জাতীয় পার্টি থেকে বাদ পড়া নেতারা একজোট হওয়ার চেষ্টা করছেন
জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বাদ পড়া নেতারা একজোট হওয়ার চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, হয় তাঁরা সংগঠিত হয়ে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জ্যেষ্ঠ নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পৃথক অবস্থান নেবেন। না হয় ‘তৃণমূল জাতীয় পার্টি’ নামে দল গঠন করে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, তারই অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার জাপার কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বেশ কিছু নেতা-কর্মী জোটবদ্ধ হয়ে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাঁদের সংখ্যা ৬৬৮ বলে জানিয়েছেন, ‘গণপদত্যাগ’ কর্মসূচির আয়োজক শফিকুল ইসলাম। তাঁকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির আহ্বায়কের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হকের (চুন্নু) বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাঁদের নেতৃত্বে দল না করার কথা জানান।
অবশ্য জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬৬৮ জন নেতা-কর্মীর পদত্যাগের কথা বলা হলেও আমরা ছয়-সাত জনের নাম পেয়েছি। এটা সত্য নয়। বাকি যাঁদের জাতীয় পার্টির কর্মী বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা মূলত মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের লোকজন।’
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাপায় অস্থিরতা দেখা দেয়। নেতা-কর্মীদের একটি অংশ জাপার চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে দলের বনানীর কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা ভোটে ভরাডুবির জন্য এই দুই নেতাকে দায়ী করেন। এর জেরে দুই দফায় দলের চার নেতাকে দলীয় সব পদ–পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ ইয়া চৌধুরী। আরও কয়েকজনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় দল থেকে বাদ পড়া নেতারা এখন একজোট হওয়ার চেষ্টা করছেন। গতকাল পদত্যাগকারী নেতারা জাপার চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে নেতৃত্ব থেকে বাদ দিয়ে নতুন করে দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন। এ সময় অব্যাহতি পাওয়া নেতা সুনীল শুভ রায় ও ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আমানত হোসেন, খুরশীদ আলমসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা উত্তরের কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডের বেশ কিছু নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম পাঠান ও আমানত হোসেন ভাইস চেয়ারম্যান, সাহিন আরা সুলতানা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জি এম কাদের ও মুজিবুল হকের নেতৃত্ব থেকে দল করব না, এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। তবে আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করব। অনেকে ‘তৃণমূল জাতীয় পার্টি’ নামে দল করার করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে নতুন কিছু করার জন্য আলোচনা করব, ম্যাডামের (রওশন এরশাদ) নেতৃত্বেও যেতে পারি।’
যদিও বাদ পড়া নেতাদের তৎপরতাকে জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব গুরুত্ব দিতে চাইছে না। তারা মনে করছে, যাঁরা দলের প্রধান দুই নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন, তাঁদের কেউ কেউ নির্বাচনে সমঝোতার আসন না পেরে, কেউ আবার দলের মনোনয়ন না পেয়ে এবং চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচনে আর্থিক সুবিধা না পেয়ে, আবার কেউ নির্বাচন না করেই এসব অভিযোগ করছেন।
জাপা থেকে পদত্যাগকারী নেতারা ঢাকা মহানগর উত্তরের হাতিরঝিল, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা, আদাবর, তেজগাঁও, পল্লবী, মিরপুর, বাড্ডা ও রূপনগর থানা এবং এর অধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে রয়েছেন।
অবশ্য দলের ভেতরের এবং বাদ পড়া নেতাদের একটি অংশের এই তৎপরতা সম্পর্কে ‘কোনো মন্তব্য নেই’ বলে জানান জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কারও অধিকার আছে একটি দল ছেড়ে আরেকটি দল করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি না।’