সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে স্বতন্ত্রদের অবস্থান স্পষ্ট নয়
আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনের বিপরীতে পাবে ৩৭টি সংরক্ষিত আসন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ৬২ জন। তাঁরা নির্দলীয় জোট করলে পাবেন ১০টি আসন।
জাতীয় পার্টি ১১টি আসনের বিপরীতে পাবে ২টি আসন।
অন্য তিনটি দল জোট হলে একটি আসন পেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য একজোট হলে তাঁরা পাবেন ১০টি সংরক্ষিত নারী আসন। আর তা না হলে এই আসনগুলোতে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে স্বতন্ত্রদের সামনে একাধিক পথ খোলা আছে। তবে তাঁরা কী করবেন তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি।
জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনে জয়ী দল বা জোটগুলোর মধ্যে ৫০টি সংরক্ষিত আসন আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়। সাধারণভাবে প্রতি ছয়টি আসনের বিপরীতে কোনো দল বা জোট একটি সংরক্ষিত আসন পেয়ে থাকে।
সংরক্ষিত আসন পেতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা একাধিক বিকল্প পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা চাইলে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। অথবা নিজেরাও এক বা একাধিক স্বতন্ত্র নির্দলীয় জোট গঠন করতে পারবেন। এ ধরনের জোট গঠনের বিষয়টি সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ২১ কার্যদিবসের (৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) লিখিতভাবে জানাতে হবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা একাধিক বিকল্প পাচ্ছেন। তাঁরা চাইলে দল বা জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। নির্দলীয় জোটও করতে পারবেন।
এ সময়ের মধ্যে কোনো স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগ না দেন, তাহলে তাঁদের আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত (নির্দলীয় সদস্য তালিকা) করবে ইসি। এই তালিকাভুক্ত সদস্যদের সমন্বয়ে একটি ‘নির্দলীয় জোট’ গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তখন ওই জোটে থাকা স্বতন্ত্রদের আসনের বিপরীতে সংরক্ষিত আসন বণ্টন করা হবে।
অবশ্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কী করবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এখন পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলাপ–আলোচনার বিষয়ে জানা যায়নি। তবে সবাই মিলে নির্দলীয় জোট না করলেও নারী আসনের জন্য ছয়জন করে আলাদা আলাদা জোট করা হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ।
ফরিদপুর–৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে এখনো স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে আলোচনা হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কেউ যোগাযোগ করেননি।
জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে ইসি।
এবার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদে তাঁদের ভূমিকা কী হবে, সংরক্ষিত আসন কীভাবে নেওয়া হবে—এসব বিষয়েও তাঁদের অনেকে তাকিয়ে আছেন দলীয় সভাপতি সংসদ নেতা শেখ হাসিনার দিকে।
কিশোরগঞ্জ–২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা মিলে ১০টি বা তার বেশি সংরক্ষিত আসন পাবেন। কেউ কেউ গ্রুপ করার কথা বললেও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করেননি। তিনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হলেও আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী ভাবছেন, তা তিনি এখনো জানেন না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন।
সংরক্ষিত নারী আসনের নির্দিষ্ট কোনো এলাকা নেই। আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন করতে হয়। সে হিসাবে আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে। ৩০ জানুয়ারি থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে।
কোনো দল বা জোট যে কয়টি সংরক্ষিত আসন পাবে, তারা চাইলে সেখানে একটি আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দিতে পারবে। তখন ভোটের প্রয়োজন হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু ওই দল বা জোটের যারা সংসদ সদস্য আছেন তাঁরাই ভোট দিতে পারবেন। অবশ্য এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী আসনে ভোট হতে দেখা যায়নি। কারণ, দল বা জোটগুলো একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে এসেছে।
কারা কতটি আসন পাবে
সংসদ নির্বাচনে জয় পাওয়া দলগুলো এককভাবে নারী আসন চাইতে পারে। আবার চাইলে অন্য দল বা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জোটও করতে পারে। আইনে আসনের নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা আছে।
আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে আসন পেয়েছে ২২৩টি। সেই হিসাবে দলগতভাবে দলটি সংরক্ষিত আসন পাবে অন্তত ৩৭টি। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ৬২ জন। তাঁরা সবাই মিলে নির্দলীয় জোট করলে পাবেন অন্তত ১০টি আসন। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। তারা সংরক্ষিত আসন পাবে ২টি। অন্য তিনটি দল একটি করে আসন পেয়েছে, দল তিনটি একজোট হলে একটি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা নির্ভর করবে নারী আসন পেতে কে কার সঙ্গে জোটভুক্ত হচ্ছে তার ওপর।
সংসদ নির্বাচনে জয় পাওয়া দলগুলো এককভাবে নারী আসন চাইতে পারে। আবার চাইলে অন্য দল বা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জোটও করতে পারে। আইনে আসনের নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা আছে।
তফসিল কবে
গতকাল মঙ্গলবার ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেছেন, সংসদ সচিবালয় থেকে সংসদ সদস্যদের তালিকা ইসি পেয়েছে। পরবর্তী সময়ে ইসির অনুমোদনক্রমে তফসিল ঘোষণা করা হবে। আগামী সপ্তাহে যদি ইসি অনুমোদন দেয়, সে ক্ষেত্রে ভোট হবে ফেব্রুয়ারিতে। কোনো দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট করেছেন, এমন কোনো তথ্য এখনো কমিশনকে কেউ জানায়নি।
অবশ্য ইসি চাইলেও আইন অনুযায়ী আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির আগে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সুযোগ আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে ইসি। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী কার্যদিবসে ইসি সচিবালয়ের কোনো প্রকাশ্য স্থানে তালিকাগুলো প্রকাশ করবে এবং একটি কপি সংসদ সচিবালয়ে পাঠাবে। সে হিসাবে ভোটারদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এর আগে তফসিল ঘোষণা করা হলে বিতর্ক তৈরি হতে পারে।