হানাহানির দায় অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারে না: এবি পার্টি

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির নেতারাছবি: সংগৃহীত

এক কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আরেক কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘাত, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও হানাহানির দায় অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারে না বলে মনে করছে এবি পার্টি। দলটি বলেছে, সার্বিক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যথেষ্ট উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান। দেশে চলমান সংঘাত, অস্থিরতা ও আন্দোলনের নামে হঠকারিতা এবং বিপ্লবের মিত্রদের বিভক্তির প্রেক্ষাপট নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এবি পার্টি।

সংবাদ সম্মেলনে মজিবুর রহমান বলেন, মাত্র তিন মাস আগেও যেসব ছাত্র একতাবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে, ঢাল হয়ে একে অপরের জীবন রক্ষা করেছে, তারা কেন এখন হিংসা হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পরস্পরের রক্ত ঝরাচ্ছে? কেন রাজপথে নেমে প্রতিদিন সহিংস আন্দোলন করতে হচ্ছে অধিকারবঞ্চিতদের? আন্দোলনের মিত্রদের কণ্ঠে কেন এত তাড়াতাড়ি অনৈক্য ও বিভক্তির সুর? গত কয়েক মাসের সংঘাত, সংঘর্ষ, অস্থিরতা ও গণ–অভ্যুত্থানের মিত্রদের বিভক্তির দায় অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার ও দেশবাসীর উদ্বেগ দূর করার আহ্বান জানান তিনি।

এবি পার্টির সদস্যসচিব বলেন, ‘ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ও কালবেলা পত্রিকাকে নিয়ে একটা আন্দোলনের কথা আমরা শুনেছি। এই আন্দোলনগুলো কিন্তু যারা আমরা আন্দোলনের শক্তি ছিলাম, তাদের মধ্যেই একটা অংশ করছে। কারও না কারও কোনো না কোনো সংবাদ সম্পর্কে মানুষের দ্বিমত, ভিন্নমত থাকতে পারে। আমরা যে কথাটা বলছি, সরকার কেন এ সমস্ত বিষয়ে আগে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আলাপ-আলোচনা করে এসব বিষয়ে সমাধানের কথা বলছে না। একটা পত্রিকা অফিসের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করলে সেখানে পুলিশ দিয়ে হামলা, বাধা—এই বিষয়গুলো সামগ্রিকভাবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য খুবই অসুন্দর এবং এটা কাম্য নয়।’

হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে একটি সফল গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এ সরকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব পক্ষের ঐক্য রক্ষার বিষয়ে শুরু থেকেই উদাসীন বলে মনে করেন মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উদ্বেগ তারা আমলে নিচ্ছে না। আহত সংগ্রামীরাসহ প্রতিদিন রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে অধিকারের দাবিতে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষকে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে একটা ভালো সমন্বয় টিম তৈরি করে এসব আন্দোলন ও দাবিদাওয়া টেবিলে বসেই সমাধান করা যেত।

তুচ্ছ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি এখানে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। অহিংস গণ–অভ্যুত্থানের জনসমাগমের বিষয়ে ভুল–বোঝাবুঝিও সরকার আগাম ব্যবস্থা নিলে সমাধান করা যেত।

আরও পড়ুন

সবাই মিলে গণ–অভ্যুত্থান সনদ তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা যাতে একে অপরের বিরুদ্ধে না লাগি। সনদে লেখা থাকবে আমরা কেউ কারও বিরুদ্ধে মারামারিতে লিপ্ত হব না। সেই সনদে লেখা থাকবে—আমরা যাচ্ছেতাই কারও বিরুদ্ধে মামলা করব না। আমরা দেখেছি, নিজের দলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কোথাও কোথাও।’

সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির আহ্বায়ক মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার বলেন, ‘হাজারো ছাত্র গিয়ে একটা কলেজে যদি ভাঙচুর করে! শুধু ভাঙচুর করেনি, লুটপাটও করেছে। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। সেখানে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল। কাজেই আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চাই, আপনি যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষ তো অত্যন্ত অসহায়!’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম ফারুক, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব এ বি এম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আবদুর রহমান প্রমুখ।

আরও পড়ুন