২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিএনপির নামে কেউ অপকর্ম করলে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন: তারেক রহমান

তারেক রহমানফাইল ছবি

ধর্মীয় পরিচয় এবং বিশ্বাস যা-ই হোক না কেন, তার নিরাপত্তায় ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আজ এই মুহূর্ত থেকে হামলা কিংবা নৈরাজ্য বন্ধ করুন। এমনকি কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করতে চাইলে তাঁকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যথা নিয়মে অভিযোগ দায়ের করুন।’

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক জনাকীর্ণ সমাবেশে তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চ্যুয়ালি ভিডিও বক্তব্যে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান। সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর জনগণের ওপর স্বৈরশাসন চাপিয়ে দিয়েছিলেন, সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, গণহত্যাকারী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফল হয়েছে মাত্র। ছাত্র–জনতার এই রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।

বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতনের জন্য বীর ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ কারামুক্ত, আয়নাঘরমুক্ত আজ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। আজ উন্মুক্ত হয়েছে গণতন্ত্রের দ্বার। আজ মুক্ত স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশ। সাহসী ছাত্র-জনতাকে বীরোচিত অভিনন্দন। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে গণতন্ত্র হত্যাকারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। প্রমাণ হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কখনো পরাজয় মানে না।’

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, আর ২৪-এর মুক্তি—উভয় মুক্তিযুদ্ধে জনগণের বার্তা হচ্ছে শর্ত দিয়ে স্বাধীনতা হয় না। তিনি বলেন, ‘গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে প্রিয় বাংলাদেশের যত মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, প্রতিটি মানুষ অনুভূতি প্রকাশের প্রথম উচ্চারণ ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। হাজারো শহীদের রক্তে-জীবনের বিনিময়ে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আরেকটি বিজয় দেখেছে।’

এই বিজয়কে কালিমাযুক্ত করার ষড়যন্ত্র আবার শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান, শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ধর্ম-বর্ণের পরিচয়ে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকেন, সবার আগে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপির নেতা-কর্মীসহ গণতান্ত্রিক সব দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা যিনি যেখানে বসবাস করেন, সেখানে আপনার বন্ধু কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী, তিনি মুসলমান বৌদ্ধ-হিন্দু–খ্রিষ্টান ধর্মীয় পরিচয় যা–ই হোক না কেন, বিশ্বাস যা–ই হোক না কেন, তার নিরাপত্তায় আপনি ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষের একটি পরিচয়, সেটি হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি সভ্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ অপরিহার্য। পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। গণহত্যাকারী নিরাপদে ক্ষমতায় থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিটি রাজনৈতিক দল বিশ্বাস করে, পুলিশের ভেতরে একটি চক্র ছাড়া অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্য চাকরিবিধি মেনে এবং আইনকানুন মেনেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনা পালানোর পরে বর্তমানে সুকৌশলে একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। পুলিশকে অকার্যকর করা গেলে দেশকে অস্থিতশীল করা সহজ, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা সহজ।

তারেক রহমান বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আমার বিনীত আহ্বান, কেউ দয়া করে নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না, প্রতিহিংসা প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না। বিচারের ভার নিজ হাতে নেবেন না। অতীত সমালোচনা কিংবা নৈরাজ্যের বদলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। নৈরাজ্য কোনো সমাধান হতে পারে না বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে নিয়োগ-পদোন্নতিতে মেধার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকতে হবে। বৈদেশিক নির্ভরতা থেকে দেশকে বের করে আনতে হবে আমাদের।’

তারেক রহমান বিভেদ, হিংসা–প্রতিহিংসা ভুলে সবাই মিলে দেশ গঠনে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

লাখো মানুষের এই সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করেন। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বক্তব্য দেন। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।