গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতিতেই ক্যাম্পাসে ‘মব কালচারের’ বিস্তৃতি ঘটছে: ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনটি বলেছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতিতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘মব কালচারের’ বিস্তৃতি ঘটছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আমরা অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কয়েক ঘণ্টা ধরে মারধর করে একজনকে হত্যা করার ঘটনাকে আমরা হল প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করছি।’
রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের পদধারী কতিপয় সন্ত্রাসী বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থী নামে হলগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে “মব” তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে সক্রিয় এই মবকে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।’
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রদল এ ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্টবিরোধী সংগ্রাম, ছাত্র-জনতার গণ–আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল এ দেশ থেকে সব অন্যায়, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূরীভূত করা। একজন ব্যক্তি অপরাধী হলেও তাঁকে কোনোভাবেই হত্যার সুযোগ নেই। কিন্তু জনতার বিজয়ের পর থেকে কিছু অতি উৎসাহীর কারণে গণমানুষের এই আকাঙ্ক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসের মূল সমস্যা নয়—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত কয়েক বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে তৈরি হওয়া ব্যবস্থাই এখানে খুনি মানসিকতা তৈরি করেছে। তাই গোটা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। কোনো কিছু উপড়ে ফেলা সমাধান নয়। ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। সেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের আলোচনাটি হঠাৎ সামনে আনা একটি ভুল পদক্ষেপ।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল মনে করে, গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতিতেই ক্যাম্পাসে মব কালচারের বিস্তৃতি ঘটছে। এর পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীদের হলে অবস্থান এবং নানান মোড়কে হল ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাও অন্যতম ভূমিকা পালন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।