বিগত মন্ত্রিসভার সমান বা এর কাছাকাছি সংখ্যায় নিয়ে যাওয়া হবে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা। কারণ, এখনো দুটি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দুজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা আলোচনায় আছে।
আগের মন্ত্রিসভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি এবার সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। তাঁকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করা হয়েছে।
২০১৪ সালের আওয়ামী লীগ সরকারে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। গত সংসদে বাদ পড়েন। এবার আবার সংরক্ষিত আসনে নারী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে—এমন আলোচনা চলছে।
বর্তমান মন্ত্রিসভা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বড় বড় বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এসব মন্ত্রণালয়ে অতীতে একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত একজন সদস্যকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। ওই নারী সদস্য এবার দ্বিতীয় দফায় সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরপর দুবার সংরক্ষিত নারী সদস্য হওয়ার নজির কম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী ছাড়াও প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী দেওয়া হয়েছে। এবার এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে এককভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাজুল ইসলাম। এই মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। একটি সূত্র বলছে, উত্তরবঙ্গ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কম হয়েছে। স্থানীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদটি উত্তরবঙ্গের কেউ পেতে পারেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে যশোর এবং কিশোরগঞ্জের দুজন সংসদ সদস্যের বিষয়ে আলোচনা আছে। দুজনেরই পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি একজন পূর্ণ মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে বরাবরই। এবার এখন পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী কিংবা বিভাগ ভাগ করে আরেকজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় আছে। চট্টগ্রামের একজন সংসদ সদস্যের কথা শোনা যায়।
পুরোনোদের চেষ্টা আছে
২০০৯ ও ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের জায়গা দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর তারা সরকারে আসতে পারেনি। এবারও কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বর্তমান সরকার পুরোপুরি আওয়ামী লীগের। এতে জোট বা শরিকদের জায়গা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, দলের সভাপতিমণ্ডলী এবং সম্পাদকমণ্ডলীর তিন-চারজন নেতা এবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তবে তাঁরা এখনো আশা ছাড়েননি। এসব নেতা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিভাগ-জেলাও বিবেচনায়
বর্তমান মন্ত্রিসভায় ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাধান্য দেখা গেছে। রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব কম। বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে আগের মন্ত্রিসভার চেয়ে এবার কম প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এই বিবেচনায় এবার কম পাওয়া বিভাগ ও দীর্ঘদিন মন্ত্রী না থাকা জেলাগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
রংপুর বিভাগের টিপু মুনশী, নূরুল ইসলাম সুজন ও নুরুজ্জামান আহমেদ—এই তিনজন বিগত মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী ছিলেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও জাকির হোসেন। এবার এই বিভাগ থেকে আবুল হাসান মাহমুদ আলী পূর্ণ মন্ত্রী ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী আছেন। রাজশাহী বিভাগে আগের মন্ত্রিসভায় একজন পূর্ণ মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবার আছেন একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, রাজশাহী বিভাগের আরও একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন। রংপুর বিভাগও একজন প্রতিমন্ত্রী পেতে পারে। খুলনা বিভাগে গত মেয়াদে তিনজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবার দুজন পূর্ণ মন্ত্রী পেয়েছে। আরেকজন প্রতিমন্ত্রী যোগ হতে পারে। বরিশাল বিভাগে একজন পূর্ণ এবং একজন প্রতিমন্ত্রীর বদলে এবার দুজন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন।
মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের বিষয়ে সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়—এগুলোয় কোনো না কোনো সময় মন্ত্রী আসবেন। তিনি এ-ও বলেছিলেন, সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের পর নির্বাচিত নারীদের মধ্য থেকে মন্ত্রী হতে পারেন।