২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে বিলুপ্ত করুন: হাফিজ উদ্দিন আহমেদ

জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদছবি: বিএনপির সৌজন্যে

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিলুপ্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, গণতন্ত্র উত্তরণ করতে হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই নির্বাচন কমিশনকে বিলুপ্ত করেন। এরা জনগণের নির্বাচন কমিশন না। এই নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে করেছে, এক দিন আগে করেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এই আহ্বান জানান। তিনি গণতন্ত্রে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত সংলাপে বসার কথাও বলেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাছে আমাদের অনুরোধ হলো, এ দেশের জনগণের স্টেকহোল্ডার (অংশীদার) হলো পলিটিক্যাল পার্টিগুলো (রাজনৈতিক দলগুলো)। যদি গণতন্ত্র চান, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে কথা বলুন। সংসদে অতীতে প্রতিনিধিত্ব আছে, এই ধরনের রাজনৈতিক দল অতীতে প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে, তাদের সঙ্গে দ্রুত আলাপ করুন। কীভাবে গণতন্ত্র উত্তরণ করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে তাদের কাছ থেকে সুপারিশ গ্রহণ করুন।’

‘পতিত স্বৈরাচারের প্রতিবিপ্লব রুখতে’ প্রধান উপদেষ্টাকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই বিপ্লব সফল পরিণতির দিকে যাক, আমরা এটাই চাই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি আমাদের গৌরব…আপনি শক্ত  হোন, নিজেকে দুর্বল ভাববেন না। বাংলাদেশের জনতা আপনাদের সঙ্গে আছে। সুতরাং কোনো দুর্বৃত্ত যাতে বাংলাদেশ অধিকার করতে না পারে, সে জন্য আপনারা ভূমিকা রাখবেন। বিপ্লবী চরিত্র গ্রহণ করে বিপ্লবীর মতো বাংলাদেশের সেবা করবেন, এটাই আমরা আশা করি।’

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব রুখতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নবনিযুক্ত এই নেতা বলেন, ‘ভবিষ্যতে কেউ যদি প্রতিবিপ্লব শুরু করতে চায়, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী আওয়ামী লীগ নেত্রী (শেখ হাসিনা) ও পতিত সরকারের সদস্যরা এই বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব করতে গেলে বর্তমান সরকারের উচিত হবে প্রথমে বিডিআর (বিজিবি) কে ডাকা…বিডিআর না পারলে সেনাবাহিনীকে ডাকেন। আমরা প্রত্যেকটি বাহিনীর আসল চরিত্র দেখতে চাই…বর্তমান চরিত্র দেখতে চাই।’

হাফিজ বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা প্রতিবেশী দেশের শাসন চাই না, আমরা অন্য কোনো শক্তিরও শাসন চাই না। আমরা জনগণের শাসন চাই।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ দাবি করে বিএনপির নেতা হাফিজ বলেন, ‘গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই।। অতি অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা (প্রধান উপদেষ্টা) রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। একটি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের দায়িত্বভার গ্রহণ করার সুযোগ করে দিন। রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।’

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্ররা তাঁকে নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁকে দেশবাসী নিয়োগ দিয়েছেন। এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমি যে এলাকার এমপি হয়েছি ছয়বার ভোলার লালমোহন-তজিমুদ্দিন, এখানে ১১ ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে ঢাকা শহরে নিহত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী। ছাত্রদের অবশ্যই এই সফল আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন ও ত্যাগের জন্য সাধুবাদ জানাই। তাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে দেশবাসী এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে। ছাত্রদের পিতা-মাতারাও আন্দোলনে ছিলেন, তাঁদের বোনেরা ছিলেন। অতীতে এ রকম আন্দোলন হয়নি। যাঁরা বইতে পড়েছেন বিপ্লব। ভাগ্যবান এ দেশের মানুষ এ রকম একটা বিপ্লব রাজপথে ৫ আগস্ট দেখেছেন।

ক্ষমতায় এলে ‘সিটিজেন আর্মি’ গড়ার কথা আবারও উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বিএনপিকে দায়িত্ব দেয়, আমরা পুরো জাতিকে মিলিটারি ট্রেনিং দিয়ে সৈনিকে পরিণত করব। কোনো প্রতিবেশী দেশ যাতে আমাদের দিকে রক্তচক্ষু না দেখাতে পারে, আমরা যাতে আগ্রাসনের শিকার না হই, সে জন্য আমরা সিটিজেন আর্মি গড়ে তুলব।’ তিনি যোগ করেন, ছাত্ররা বছরে দুই মাস বেসিক সামরিক ট্রেনিং নিয়ে তারপর আবার ছুটি শেষ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা শুরু করবে।

মৎস্যজীবী দলের প্রয়াত আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম মিঞা সভাপতিত্ব করেন।