এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাপে আ.লীগ

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চাপে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, নাকি প্রার্থী হওয়া স্বজনদের বিরুদ্ধে, এ নিয়ে দলে দ্বিধাবিভক্তি আছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দলের তৃণমূলে প্রশংসিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের একটা বড় অংশও এটা চেয়েছিলেন। এ পরিস্থিতিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আর কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে চাইবেন না।

আগামী ৮ মে প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের ৫০ জনের মতো স্বজন প্রার্থী হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে দল এখনো স্পষ্ট অবস্থানে যেতে পারছে না।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বসছে। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত তিন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সুযোগ পেলে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের শাস্তির আওতায় আনার বিষয়টি তাঁরা বৈঠকে তুলবেন।

অতীতে সাংগঠনিক নির্দেশনা অমান্য করার দায়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার নজির নেই। এ ছাড়া মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দল থেকে বহিষ্কার করলে সংসদ সদস্য পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না, এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া যায় কি না, সেই আলোচনাও আছে দলে। কাউকে কাউকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

১৮ এপ্রিল উপজেলা ভোট থেকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব ছাড়া আর তেমন কেউ সরে দাঁড়াননি। অবশ্য লুৎফুলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (১১) ধারা অনুসারে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ জাতীয় বা স্থানীয় পর্যায়ের যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থী হলে সরাসরি বহিষ্কৃত হবেন।

স্বজনের সংজ্ঞা ও শাস্তি নিয়ে অস্পষ্টতা

দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর একটি অংশ মনে করে, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সমর্থন-পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের স্বজনেরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে আছেন। সুতরাং, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্য পক্ষের মত, প্রার্থী হওয়া স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সমীচীন হবে। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দল দুর্বল হবে, বিশৃঙ্খলাও তৈরি হতে পারে।

এদিকে স্বজনদের সংজ্ঞা নিয়েও অস্পষ্টতা আছে। কেউ কেউ মনে করেন, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্ত্রী, সন্তান ও আপন ভাইকে ঘনিষ্ঠ স্বজন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। দায়িত্বশীল একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ স্থানে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বজনদের দাঁড় করিয়েছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে কি না, এটাই প্রশ্ন।

নানা অজুহাত, যুক্তি

শাস্তি এড়াতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা নিজেদের মতো করে যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। দলীয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য শাজাহান খান দলকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত দেরিতে নেওয়ায় ছেলে আসিবুর রহমান খানকে ভোট থেকে সরানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না।
নোয়াখালীর সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বলেছেন, গত সংসদ নির্বাচনে সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী নৌকার বিরোধিতা করেছেন। এ জন্য তিনি খায়রুল আনমের বিরুদ্ধে ছেলে আতাহার ইশরাক চৌধুরীকে প্রার্থী করেছেন।

নীলফামারীর ডিমলায় সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ এবং চাচাতো ভাই আনোয়ারুল হক সরকার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। আফতাব উদ্দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেছেন, ভাতিজা ও চাচাতো ভাই তাঁর কথা শোনেন না।