জামায়াত যাতে কোনো সুযোগ না পায়, সেভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ আছে। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার। সেটার প্রক্রিয়া কী হবে, তা আইনগত দিক দেখেশুনে সরকার শিগগির পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। কারণ, তারা আইনগত দিকটি ভালোভাবে দেখে নিতে চায়, যাতে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এ অপশক্তি আর কোনো সুযোগ না পায়।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা এক যৌথ সভার শুরুতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আছেন। জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁদের কারও সংযোজন-বিয়োজন, সংশোধন থাকলে তাঁরা বলতে পারেন। সংযোজন-বিয়োজন বা সংশোধন দরকার। সেটা উল্লেখ করতে নেতারা যাতে কুণ্ঠিত না হন। নেতারা জানেন, ১৪ দলের সভায় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা গণমাধ্যমকে অবহিত করা হয়েছে।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা ও নাগরিক সমাজ দাবি করে আসছে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত গণ-আদালত এবং পরবর্তী সময়ে গণজাগরণ মঞ্চের দাবিও ছিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত বহাল রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন নজির আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনী রাজনীতি করতে পারে না। জামায়াত দলটি মূলত ধর্মের মুখোশ পরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। বিভিন্ন সময়ে দলটির প্রকাশ্য-গোপন নানা অপতৎপরতা, নাশকতা, ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দেশের জনগণও সেটা জানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার হওয়া ১৪–দলীয় জোটের বৈঠকে নেতারা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। জামায়াতের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সময় দেওয়া আদালতের রায় বিবেচনা করে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দল সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ঢাকা মহানগরসহ অন্যান্য মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কারফিউ মেনে চলার আহ্বান জানান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। তিনি বলেন, দলীয়ভাবে নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। গুজব ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।
সরকার অসহায় শিক্ষার্থীদের আটক ও নির্যাতন করছে—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করছে। তাঁদের জানামতে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক করা হচ্ছে না। নিরীহ ও সাধারণ শিক্ষার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিজেদের আচার-আচরণে দায়িত্বশীলতাকে গুরুত্ব দেয় বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, গণগ্রেপ্তারের নামে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে অপরাধী সাব্যস্ত না হন, গ্রেপ্তার না হন, সে ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে কোনো অবস্থায় হয়রানি করা যাবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুলের কাছে সবাই নিরপরাধ, সবাই অসহায়। তাহলে প্রশ্ন, এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাল কারা? কারা অগ্নিসংযোগ করল, রাষ্ট্রের সম্পদ ভস্মীভূত করল? বাংলাদেশে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ কারা করেছে? আজকে কথায় কথায় সরকার ও আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা হয়। তিনি পরিষ্কার বলতে চান, এ ঘটনাপ্রবাহে তাঁরা আক্রান্ত, আক্রমণকারী ছিলেন না। কিন্তু এখন অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আজকে অনেকেই বলে, আওয়ামী লীগের লোকজন কম ছিল, অনুপস্থিত ছিল। তিনি বলতে চান, দলীয় লোকজনকে অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হয়ে কোথাও অবস্থান নিতে বলা হয়নি। তাঁরাই তো আক্রান্ত হয়েছেন।
সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনার কথা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কারা এই নারকীয় বর্বরতার আশ্রয় নিয়েছে? তাদের সঙ্গে আপনি (মির্জা ফখরুল) জাতীয় ঐক্য করছেন। যারা কারাগারের অস্ত্র লুট করেছে, তারা কি আপনার বন্ধু ও দোসর?’
মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কোথা থেকে নির্দেশ এসেছে, উসকানি এসেছে, কোথায় কোথায় বৈঠক করেছেন, অর্থ জুগিয়েছেন, কোন কৌশলে অর্থ পাঠিয়েছেন, সেটা আমরা জানি। সকল ষড়যন্ত্র এখন জাতির কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। মিথ্যার বেসাতি করে, আবোলতাবোল বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই।’
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আগস্ট মাসব্যাপী দলীয় কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন ওবায়দুল কদের। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই এ শোকের মাস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করে থাকি।’